দেশে শৈত্যপ্রবাহ নেই; এরপরও ঘনকুয়াশার কারণে সূর্যের আলো দেখা না দেওয়ায় দিনের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় তীব্র শীতে কাঁপছে সারাদেশ। আজ সকাল থেকেই আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল; দুপুর গড়িয়েও সূর্যের দেখা মেলেনি। সেইসঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় পৌষের মাঝামাঝিতে সারাদেশে শীতের অনুভূতি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তরাঞ্চলে ৭দিন এবং রাজধানীতে ৪দিন ধরে এমন পরিস্থিতি; এ অবস্থা আরো তিন-চার দিন থাকতে পারে। আর আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছে সংস্থাটি।
গত কয়েক দিনে দেশের তাপমাত্রা বেশ কমে গেছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে গেছে। তাপমাত্রার (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) পার্থক্য কমে গেলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়।
বর্তমান আবহাওয়ার এ অবস্থাকে ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং দুর্যোগপূর্ণ আখ্যায়িত করে এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মোঃ বজলুর রশদি আজ সোমবার রাতে আমার দেশকে বলেন, গত ৩ দিনের ব্যবধানে দেশের তাপমাত্রা বেশ কমে গেছে। এ কারণে কুলিং হচ্ছে। এতে সারাদেশেই শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থা আরো তিন-৪দিন থাকতে পারে। এরপর কিছুটা উন্নতি হলেও আবার কমার তাপমাত্রা কমে ৩ জানুয়ারির দিকে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিনও এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র শীতের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। এরপর গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় নওগাঁর বদলগাছিতে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গতকাল দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৭ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গতকাল রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৮ এবং সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বান্দরবানে ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় কনকনে শীতে সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের অনেক এলাকায় আজও দেখা মেলেনি সূর্যের। চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বেশি শীত জেঁকে বসেছে রাজধানীতেও। আরও তিন-চার দিন দেশে এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এরফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে বর্ধিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, দেশে এখন কোনো শৈত্যপ্রবাহ বইছে না। তবে শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হলে শীতের অনুভূতি যেমন থাকে, তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া এবং সূর্যের দেখা না পাওয়া যাওয়ায় এমন অনুভূত হচ্ছে।
শাহানাজ সুলতানা আরও বলেন, এখন যে অবস্থা চলছে, তা আরও তিন-চার দিন থাকতে পারে। ১ ও ২ জানুয়ারি তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। এরপর আবার তাপমাত্রা কমতে পারে।
এদিকে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। দুইদিন থেকে রাজধানীতেও শীতের প্রভাবে রাস্তায় লোকজন কম। সোমবার দুপুরে পল্টনে রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ‘তীব্র শীতেও পেটের তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছি। তবে রাস্তায় মানুষের চলাচল কম থাকায় ভাড়া হচ্ছে না। এছাড়া শীতে মানুষ রিকশায় কম উঠে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে শীতের পোশাক কেনাকাটা বেড়েছে। বিশেষ করে গুলিস্তান এলাকায় রাস্তার উপর শীতের পোশাকের দোকান বসিয়েছে হকাররা। কেনাকাটাও বেশ জমে উঠেছে বলে জানিয়েছেন গুলিস্তানের ফুটপাতের ব্যবসায়ী রমজান আলী। তিনি বলেন, ৩-৪দিন থেকে শীতের পোশাকের কেনাকাটা বেড়েছে। আবহাওয়া এমন থাকলে সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।
অন্যদিকে শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগ অর্থাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে।