আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গুলশান শাখায় চলছে কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদের ‘সিটি অব মেমোরিস’ শীর্ষক একক মিনিয়েচার চিত্র প্রদর্শনী।
গত মঙ্গলবার, রাজধানীর গুলশান শাখায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ-মার্ক সেরে-শারলে এবং বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে চিলির সম্মানিত কনসাল আসিফ এ. চৌধুরী।
প্রদর্শনীতে শিল্পীর একশ চল্লিশটি মিনিয়েচার চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, যা তাঁর সাম্প্রতিক শিল্পভাবনা ও অভিব্যক্তির স্বতন্ত্র রূপ দর্শকদের সামনে উন্মোচিত করবে।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে, পুরান ঢাকা— যার ইতিহাস মুঘল আমল থেকে প্রোথিত— একসময় বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং নগরজীবনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। এখনও এই এলাকার সংকীর্ণ গলি, যৌথ প্রাঙ্গণ ও পারস্পরিক সহাবস্থানের ঐতিহ্য নগরবাসীর এক আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ জীবনপ্রবাহের সাক্ষ্য বহন করে। বহু প্রজন্মের মানুষের স্মৃতি, গল্প ও অভিজ্ঞতা এখানে পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তবুও সময়ের প্রবাহে এই ঐতিহাসিক নগর নিজের রূপ হারাতে বসেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বেদনাদায়ক স্মৃতি আজও নাগরিক চেতনায় রয়ে গেছে। আধুনিকতার স্রোতে তথাকথিত “উন্নয়ন”-এর নামে পুরান ঢাকার পুরনো বসতঘর, শৈল্পিক অলংকরণযুক্ত স্থাপত্য ও নীরব পাড়াগুলি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে, তাদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে কাচ ও কংক্রিটের বহুতল স্থাপনা। বহু জীবন্ত স্মৃতি এভাবে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে।
মুঘল মিনিয়েচার চিত্রকলার সূক্ষ্ম বর্ণনা শৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ তাঁর সৃষ্টিতে এই হারিয়ে যেতে থাকা জগৎকে পুনরায় নির্মাণ করেন। রঙের সূক্ষ্ম স্তর, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্য–উপাদানের ইঙ্গিত এবং ক্ষণস্থায়ী মানবপ্রকৃতির চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেন ক্ষয়ের পাশাপাশি টিকে থাকা পরিচয় বোধ, স্থিতিস্থাপকতা এবং পুরান ঢাকার অনন্য সম্প্রদায়–সংলগ্নতা। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— স্মৃতি যেমন ভঙ্গুর, তেমনি গভীরভাবে মানবিক; আমাদের নগর–ইতিহাসের গল্প ধারণের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের অস্তিত্বকে ধরে রাখি।
১৯৮৭ সালে প্রথম প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদের শিল্পজীবনের সূচনা। তিনি দেশ-বিদেশে বহু দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৩০টি একক প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন— বাংলাদেশ ছাড়াও ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইরান এবং যুগোস্লাভিয়ায়।
প্রদর্শনীটি চলবে ২৯ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শনী প্রতিদিন (সোমবার–শনিবার) সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে— আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গুলশান শাখায় (বাসা নম্বর ৮, সড়ক ৭, গুলশান ১)।