ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয়ের মাস উদযাপনে প্রশাসনের উদাসীনতা ও পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলেছে জাতীয় ছাত্রশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বুধবার রাত দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির শাখা সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর চৌধুরী বলেন, বিজয়ের মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক নানা আয়োজন, আলোকসজ্জা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান থাকে। কিন্তু চলতি বছর ক্যাম্পাসে নেই সেই উৎসবমুখর পরিবেশ।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এবং ডাকসুর প্রতিনিধিদের অনাগ্রহে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২১ ও ২২ নভেম্বরের ভূমিকম্প পরিস্থিতির পর প্রশাসন তড়িঘড়ি করে হল খালি করা ও ক্লাস- পরীক্ষা বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। মাত্র একদিনের নোটিসে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল, যা অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে। এরপর ছুটি বাড়িয়ে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলেও হলগুলোর অবস্থা, কারিগরি নিরীক্ষার অগ্রগতি এবং সংস্কারকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোন স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি।
ছাত্রশক্তি নেতারা বলেন, সংস্কারকাজের অজুহাতে হল বন্ধ থাকলেও এসব কাজ হল বন্ধ না রেখেও করা সম্ভব ছিল। অথচ প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তে অস্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার ছাপ পাওয়া যায়।
তারা দাবি করেন, ডাকসুর কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে সমর্থন করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি ৫০তম বিসিএস-এর সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০–২১ সেশনের বহু শিক্ষার্থীর এক-দুইটি পরীক্ষা বাকি ছিল, যা ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এ পরীক্ষা স্থগিত থাকায় বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে অভিযোগ করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়নি উদ্ধৃত করে ছাত্রশক্তির নেতারা বলেন, পরিকল্পনাহীনভাবে দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়া এবং ডাকসুর প্রতিনিধিদের নির্বাচনি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেওয়াই এ সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
ডিসেম্বরে টিএসসি ও পায়রা চত্বর এলাকায় সংস্কারকাজের জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন। তাদের মতে, ডিসেম্বরের আগে বা পরে এ কাজ করা যেত।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা বলেন, ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ–বিষয়ক এক প্রতিনিধির বক্তব্যে শহীদ ও নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা ‘সহস্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪ লাখের অধিক নারী নির্যাতিত হয়েছেন- এই প্রেক্ষাপটে ‘সহস্র’ শব্দ ব্যবহারে ইতিহাস বিকৃতির শামিল বলেও তারা মন্তব্য করেন।
সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর চৌধুরী বলেন, বিজয়ের মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিস্তব্ধতা উদ্বেগজনক। প্রশাসন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হীনমন্যতা মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির সর্বোচ্চ অর্জন- এটি কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতে যেতে দেওয়া যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনাহীন ছুটি সেশনজট বাড়াবে। পরীক্ষার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।