হোম > ফিচার > নারী

মেট্রোরেলে চলার সহবত

বিউটি হাসু

‘মা একটু বসার সুযোগ দেবেন? আমি অসুস্থ!’ মেট্রোরেলের মহিলা কামরায় বসা যাত্রীদের উদ্দেশে ষাটোর্ধ্ব এক যাত্রীর আকুতি। বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। বসা যাত্রীরা সবাই যে যার মতো মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশের কোনো কিছু চোখ তুলে তাকিয়ে দেখার বা কারো কথায় কর্ণপাত করার মতো এতটুকু অবকাশ তাদের নেই—এতটাই নিমজ্জিত বা মোবাইলে আসক্ত তারা।

বাধ্য হয়েই বলতে হলো—‘একজন বয়স্ক মানুষ, তার ওপর বাচ্চা কোলে; তাকে তো এমনিতেই একজনের আসন ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি বলার পরও কেউ বসতে দিচ্ছেন না। কী অদ্ভুত! মেট্রোরেলে আমরা যারা নিয়মিত যাতায়াত করি তারা তো অভ্যস্ত; তাদের জন্য কি দাঁড়িয়ে যাওয়া তেমন কষ্টের কিছু!’ অবশেষে একজন আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। মেট্রোরেলে চলাচলের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্মজীবী নারী তাসলিমা এসব কথা বলেন।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘সবাই যে এ রকম তা নয়, অনেকেই আছেন মানবিক। তারা বয়স্ক বা গর্ভবতী কাউকে দেখলে বলার আগেই উঠে দাঁড়ান।’

কথা হয় মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী বাসের এক যাত্রী মালিহার সঙ্গে। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। প্রতিদিন চলাচলের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, কর্মজীবী থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ট্রেনের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কিংবা মোবাইলে কথা বলছেন। অথচ ট্রেনে সবসময় দরজা থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘একবার দেখা গেল, কয়েকটি মেয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে ব্যস্ত। যে স্টেশনে নামতে হবে, সেখানে চলে এসেছেন; কিন্তু খেয়ালই করেননি। যখন খেয়াল হলো, দৌড়ে উঠে দরজার কাছে গেলেন। ততক্ষণে ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা দুজন হাত দিয়ে টেনে দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকেন। অথচ এমন কাজ সবার জন্যই বিপজ্জনক। অথচ তারা শিক্ষিত, তবে সচেতন নন।’

আরেক যাত্রী তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এভাবে—‘ট্রেনের দরজা থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে। দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তবুও যাত্রী দৌড়ে গিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। এমনকি ট্রেনের দরজার হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টাও করছেন। এসব খুবই কাণ্ডজ্ঞানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এসব কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।’

পেশায় শিক্ষক সুইটি আক্তার বলেন, ‘ওঠার সময় প্রায়ই দেখা যায়, কিছু যাত্রী লাইনে দাঁড়াবে না। লাইনের পাশে সামনে গিয়ে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ওঠার সময় সবাইকে ঠেলে আগে ওঠার চেষ্টা করে। এতে যারা সুশৃঙ্খলভাবে ওঠানামা করতে চান, তাদের চলাচলে চরম ব্যাঘাত ঘটে। ছোট-বড় সবারই লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত করার অভ্যাস আয়ত্ত করা বাঞ্ছনীয়। এতে কারো কোনো সমস্যা হয় না, কোনো বিঘ্নও ঘটে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে শিক্ষা মানুষকে সম্মান করতে শেখায় না, বড়দের শ্রদ্ধা করতে শেখায় না, মানবিকবোধ জাগ্রত করে না, সেই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত মানুষ দিয়ে জাতি কী করবে? এই ছোট ছোট রীতিনীতি মানার অভ্যাস গড়ে তোলা কোনো কঠিন কাজ নয়। সহজেই এসব আয়ত্ত করা সম্ভব।’

অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলে তিনটি আসন প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য বরাদ্দ। তাছাড়া অন্য আসনগুলোয় বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধী নারীদের বসার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তারপরও অনেক সময় কিছু বিড়ম্বনা ঘটে। সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পথ চলার চেষ্টা করলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।’

স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে কিছু নিয়ম

হলুদ দাগের পেছনে দাঁড়ানো : নিরাপত্তার জন্য প্ল্যাটফর্মে হলুদ দাগের বাইরে দাঁড়ানো উচিত।

আগে নামুন, পরে উঠুন : ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামার সুযোগ দিন, তারপর উঠুন।

হাঁটা ও ওঠানামা : দ্রুত হাঁটা বা ধাক্কাধাক্কি না করে সাবধানে ওঠানামা করুন।

মেট্রোর ছাদে ওঠা সম্পূর্ণ নিষেধ: মেট্রোরেলের ছাদে ওঠা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কেউ মেট্রোরেলের ছাদে উঠলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুও হতে পারে এবং মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পরিচ্ছন্নতা : স্টেশনে বা ট্রেনে কোনোকিছু খাওয়া ও ফেলা যাবে না এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

দরজায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা : দরজার সামনে বা দরজায় দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

যোগাযোগ : ট্রেনের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন।

এসব নিয়ম-কানুনের কথা স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় এবং ট্রেনের গায়ে লেখা আছে। এছাড়া ট্রেনের ভেতর অনবরত নির্দেশনা দিয়ে সচেতন করে থাকেন। তারপরও যাত্রীরা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কাজ করে ফেলেন। এসব কাজ আবার শিক্ষিত ব্যক্তিরাই করেন।

কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বের হতে হন। অন্যান্য মানুষও বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হন, তবে নিয়মিত নয়। মেট্রোরেল চলাচলের গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না। তারপরও এই স্বল্প সময়ের যাত্রায় ঘটে ছোট ছোট অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা। এসব ঝামেলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা চাইলেই এড়ানো সম্ভব। আমরা যদি রাস্তায় চলাচলের সময় রীতিনীতি মেনে চলি, শুধু নিজের আরাম-আয়েশের কথা না ভেবে অন্যের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রাখি, তাহলে চলার পথ আরো মসৃণ হবে। কথায় বলে, ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। চলার পথে আপনি যদি মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেন, মানবিক আচরণ করেন, একটু সহনশীল হন, তাহলে আপনার নিজের পথচলা যেমন আনন্দের হবে, তেমনি আপনার আশপাশের মানুষও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

আবারো পেছালো জকসু নির্বাচন

ডেঙ্গুতে সারা দেশে আরো ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৫

দুই লাখ ছাড়ালো রাবিতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন

আমার দেশের বেরোবি প্রতিনিধিকে ছাত্রদল নেতার মামলার হুমকি

ভিসির দপ্তরে ‘মুলা’ পাঠিয়ে নীরব প্রতিবাদ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের

ছাত্রদলের এক কমিটিতেই ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ

সাইটেশন জালিয়াতি করে ‘সেরা গবেষক’ শেকৃবির প্রোভিসি অধ্যাপক বেলাল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক বরখাস্ত, পাঁচ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

টেকনোলজিস্ট-ফার্মাসিস্টদের অব্যাহত কর্মবিরতি

নির্ধারিত সময়ে ‎ব্রাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি