ফুসফুসের ক্যানসার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারের অন্যতম প্রধান কারণ। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মূল অঙ্গ হলো ফুসফুস, যা অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে শরীরকে সুস্থ রাখে। যখন ফুসফুসের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই ফুসফুসের ক্যানসার তৈরি হয়।
লক্ষণ
ফুসফুসের ক্যানসারে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়ই কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে—১️. দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা কাশির ধরনে পরিবর্তন; ২️. কাশি বা থুতুতে রক্তের উপস্থিতি; ৩️. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath); ৪️. বুকে ব্যথা (Chest Pain); ৫️. ওজন কমে যাওয়া ও ক্ষুধামান্দ্য; এবং ৬️. ঘনঘন নিউমোনিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
উপরোক্ত লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কারণ ও ঝুঁকি
ফুসফুসের ক্যানসারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো—
ধূমপান: প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ধূমপানই প্রধান কারণ।
প্যাসিভ স্মোকিং: অন্যের ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলেও ঝুঁকি বাড়ে।
দূষণ: বায়ুদূষণ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক পদার্থে দীর্ঘদিনের সংস্পর্শ।
জেনেটিক কারণ: পরিবারে ফুসফুসের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
রেডন গ্যাস ও অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শ: বিশেষ পরিবেশে যারা কাজ করেন তাদের ঝুঁকি বেশি।
রোগ নির্ণয়
ফুসফুসের ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়—১️. চেস্ট এক্স-রে (Chest X-ray); ২️. সিটি স্ক্যান (CT scan): ফুসফুসের ভেতরের বিস্তারিত ছবি দেখা হয়; ৩️. বায়োপসি (Biopsy): ক্যানসার কোষ নিশ্চিত করার জন্য টিস্যু পরীক্ষা; ৪️. ব্রঙ্কোস্কপি (Bronchoscopy): ফুসফুসের নালি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ; ৫️. পিইটি স্ক্যান (PET Scan): ক্যানসার শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ।
প্রতিরোধ
ফুসফুসের ক্যানসার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা সম্ভব—১. ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা; ২. ধূমপানের পরিবেশ এড়ানো; ৩. বায়ুদূষণ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য থেকে সুরক্ষা; ৪. ফল, শাকসবজি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাদ্য গ্রহণ; ৫. নিয়মিত ব্যায়াম করা; ৬. দীর্ঘস্থায়ী কাশির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
দেশে ধূমপানের ব্যাপক বিস্তার, বায়ুদূষণ ও সচেতনতার অভাবের কারণে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি খুব বেশি। অনেক রোগী দেরিতে চিকিৎসা নেন, যখন রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
১. ধূমপানবিরোধী প্রচারণা জোরদার করা।
২. প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করার সুযোগ বৃদ্ধি।
৩. বিশেষায়িত চিকিৎসা ও ফলো-আপের ব্যবস্থা জোরদার করা।
৪. জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।
ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য, যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায়। সুস্থ জীবনযাপন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণ করলে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক (অনকোলজিস্ট), ক্যানসার বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (পিজি হাসপাতাল)