জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি নব্বই দশক থেকেই শিকড়ের সন্ধানে স্টুডিওর চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়োজন করে আসছে এর বিভিন্ন পর্ব। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রাচীন জনপদ চুয়াডাঙ্গায়। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে তৈরি শতাধিক বছরের প্রাচীন হাজারদুয়ারি নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্কুল ‘নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ প্রাঙ্গণে।
ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে পুরো চুয়াডাঙ্গা জুড়েই ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বসেছিল জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। দুপুরের পর থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হতে শুরু করেন দর্শকরা। প্রতিবারের মত এবারও দর্শকদের জন্য ছিলো বিশেষ আমন্ত্রণপত্র। এসব আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। দামুড়হুদা উপজেলায় ধারণ হলেও দর্শকরা আসেন চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ থেকেও। শীত উপেক্ষা করেও দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির ধারণ।
এবারের অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। একটি গান গেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার সন্তান লোকসংগীত শিল্পী বিউটি এবং ইত্যাদির আবিষ্কার জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী পান্থ কানাই। গানটির কথা লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান আর সংগৃহীত সুরে গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।
আর অনুষ্ঠানের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার কৃষ্টিকথা ও ইতিহাসগাঁথা নিয়ে রয়েছে শাহ আলম সনির কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরা। নাচটির কোরিয়োগ্রাফি করেছে এস কে জাহিদ, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান চুয়াডাঙ্গাকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়।
শিকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি এসব অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি অনবদ্য প্রতিবেদন। রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান-স্থাপনার উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।
‘বন্য প্রাণী ও পাখির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের পাখি প্রেমিক তরুণ বখতিয়ার হামিদ ও তার কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। রয়েছে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত কাশিপুর জমিদার বাড়ি ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ঘেরা আটচালা ঘরের উপর একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবেদন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে হাজার হাজার খেজুর গাছ ও খেজুর বাগান। এই খেজুর গাছের গাছিদের উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। এবারে বিদেশি প্রতিবেদনে দেখানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড বুলেভার্ড সড়কে অবস্থিত ডলবি থিয়েটারের সামনের ওয়াক অফ ফেইম।
ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র পর্বে উঠে এসেছে চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যতিক্রমী ছড়াকারের গল্প। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু সামাজিক অসংগতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গনির্ভর তীক্ষ্ণ ও তীর্যক নাট্যাংশ।
এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, সুভাশিষ ভৌমিক, জিল্লুর রহমান, আবদুল্লাহ রানা, আব্দুল আজিজ, আমিন আজাদ, কাজী আসাদ, মুকিত জাকারিয়া, আনোয়ার শাহী, শাহেদ আলী, জামিল হোসেন, আনন্দ খালেদ, আশরাফুল আলম সোহাগ, তারিক স্বপন, মুকুল সিরাজ, সুর্বণা মজুমদার, আবু হেনা রনি, বিলু বড়ুয়া, রতন খান, মঞ্জুর আলম, আসমা পাঠান রুম্পা, জাহিদ চৌধুরী, নূরে আলম নয়ন, সাজ্জাদ সাজু, সুজাত শিমুল, নজরুল ইসলাম, শাওন মজুমদার, সাবরিনা নিসা, হানিফ পালোয়ান, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি আগামী ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।