যোগাযোগ প্রযুক্তির রূপান্তর
১৮৩৭ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক স্যামুয়েল মর্স তৈরি করলেন এক বিস্ময়কর যন্ত্র ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ। বিন্দু আর দাগের সংমিশ্রণে তৈরি মর্স কোড হয়ে উঠল প্রথম বৈদ্যুতিক ভাষা। ১৮৪৪ সালে যখন ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোরে পাঠানো হলো ইতিহাসের প্রথম বার্তা— ‘What hath God wrought!’ তখনই শুরু হলো নতুন যুগের সূচনা। টেলিগ্রাফ শুধু প্রযুক্তি নয়, এক সামাজিক বিপ্লবও বয়ে আনে। খবর ছড়াতে শুরু করে মিনিটে, ব্যবসা হয় দ্রুততর, আর যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ড পৌঁছে যায় মুহূর্তেই। দূরত্ব ও সময় দুটিই প্রথমবারের মতো পরাস্ত হলো মানুষের হাতে। ভারতেও ব্রিটিশরা টেলিগ্রাফকে ব্যবহার করেছিল তাদের শাসনব্যবস্থায়; ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ দমনেও টেলিগ্রাফের দ্রুত বার্তা পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অর্থাৎ, প্রযুক্তি তখন থেকেই ক্ষমতার হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
টেলিফোন
১৮৭৬ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল আবিষ্কার করলেন টেলিফোন। একটি তারের মধ্য দিয়ে মানুষের কণ্ঠস্বর ছুটে গেল অন্য প্রান্তে, যে বিস্ময় তখনো কেউ কল্পনা করতে পারেনি। টেলিফোনের আবিষ্কারে যোগাযোগে আসে ব্যক্তিগত ছোঁয়া। চিঠির নিস্তব্ধতা ভেঙে সেখানে যুক্ত হলো শব্দ, আবেগ ও উপস্থিতি। ২০ শতকের শুরুতে যখন শহর থেকে শহর টেলিফোন লাইন ছড়িয়ে পড়ছে, তখন মানুষ বুঝল সংযোগ মানেই ক্ষমতা। একই সঙ্গে জন্ম নিল সামাজিক দূরত্বের নতুন মানচিত্র। যেখানে আগে কথা বলতে হতো সরাসরি, সেখানে এখন সম্ভব হলো দূরত্বে থেকেও ঘনিষ্ঠতা। বাণিজ্য, রাজনীতি ও কূটনীতি—সব ক্ষেত্রেই টেলিফোন হয়ে উঠল অপরিহার্য।
রেডিও ও টেলিভিশন
বিশ শতকের গোড়ায় জন্ম নিল রেডিও, যেখানে প্রথমবার মানুষ তারবিহীন যোগাযোগের স্বাদ পেল। ১৯২০ সালে পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গ শহরে চালু হলো প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও সম্প্রচার। সংবাদ, সংগীত, নাটক—সব পৌঁছাতে লাগল মানুষের কানে সরাসরি। রেডিওর পরেই আসে টেলিভিশন, যা যোগাযোগকে একেবারে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। মানুষ শুধু শুনছে না, দেখছে—এই পরিবর্তন সমাজে এনে দেয় দৃশ্যমান সত্যের বিশ্বাস। চাঁদে মানুষের পা রাখা, বার্লিন প্রাচীরের পতন বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সব পৌঁছে গেল ঘরে ঘরে। এই সময়েই জন্ম নেয় গণমাধ্যমের ক্ষমতা তথ্য শুধু পণ্য নয়, প্রভাবের অস্ত্র।