প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরের মাথায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ গঠনের বিধিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সংযুক্ত করতে অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সে হিসাবে নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখসহ রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ব্রাকসু নির্বাচনের বাধা কাটায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তারা একাধিকবার রোডম্যাপের দাবিতে আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন, অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন। দেরি হওয়ায় গত আগস্টে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষর্থীরা। সে সময় ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে অক্টোবরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নীতিমালা অনুমোদের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলে। এবার এ বিধিমালার দ্রুত বাস্তবায়ন চাইছেন শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন পর এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ, নেতৃত্ব বিকাশ এবং তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অবশেষে তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষার্থীরা নজিরবিহীন আন্দোলন করেছেন। দিনের পর দিন অনশন করেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এটির অনুমোদন মিলেছে। এখন প্রশাসনকে নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখসহ রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সুমন সরকার বলেন, শুধু অনুমোদন হলেই হবে না, প্রশাসনকে নভেম্বরের মধ্যে ভোট করতে হবে। এজন্য দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশিত ছাত্র সংসদ নীতিমালার অনুমোদন হয়েছে—এটি বেরোবি শিক্ষার্থীদের জন্য খুশির সংবাদ। আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু বিতর্কিত শিক্ষকদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাখলে শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেবে না। নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবিলম্বে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা জরুরি। তাহলে আমরা কার্যকর নির্বাচনের পথে এগোতে পারব।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশনকারী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জয় বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অবশেষে ছাত্র সংসদ আইন পাস হয়েছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তে একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ ছাত্র সংসদই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে। ছাত্র সংসদ শুধু রাজনীতি নয়; এটি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ, সমস্যা সমাধান ও নেতৃত্ব বিকাশের একটি প্রাতিষ্ঠানিক মঞ্চ। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে পাস করা আইন অনুযায়ী বেরোবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাস্তবায়ন করা হোক।
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার জন্য ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ছাত্র সংসদে তাদের নেতা নির্বাচন করবে, তাই নির্বাচিতরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, বেরোবি ছাত্র সংসদের নীতিমালায় রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিয়েছেন। আমি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলাম ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই আমাদের নীতিমালা পাস হবে। সেটি নির্ধারিত সময়ের আগেই হয়েছে। আমরা এখন সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। দ্রুত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।