হোম > শিক্ষা

জবির অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

নামমাত্র লিখিত পরীক্ষা

লিমন ইসলাম, জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে সাম্প্রতিক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নামমাত্র লিখিত পরীক্ষা নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভাইভার জন্য টিকিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ করেছেন অন্য প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নামমাত্র লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও খাতাই মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনকি পূর্বনির্ধারিত প্রার্থী টিকিয়ে রাখা এবং মেধাবীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা।

তাদের দাবি, পরীক্ষা ও ভাইভা দুটোই পছন্দের প্রার্থীই নিয়োগ দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সকালে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পর দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত ভাইভা থেকেই খুব দ্রুত তিনজনকে নিয়োগ ঘোষণা করা হয়, যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। তাদের অভিযোগ, লিখিত পরীক্ষা ভালো দিলেও খাতাই মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনকি নিজ বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীকেও বাদ দিয়ে ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ছিল—প্রতিযোগী ৫০ জনের বেশি হলে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে বর্তমান প্রশাসন আবেদনকারী সংখ্যা যাই থাকুক, লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। প্রশাসন বলছে, এতে যোগ্য যাচাই বিস্তৃত হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের দাবি, যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য এই নিয়ম মকরা হলেও এই নিয়মের অপব্যবহার করেই করা হচ্ছে অনিয়ম। তাদের অভিযোগ, নামমাত্র লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও খাতাই মূল্যায়ন করা হয়নি। অনেক প্রার্থী ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরেও তাদের ভাইভার জন্য না ডেকে পছন্দের প্রার্থীদের ভাইভার জন্য ডেকে তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এমনকি কেন ১০ জনকে ভাইভায় ডাকা হলো, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

গত শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৮ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে থেকে সাজেদা আক্তার, মো. আতিক হাসান, ইকরামুল হাসান, মাসুম বিল্লাহ পাটোয়ারী, মুহাম্মদ আছরারুল হাছানাত, মো. তুহিন আহমেদ, সানিয়া আক্তার তুষা, হেলাল উদ্দিন, উম্মে হাবীবা ও মো. শাহিনুর রহমান— এ ১০ জনকে ভাইভায় ডাকা হয়। পরীক্ষার্থীদের দাবি, চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রভাবের ভিত্তিতে, মেধার ভিত্তিতে নয়। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও তার খাতাই মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিকেল আড়াইটার ভাইভা শেষ হওয়ার পরই খুব দ্রুত তিনজনকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন আগেই ঠিক করে রাখা ছিল।

এদিকে, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সাতজন হিন্দু প্রার্থীর কেউ উত্তীর্ণ হননি। বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতি বিভাগেরই শিক্ষার্থী মিতু রানী রায়, যিনি অনার্সে সিজিপিএ ৩.৯০ এবং মাস্টার্সে ৩.৯২ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তার দুটি গবেষণা প্রবন্ধও রয়েছে। এত মেধাবী শিক্ষার্থী নিজ বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে সুযোগ না পাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন বহু পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েকজন প্রার্থীর একাডেমিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে কম বলেও অভিযোগ তুলা হয়েছে। ঢাবির উম্মে হাবিবা অনার্সে ১১তম, আতিক হাসান ৮ম, ইকরামুল হাসান ৫ম হয়েও ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম হওয়া একাধিক শিক্ষার্থীই ভাইভা ডাক পাননি। পরীক্ষার্থীদের দাবি, লিখিত পরীক্ষার খাতা প্রকাশ করলে এসব অসামঞ্জস্য স্পষ্ট হয়ে যেত।

লিখিত পরীক্ষার সময় দায়িত্বে থাকা বিভাগের শিক্ষক ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. আজম খানের আচরণ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। যিনি আবার জবি শিক্ষক সমিতির বর্তমান সহ-সভাপতি। কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, তিনি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর প্রতি নমনীয় ছিলেন, বাকিদের প্রতি কঠোর। প্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষার শুরু থেকেই তার আচরণ ছিল পক্ষপাতমূলক।

তবে অধ্যাপক ড. আজম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কয়েকজন শিক্ষক মিলে প্রশ্ন করেছি, খাতা মূল্যায়ন করেছি। এখানে পক্ষপাতের কোনো সুযোগ নেই।

পছন্দের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, ট্রেজারার অধ্যাপক সাবিনা শরমীন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সানজিদা ফারহানা, চেয়ারম্যান অধ্যাপক শরীফ মোশাররফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম যিনি জবি উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদা ইসলাম বলেন, আমি অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম, লিখিত পরীক্ষাও দারুণ হয়েছে। অথচ আমাকে ভাইভায় ডাকা হয়নি। আগে থেকেই যদি তালিকা ঠিক থাকে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার মানে কী?

এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে এবং শিক্ষক সমিতির কেউ তাতে জড়িত থাকে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নিয়োগে অস্বচ্ছতা বরদাস্ত করব না।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ অনেক কথা বলবে। বিভাগগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া কয়েকদিন ধরে চলছে। আমরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

রাবিতে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড প্রদানে অনিয়ম

ফেলানীর নামে হল পেলেন জাবি শিক্ষার্থীরা

পবিপ্রবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিজামের উদ্দিনের লাগামহীন দুর্নীতি

সাফল্য অর্জনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে

বাংলাদেশি-পাকিস্তানি ভর্তি বন্ধ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে

সরকারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও প্রাথমিকে আন্দোলন

চাকরি প্রত্যাশীদের অর্থ লেনদেন বিষয়ে সতর্ক করল ইউজিসি

সীমান্তে হত্যা বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান চাকসুর

বিজয়ের মাস উদযাপনে ঢাবি প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ ছাত্রশক্তির

স্কুলে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বয়স নিয়ে মাউশির জরুরি নির্দেশনা