হোম > জাতীয়

প্রান্তিকে চিকিৎসা কাঠামো থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ

আজাদুল আদনান

হয়ে পড়েছিল পটুয়াখালীর বাউফলের সিকান্দার হাওলাদারের। শুরুতে জেলা সদর হাসপাতালে নিলে পাঠানো হয় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কের প্রায় ৮৫ শতাংশে রক্ত চলাচল বন্ধ ছিল বলে শনাক্ত হয়।

তবে এক সপ্তাহ ভর্তি থেকেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। সেখান থেকে পাঠানো হয় রাজধানীর জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। এতে বেঁচে ফিরলেও সময়মতো সেবা না পাওয়ায় তার হাতটি অবশই আছে। সময়মতো কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পেয়ে স্থায়ীভাবে এমন পঙ্গু হওয়ার ভুক্তভোগী কেবল সিকান্দার নয়, স্থানীয় পর্যায়ে অধিকাংশ স্ট্রোকের রোগীর অভিজ্ঞতা অভিন্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি প্রতিষ্ঠান মাত্র তিনটি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতাল এবং জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০ শয্যার ডেডিকেটেড স্ট্রোক সেন্টার আছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে আংশিক চিকিৎসা পাওয়া যায়।

বেসরকারিভাবে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল, আসগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ল্যাবএইড ও সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে স্ট্রোকের সেবা চালু আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, যাদের ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয়। আর প্রায় ৭০ শতাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় ও বিকলাঙ্গের তৃতীয় কারণ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৭০ শতাংশ দেশেই এ সমস্যার ঝুঁকি বেশি। এসব দেশের ৮৭ শতাংশ মৃত্যু ও বিকলাঙ্গের প্রধান কারণ স্ট্রোক।

তবে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মমাফিক জীবনযাপনে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে দ্রুত চিহ্নিত করা গেলে ৭০ শতাংশের বেশি রোগী বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ঠিক কী পরিমাণ মানুষ স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০২০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ওই বছর ব্রেইন (মস্তিষ্ক) স্ট্রোকে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে স্ট্রোকের চিকিৎসা দিতে বিভাগীয় হাসপাতালে আলাদা বিভাগ আছে। পাশাপাশি স্ট্রোক সেন্টার চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২০ সালে, করা হয় অবকাঠামো। কিন্তু আন্তরিকতার অভাবে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ হচ্ছে না বহু বছর ধরে। এ কারণে রোগীদের এখনো ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুমন রানা বলেন, আগের চেয়ে স্ট্রোকের রোগী অনেক বেড়েছে। বয়স্কদের পাশাপাশি বর্তমানে তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো খুব একটা উন্নতি হয়নি। ঢাকার বাইরে জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে এখনো প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া মূল সেবা মিলছে না। ঢাকামুখী চিকিৎসা হওয়ায় সরকারের অর্থ যেমন ব্যয় হচ্ছে, রোগীও চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।

নিউরোসায়েন্সের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আমার দেশকে বলেন, বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকের চিকিৎসা হিসেবে আইভি থ্রোম্বলাইসিস ব্যবহার করা হচ্ছে। আধুনিক এ চিকিৎসার ফল বেশ আশাব্যঞ্জক। গবেষণায় দেখা গেছে, এ চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের ৭০ শতাংশের উন্নতি হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হয়েছে তিন মাস পর তাদের ৫০ শতাংশ ব্যক্তি নিজের কাজ নিজেই করতে পারেন, ১৫ শতাংশের অন্যের কিছু সাহায্য দরকার হয়, ১৫ শতাংশ অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হন ও ২০ শতাংশ মারা যান। কাজেই প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে নিউরোলজি বিভাগ আছে। সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া গেলে অনেকটাই চিত্র বদলাবে।

তিনি বলেন, ‘ইস্কেমিক স্ট্রোকের রোগী সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে এলে তাদের এল্টিপ্লেজ দিয়ে আইভি থ্রম্বোলাইসিস করা যায়। এর পরে আসলেও চিকিৎসা আছে। স্ট্রোকের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এলেও অত্যাধুনিক চিকিৎসা করা সম্ভব। এর নাম হলো মেকানিকাল থ্রোম্বেক্টমি। রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে হার্টের এনজিওগ্রামের মতো ব্রেনের এনজিওগ্রাম করা হয়। যদি তাতে দেখা যায়, মস্তিষ্কের মোটা রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধেছে তাহলে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে তা টেনে বের করা হয়। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। শতকরা ৭০ শতাংশ রোগী এতে সুস্থ হন। বাংলাদেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ইতোমধ্যে নিউরোসায়েন্সসহ বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে শুরু হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভাগীয় পর্যায়েও এটি চালু করা যেতে পারে।’

বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের সাবেক মহাসচিব ও ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, স্ট্রোক সেন্টারগুলো রাজধানীকেন্দ্রিক, এটা বড় সমস্যা। তবে চিকিৎসার জন্য সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা সবখানে দরকার নেই। বিভাগীয় হাসপাতালে যে কেন্দ্র আছে সেখানে পর্যাপ্ত নার্স ও প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ দিলেই মানুষ সেবা পাবে।

চার দফা কমার পর ফের বেড়ে ২ লাখ ছাড়ালো স্বর্ণের দাম

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্নের তাগিদ

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন বই আকারে উন্মুক্ত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

একবিংশ শতাব্দীতে হাসিনার চেয়ে বড় খুনি কেউ নেই: প্রেস সচিব

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন বই আকারে উন্মুক্ত করার আহ্বান

শ্বশুরবাড়ি বা নিজ এলাকায় পদায়ন হবে না: প্রধান উপদেষ্টা

লটারির মাধ্যমেই স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষা সচিবকে অভিনন্দন অভিভাবকদের

ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক তৃতীয় কারো নির্দেশনায় পরিচালিত হবে না: চীনা রাষ্ট্রদূত

সিইসির কাছে গণঅধিকার পরিষদের ৯ দফা সুপারিশ

এআই নির্মিত ছবি-ভিডিওর অপপ্রচার ঠেকাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা