হোম > ফিচার > ক্যাম্পাস

পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা শিক্ষার শহর

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আব্দুল্লাহ আল মামুন অন্তর

লালমাই পাহাড়ের কোলে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) যেন এক টুকরো ছোট শহরযেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে গড়ে তুলেছে এক অনন্য স্বতন্ত্র বিশ্ব। কুমিল্লা শহর থেকে মাত্র ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার দূরে, সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের সালমানপুর ও রাজারখোলা এলাকায় বিস্তৃত ২৫০ একরের এই সবুজ ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য এক শান্ত, মনোরম ও মননশীল পরিবেশের প্রতীক।

২০০৬ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়—কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)—তার স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিকটবর্তী ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর সংস্পর্শে শিক্ষার এক অনন্য আবহ তৈরি করেছে। শালবন বিহার, ময়নামতী জাদুঘর, বার্ড, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ এবং ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প পল্লিকে কেন্দ্র করে এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার কেন্দ্রই নয়, বরং কুমিল্লার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। বিস্তারিত লিখেছেন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন

ষাটের দশকে কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হয়। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তোলা হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়। এরপরও কুমিল্লাবাসীর আন্দোলন থেমে থাকেনি। স্বাধীনতার পরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম

২০০৪ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং একই বছরের ৮ মে জাতীয় সংসদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০০৭ সালের ২৮ মে প্রথম ব্যাচে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে পাঠদান শুরু হয়।

একাডেমিক কাঠামো

বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় ৬৪৬১ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ২৮১ জন শিক্ষক, ১১২ জন কর্মকর্তা ও ১৯৫ জন কর্মচারী।

অনুষদ ও বিভাগগুলো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল অনুষদে রয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগ। বিজ্ঞান অনুষদে রয়েছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পরিসংখ্যান ও ফার্মেসি বিভাগ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে রয়েছে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা, মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদে বাংলা এবং ইংরেজি বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া আইন অনুষদের অধীনে রয়েছে আইন বিভাগ।

ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট ও আসনসংখ্যা

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি আসন কমিয়ে ১০৩০টি আসন করা হয়েছে। এছাড়া কোটায় ভর্তি হতে পারবেন প্রায় ৯৩ জন। ‘ক’ ইউনিটে আসন রয়েছে ৩৫০টি। ‘খ’ ইউনিটে আসনসংখ্যা ৪৪০টি এবং ‘গ’ ইউনিটে আসনসংখ্যা ২৪০টি। তবে, বর্তমানে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে ল্যাব বেজড বিভাগগুলোয় আসনসংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোয় ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। যার কারণে সার্বিকভাবে কিছু আসন কমে আসবে। এছাড়া নতুন আরো ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে।

গবেষণা, মানোন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি

গবেষণার মানোন্নয়নে রয়েছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (IQAC)। বিভিন্ন বিভাগ থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে জার্নাল, সাহিত্য পত্রিকা এবং শিক্ষার্থীরা রোবোটিকসসহ নানা উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সাফল্য দেখাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বই, জার্নাল, অডিও ভিজুয়াল সংগ্রহের পাশাপাশি রয়েছে কম্পিউটার জোন ও ই-লাইব্রেরি।

স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন

শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার্থে পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। যেখানে রয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি আসন। এছাড়া নতুন নির্মিত চারটি হলের কাজ সম্পন্ন হলে আরো ৪২০৬টি আসন বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কিছুটা হলেও কমে আসবে এবং শহরে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে প্রায় ১৮টি বাস। যার মধ্যে নিজস্ব ৮টি ও ১০টি বাড়ায় চালিত। এছাড়া রয়েছে খেলার মাঠ, ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা, লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি এবং কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন রয়েছে।

সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সংগঠন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বরাবরই সক্রিয়। এখানে রয়েছে নাট্যসংগঠন থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সাংবাদিক সমিতি, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ক্লাব, প্রেস ক্লাবসহ ২০ থেকে ২৫টি সংগঠন।

ক্যাম্পাসের বিশেষ স্থান

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে রয়েছে শহীদ আব্দুল কাইয়ুম চত্বর, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, ফরেস্ট অব আর্ডেন, লালন পাহাড়, কাঁঠালতলা, বৈশাখী চত্বর, কৃষ্ণচূড়া রোড, শহীদ মিনার, ভিসির টং, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন

২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। এতে ২ হাজার ৮৮৮ জন গ্র্যাজুয়েট অংশ নেন। দ্বিতীয় সমাবর্তন এই বছরের ৭ ডিসেম্বর হবে। এই সমাবর্তনে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।

২০০ একরের নতুন ক্যাম্পাসে যা যা থাকছে

মাত্র ৫০ একর ভূমি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখন দ্রুত সম্প্রসারণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে আরো প্রায় ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিধি প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০.২২ একর জমি অধিগ্রহণ ও ১০০ একর ভূমি উন্নয়নের পাশাপাশি নির্মিত হবে চারটি দশতলা একাডেমিক ভবন, ছয়তলা প্রশাসনিক ভবন, চারটি দশতলা ছাত্রছাত্রী হল, উপাচার্যের বাসভবন, দশতলা শিক্ষক ও কর্মচারী আবাসিক ভবন, ছয়তলা স্কুল বিল্ডিং, পাঁচতলা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, তিনতলা অডিটোরিয়াম, ছয়তলা আন্তর্জাতিক কমপ্লেক্স এবং তিনতলা মেডিকেল ও ডে-কেয়ার সেন্টার। পাশাপাশি নির্মিত হবে কেন্দ্রীয় মসজিদ, স্মৃতিস্তম্ভ, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, পারিবারিক বিনোদন এলাকা, প্রধান ফটক, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, লেক ও সেতু, ওয়াচ টাওয়ারসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ক্যাম্পাস অবকাঠামো।

২০২৬ সালের জুন-জুলাই মাসে প্রথমে চারটি আবাসিক হল এবং চারটি একাডেমি ভবন নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বচ্ছতা, মান এবং নির্ধারিত সময়সীমা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুবির অবদান

২০২৪-এর ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুবির শিক্ষার্থীরা প্রথম অংশগ্রহণ করেন ৪ জুলাই। সেদিন তারা ক্যাম্পাসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর ৬ জুলাই রাতে মশাল মিছিল ৭, ৮ ও ১০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন জোরদার করে তোলেন। ১১ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম সরাসরি পুলিশের হামলার শিকার হন। এরপর আন্দোলন আরো তীব্র গতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উপাচার্যের কথা

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরে এসে সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ওরা গ্রেড ওয়ানে আছে, আমরা আছি গ্রেড টুতে। তাদের মতো আমাদেরও গ্রেড ওয়ানে থাকার কথা, কারণ কুমিল্লা অন্য জায়গাগুলোর চেয়েও মেধাবীদের স্থান। কুমিল্লা শহর মেধাবী মানুষের শহর। সেখানে সেকেন্ড গ্রেডের বিশ্ববিদ্যালয় থাকা ঠিক না, ফার্স্ট গ্রেডের হওয়া উচিত ছিল। সেদিক থেকে আমরা এখনো তেমন উন্নত হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সবচেয়ে বেশি ধারণা করেন শিক্ষকরা। তারাই একমাত্র এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। শিক্ষার্থীরা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান। মানুষের অন্তরে তাদের জায়গা করে নিতে হবে। গত ১৭ বছরে শিক্ষার্থীরা মার খেয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, এই এক বছরে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়, মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিতে হবে। ওরাই এ দেশের ভবিষ্যৎ, এরাই সব পদ-পদবি পাবেন। তারা যদি মানুষের অন্তরেই জায়গা না পান, তাহলে কোথায় যাবেন?

রাবি শিক্ষকের হিজাব নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

ঢাবির তিন শিক্ষার্থীর কোরআন অবমাননা, প্রশাসন নিরব!

জাবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি শামসুল, সম্পাদক জামাল

কুবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি

অহংকার ও জুলুমের কারণেই খুনি হাসিনার পতন হয়েছে: ছাত্রশিবির সভাপতি

২০০ শিক্ষার্থীকে মেরিট অ্যাওয়ার্ড দিল জবি ছাত্রশিবির

উদ্যোক্তাদের জন্য লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি: নোবিপ্রবি উপাচার্য

শিবিরের শুভেচ্ছাবার্তার বিপরীতে ছাত্রদলের আক্রমণাত্মক স্লোগান

বাকসু ভবনে ভাতের হোটেলের ব্যানার

মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল, অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ