ঢাকায় ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শুধু রাজউক নয়, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ঝুঁকি নিরূপণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা থাকতে হবে।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)–এর কাউন্সিল কক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ অনেক মোকাবিলা করেছি। আমাদের মতোন বড় বড় বন্যা মোকাবিলা করে তার পরের মাসেই আবার দাঁড়িয়ে যায়, এমন জাতি পৃথিবীতে কম আছে। তো এটাও (ভূমিকম্প) ইনশাআল্লাহ আমরা একসঙ্গে সকলে মোকাবিলা করতে পারবো।’
প্রকৃতি অনেক সময় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু এবারের মতো ভয় আগে মানুষ পায়নি। জনমনের আতঙ্ক তখনই দূর হবে, যখন জনগণ দেখবে যে প্রশাসন তার দোরগোড়ায় যাচ্ছে তার ঝুঁকিটা মূল্যায়ন করতে, ঝুঁকি নিরূপণে ব্যবস্থা নিতে।
রাজধানীর ভবনগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়নের কাজে রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অজুহাতে এ কাজে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। জননিরাপত্তার স্বার্থে রাজউককে এটা করতে হবে। প্রয়োজনে রাজউককে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
রাসায়নিক গুদাম পুরান ঢাকাকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করেছে বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এখানকার প্রায় প্রতিটি বাসায় ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের কারখানা আছে। এখন পর্যন্ত সরানোর কোনো রকম কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। স্থায়ীভাবে দ্রুতসময়ে এসব গুদাম সরিয়ে নিতে হবে। এখানে ব্যবসায়ীরা হ্যাঁ বলুক, কি না বলুক, তার থেকে অনেক বেশি জরুরি হচ্ছে মানুষ।
৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর যেহেতু কম মাত্রার ‘আফটার শক’ হয়েছে, তাই আপাততের জন্য বিপদ পার হয়েছে বলে মনে করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দেন।
সেমিনারে আদিলুর রহমান খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে জনগণের প্রস্তুতির পাশাপাশি সরকারি সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন, মাঠপর্যায়ের তদারকি জোরদার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য রাজউককে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ঢাকায় ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত
সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি ও রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় গত ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পের পর ছোট-বড় ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে ।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, সমন্বিতভাবে কাজ না করা গেলে ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যথাযথ নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় জানিয়ে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, রাজউকে অর্থের বিনিময়ে কোনো কাজ হয় না। রাজউক কাউকে প্ল্যান করে দেয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাড়িওয়ালারাই ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট দিয়ে বাড়ির প্ল্যান করে রাজউকে জমা দেয় এই শর্তে যে, রাজউকের নিয়ম মোতাবেক করবেন। পরবর্তীতে তারা সেটা না মানলে জরিমানা কিংবা শাস্তি দিতে হলে সেই বাড়িওয়ালাদেরই দেওয়া উচিত। এর দায়ভার রাজউকের না। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন, রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস আলাদাভাবে কাজ করায় সব বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে।
সেমিনারে বুয়েট-এর ভূমিকম্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. তানভীর মঞ্জুর, অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকম্প ও দুর্যোগ প্রস্তুতির বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন ইউটিলিটি ও জরুরি সেবাপ্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, পুরান ঢাকার প্রতিনিধি, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভুমিকম্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষক, রিহ্যাব প্রতিনিধি, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রতিনিধি, বিভিন্ন সোসাইটির প্রতিনিধিসহ রাজউকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।