হোম > ফিচার > স্বাস্থ্য

অটিজম : ভিন্নতা মানেই অসম্পূর্ণতা নয়

মো. তানভীর হাসান

আজকের পৃথিবীতে আমরা নানা ধরনের বৈচিত্র্যের মধ্যে বাস করি। মানুষের চিন্তা-চেতনা, আচরণ ও জগৎকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরের থেকে আলাদা। এই বৈচিত্র্যেরই একটি অংশ হলো অটিজম। অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত ভিন্নতা (Neurodevelopmental disorder), যা মূলত শৈশবেই প্রকাশ পায়। একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) বলা হয়। কারণ এর ধরন ও মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

অটিজম আসলে কী?

সহজ কথায়, অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর মস্তিষ্ক আর দশজনের মস্তিষ্কের চেয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে কাজ করে। এর ফলে তাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (Social interaction), যোগাযোগ (Communication) ও আচরণে (Behaviour) কিছু নির্দিষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়।

তারা হয়তো চোখে চোখ রেখে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না, অথবা অন্যের আবেগ বা সামাজিক ইঙ্গিত বুঝতে তাদের অসুবিধা হতে পারে। অনেকে হয়তো কথা বলতে দেরি করে, অথবা তাদের কথা বলার ধরন কিছুটা আলাদা হতে পারে। প্রায়ই তাদের নির্দিষ্ট কিছু রুটিন মেনে চলতে ভালো লাগে এবং সেই রুটিনের সামান্য পরিবর্তনে তারা অস্বস্তি বোধ করতে পারে। আলো, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি তারা খুব বেশি সংবেদনশীল (Sensitive) বা অসংবেদনশীল হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজম স্পেকট্রামে রয়েছে। অটিজম মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় এই হার মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রায় চারগুণ বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অটিজমের হার ও চিত্র বোঝার জন্য বিভিন্ন গবেষণা ও সরকারি জরিপ থেকে পাওয়া যায়, ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার প্রতি এক হাজার জনে ১ দশমিক ৭ জন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে প্রতি ১২৫ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজমের উপসর্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার ১৪২ জন।

অটিজমের কারণ কী?

খুব সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ উত্তর হলো, অটিজমের কোনো একক নির্দিষ্ট কারণ নেই। বিজ্ঞানীরা এখনো অটিজমের সব কারণ পুরোপুরি জানতে পারেননি, তবে গবেষণায় এটি নিশ্চিত যে, এটি একাধিক বিষয়ের সম্মিলিত প্রভাবে ঘটে থাকে। অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি মস্তিষ্কের বিকাশগত একটি ভিন্নতা।

গবেষণায় অটিজমের পেছনে প্রধানত দুটি বিষয়কে মূল কারণ হিসেবে দেখা হয়—১. জেনেটিক বা বংশগত কারণ; এবং ২. পরিবেশগত বা পারিপার্শ্বিক কারণ।

সচেতনতার প্রয়োজন কেন?

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজে অটিজম নিয়ে সঠিক তথ্যের চেয়ে ভুল ধারণা ও কুসংস্কার অনেক বেশি। এই না জানার কারণেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিরা প্রায়ই অবহেলা, বিদ্রুপ ও বৈষম্যের শিকার হয়। অনেক পরিবার সামাজিক লজ্জার ভয়ে তাদের সন্তানকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখে।

এর ফল হয় মারাত্মক। সঠিক সময়ে অটিজম শনাক্ত না হলে এবং প্রয়োজনীয় থেরাপি বা সহায়তা না পেলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ প্রাথমিক পর্যায়েই যদি অটিজম শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক পদক্ষেপ (যেমন: স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, বিশেষ শিক্ষা) নেওয়া হয়, তবে এই শিশুরাও তাদের ভেতরের সম্ভাবনাকে বিকশিত করার পূর্ণ সুযোগ পায়।

অটিজম স্পেকট্রামে থাকা ব্যক্তিরা যেন সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হতে পারে, সেজন্য সমাজ ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে উভয়েরই সুনির্দিষ্ট করণীয় রয়েছে।

লেখক : লেকচারার, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগ, ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস

ফুসফুসের ক্যানসার: সচেতনতা ও প্রতিরোধ

শিশুর চোখ ভালো রাখে যে খাবার

শীতে নাক বন্ধ হয় কেন?

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ৪০০

ডেঙ্গু কাড়লো আরও ৩ প্রাণ, হাসপাতালে ৪২১

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতাল অভিভাবকের ভূমিকা রাখবে

কিডনি রোগের আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা

স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে অশোভন আচরণের দায়ে ডা. ধনদেবকে অব্যাহতি

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট-ফার্মাসিস্টদের কাজে ফেরার নির্দেশ, না মানলে ব্যবস্থা

ডেঙ্গুতে সারা দেশে আরো ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৫