সাক্ষাৎকার
সড়ক দুর্ঘটনাজনিত রোগী ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অর্থোপেডিক ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। হাড় ভাঙলে বা সঠিক জায়গা থেকে সরে গেলে রোগীকে অপারেশনের টেবিলেও যেতে হয়। কী কী কারণে অর্থোপেডিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আমাদের কোন বাজে অভ্যাসগুলোর কারণে ঘাড়ব্যথা ও কোমরব্যথার সৃষ্টি হয়—এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হ্যালো ডাক্তার বিভাগে আজ কথা বলব অর্থোপেডিক, ট্রমা ও স্পাইন বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. শেখ সাদীউল ইসলাম-এর সঙ্গে।
প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে কোন ধরনের অর্থোপেডিক রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে?
উত্তর : বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে হাঁটু, কোমর ও ঘাড়ের ব্যথা এবং ক্ষয়রোগ (অস্টিওআর্থ্রাটিস এবং মাংসপেশির টানজনিত ব্যথা)।
অনেক রোগীর ঘাড় বা কোমরের ডিস্ক প্রোলাপ্স বা সায়াটিকা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বাচ্চাদের ভিটামিন ডি’র অভাবজনিত রোগ রিকেটস এবং বয়স্কদের (বিশেষ করে মাসিক বন্ধ হওয়া মহিলাদের) হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় অস্টিওপোরোসিস বেশি হয়। আর রোড অ্যাক্সিডেন্টজনিত ফ্র্যাকচার তো আছেই।
প্রশ্ন : অল্প বয়সেই হাঁটু ও কোমরের ব্যথা বাড়ার পেছনে প্রধান কারণগুলো কী?
উত্তর : প্রধান কারণগুলো হলো অতিরিক্ত ওজন, ভুল ভঙ্গিতে শোয়া, বসা বা হাঁটা, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার, নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব এবং খেলাধুলার সময় ভুল ট্রেনিং বা আঘাত। এছাড়া ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এবং কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের ঘাটতিও সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন : হাড় ভাঙার পর অপারেশন সবসময় জরুরি হয় কি না?
উত্তর : না, সবসময় অপারেশন জরুরি নয়। যদি হাড় সঠিক অবস্থানে থাকে, তাহলে প্লাস্টার/ব্রেসেই ভালো হয়। সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে।
আর যদি হাড় সরে যায়, একাধিক টুকরা হয়, জয়েন্ট জড়িত থাকে, স্নায়ু-রক্তনালিতে আঘাত থাকে বা চামড়া ভেদ করে হাড় বাইরে বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে, তখন অপারেশন প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন : দীর্ঘ সময় মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারে অর্থোপেডিক ঝুঁকি কতটা?
উত্তর : ঝুঁকি খুবই উল্লেখযোগ্য। ঘাড়-কাঁধের ব্যথা, মাংসপেশির দীর্ঘমেয়াদি টান, এমনকি ঘাড় বা কোমরের ডিস্ক সরে গিয়ে হাত-পায়ে ঝিঁঝি ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি কবজি, কনুই ও কোমরের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাও দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন : জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ভুল ধারণা কী?
উত্তর : প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো হলো, একবার করলে আর হাঁটা যাবে না, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট মানেই জীবন শেষ, খুব ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন, অনেক খরচ প্রভৃতি। বাস্তবে আধুনিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টে রোগী ব্যথামুক্তভাবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায় এবং ২০-২৫ বছর বা তারও বেশি সময় ভালো থাকে। বাংলাদেশে এখন প্রায় সব ধরনের জয়েন রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি হচ্ছে অনেক কম খরচে, যা বিদেশ থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম খরচে। সিঙ্গাপুরে অপারেশন করতে এক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে করাতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে। আমাদের দেশে সেই অপারেশন তিন-চার লাখ টাকায় করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রশ্ন : সাধারণ মানুষের হাড় ও জয়েন্ট সুস্থ রাখার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটতে এবং ব্যায়াম করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও কাজ করা এবং সূর্যের আলো গ্রহণ (Vitamin D) করা ছাড়াও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।