আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্কের কোষের ক্যানসারই হচ্ছে ব্রেন ক্যানসার। মস্তিষ্কের মূল কোষকে বলা হয় নিউরন। নিউরনের সহায়ক কোষকে বলা হয় নিউরোগ্লিয়া। সাধারণত নিউরোগ্লিয়া বা গ্লিয়াল সেল থেকে ব্রেন ক্যানসারের উৎপত্তি হয়।
প্রাদুর্ভাব কেমন?
গ্লোবোকান-২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী ব্রেন ও সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ক্যানসার সব ক্যানসারের ১৯ শতাংশ এবং এর মাধ্যমে মৃত্যু সব ক্যানসার মৃত্যুর ২৫ শতাংশ। যেকোনো বয়সে আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণগুলো
তীব্র মাথাব্যথা প্রায় সবসময় মাথা ধরে থাকে। তবে সকালে বেশি হয় এবং কাশি দিলে বাড়তে পারে। এ ছাড়া বমিভাব ও বমি হতে পারে। বমির ওষুধ দিয়েও বমিভাব না কমা। পুরো শরীর অথবা শরীরের একটি অংশে খিঁচুনি হতে পারে। সুনির্দিষ্ট স্নায়ুগত সমস্যা হতে পারে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং বিভিন্ন অংশের টিউমার আলাদা আলাদা সমস্যা নিয়ে আসে।
শনাক্তকরণ
১. এমআরআয়ের দ্বারা হাই ও লো গ্রেড টিউমার আলাদাভাবে বোঝা যায়।
২. যাদের ক্ষেত্রে এমআরআই করা যাবে না, তারা সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু ছোট এবং লো গ্রেড টিউমার সিটি স্ক্যানে নাও ধরা পড়তে পারে।
৩. টিউমার এবং ইডিমা বুঝতে এবং রেডিয়েশন নেক্রসিস ও টিউমার রিকারেন্স আলাদাভাবে বুঝতে ও প্রাইমারি শনাক্ত করতে পেট সিটি স্ক্যান সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা।
৪. টিউমার বা ক্যানসারের ধরন শতভাগ নিশ্চিত হতে হলে সার্জারি করে বায়োপসি পরীক্ষা করতে হবে। (কিন্তু অপটিক নার্ভ ও ব্রেনস্টেম গ্লিওমাতে সার্জারির দরকার নেই)
৫. এর মাধ্যমে কিছু মলিকুলার মার্কার দেখা হয়। এই মলিকুলার মার্কার দিয়ে ক্যানসারের ধরন আরো সূক্ষ্মভাবে শনাক্ত করা হয় এবং পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
চিকিৎসা
১. ব্রেন ক্যানসারের সার্জারি করার ক্ষেত্রে অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। একে বলা হয় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অস্ত্রোপচার। অর্থাৎ প্রয়োজনে টিউমারের কিছু অংশ রেখে আসতে হবে কিন্তু রোগীর নরমাল ব্রেনের যেন ক্ষতি না হয়। বর্তমানে অ্যাওয়াক তা ফ্রানিওটমি করা হয় এ জন্য।
২. সার্জারির পর সাধারণত রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
৩. সাধারণত রেডিওথেরাপির পাশাপাশি ও টাগেটেড থেরাপি এবং পরে ওরাল কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিছু অ্যাডভান্সড ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি যেমন : Bevacizumab দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা
আমেরিকার ক্যানসার সোসাইটির মতে, গড় ভালো থাকার সম্ভাবনা।
প্রতিরোধের উপায়
যাদের মধ্যে লক্ষণ রয়েছে, তারা দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক : কনসালটেন্ট, টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার, বগুড়া