গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি নিয়ে ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ ও ‘ব্রেইন’-এর যৌথ উদ্যোগে গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় লালদিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করলেও চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। একই সঙ্গে দেশের রপ্তানি বাড়াতে বন্দরের আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বিডিবিএল ভবনে আয়োজিত এ আলোচনায় অংশ নেন পোর্ট ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, আমদানিকারক-রপ্তানিকারক, মেরিন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদসহ অনেকে।
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের অধিকাংশ বক্তা লালদিয়া টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মতামত দেন। আলোচনার শুরুতে অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুবাইল বিন আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “বন্দরের ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ছাড়া আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারব না।”
বক্তারা উল্লেখ করেন, “এই মুহূর্তে পরীক্ষিত বিদেশি পোর্ট অপারেটর ছাড়া বিদ্যমান বন্দর ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা দূর করা সম্ভব নয়। অতীতে দেশীয় যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ব্যবহারকারীদের খারাপ সেবা গ্রহণে বাধ্য করেছিল। ওই প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি।”
বক্তাদের দাবি, অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থে কোনো খ্যাতিমান বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়নি। আগামী নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সুষ্ঠু বন্দর ব্যবস্থাপনায় তারা সঠিক পদক্ষেপ নেবে—এ বিশ্বাস এখনো মানুষের মধ্যে তৈরি হয়নি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে জনগণ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে বলে মনে করেন তারা। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও থাই–বাংলা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, “পোর্ট ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করলেও যতদিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি দূর না হবে, ততদিন ব্যবসায়ীরা বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা পুরোপুরি নিতে পারবেন না।”
জনসংহতি আন্দোলনের ফিরোজ আহমেদ বলেন, “উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া বিশেষ একটি কোম্পানিকে পোর্ট ব্যবস্থাপনার সুযোগ দেওয়া—এই সরকারও আগের সরকারের মতো অস্বচ্ছতা রেখে দিয়েছে। এটি সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ।”
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন—বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী, লজিস্টিকস ও ফ্রেইট অপারেটর সিকো গ্রুপের কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, এবি পার্টির নাসরিন সোহানা মিলি, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, সেন্ট্রিস্ট ন্যাশন টিভির শাফকাত রাব্বি অনিক, কাউন্টার পয়েন্ট–এর নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান প্রমুখ।
এসআর