হোম > জাতীয়

হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে

বশীর আহমেদ ও এমরান এস হোসাইন

জুলাই গণহত্যার দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরালো হচ্ছে। শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে তার দণ্ড কার্যকরের দাবি তীব্র হচ্ছে। তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে দিল্লির ওপর চাপ অব্যাহত রাখতেও দাবি তুলেছে তারা।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা তৎপরতা। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারিসহ ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমার দেশকে জানিয়েছেন।

এদিকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে দিল্লির একাধিক কূটনৈতিক সূত্র আমার দেশকে বলেছে, এই রায়ের ফলে ভারত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে এক ধরনের চাপে পড়েছে। আগামীতে এ চাপ আরো বাড়তে পারে বলে দিল্লি মনে করছে। তারা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় নানা ধরনের অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে মোদি সরকার। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইতোমধ্যে নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু করেছে। দেশটির প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানকার প্রথমসারির একাধিক গণমাধ্যম শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের চেয়ে রায়ের প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা অডিও বার্তায় যা বলেছেন, তা ফলাও করে প্রচার করেছে।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করুক আর না-ই করুক, তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ অবশ্যই জোরালো করতে হবে। তাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত যে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও চুক্তি লঙ্ঘন করছেন বাংলাদেশের উচিত হবে সেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরে দিল্লির মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়া। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের জন্য প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহযোগিতা নেওয়া জরুরি।

গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে উসকানিদাতা হিসেবে একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি (গণহত্যার নির্দেশদাতা) হিসেবে, রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জন এবং সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে জুলাই শহীদ ও আহতদের ক্ষতিপূরণে ব্যয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় লঘুদণ্ড হিসেবে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা রায় ঘোষণার পরপরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি তোলা হয়। তারা বলেছেন, ফাঁসির আসামিকে কোনো দেশে আটকে রাখার সুযোগ নেই। দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাদের ফেরত পাঠাতে হবে, অন্যথায় দিল্লির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলা নীতি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করলেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়কে ভুক্তভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছে। জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ধারাবাহিকভাবে এমন একটি বিচার কার্যক্রমের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যা নিঃসন্দেহে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে। সংস্থাটির মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ এখন জাতীয় সংহতি ও উত্তরণের পথ হিসেবে সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের ব্যাপক প্রক্রিয়া নিয়ে এগিয়ে যাবে।

এদিকে সোমবার রায় ঘোষণার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতে পলাতক জুলাই গণহত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে হস্তান্তরের জন্য দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এ ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা ভারতের অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি লেখা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। তবে চিঠিটি কবে পাঠানো হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে হাসিনাকে ফেরাতে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তার জবাব আসেনি। তবে এখন তো পরিস্থিতি আরেক রকম। এখন তার শাস্তি হয়েছে। তাদের (ভারত) সঙ্গে আমাদের চুক্তিও আছে। তাকে ফেরত আনতে আমরা অফিসিয়ালি চিঠি দেব।

একটি আঞ্চলিক সংস্থার সম্মেলনে যোগ দিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বর্তমানে দিল্লি সফরে রয়েছেন। সফরকালে তার সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র আমার দেশকে জানিয়েছে।

রায়-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের যারা আশ্রয় দিয়েছেন, তারা এই ঘৃণ্য অপরাধের পক্ষাবলম্বন করেছেন। তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে ফেরত দিতে হবে এবং আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। গণতন্ত্রের দাবি করলে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ দাবি করলে, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের দাবির প্রতিবেশী হলে তাদের প্রথম দায়িত্ব হলো আর বিলম্ব না করে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আইনের কাছে সোপর্দ করা উচিত।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এ রায় কার্যকরের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচার শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এ রায় কার্যকর করতে হবে। দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা দাবি জানাব, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।

বার্তা সংস্থা বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য গত বছর বাংলাদেশের পাঠানো নোট ভার্বালে এতদিন ভারত চুপ থাকলেও এবার তাদের ওপর চাপ বাড়বে। কারণ, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী। অন্য দেশের একজন পলাতক ও দণ্ডিত অপরাধীকে কেন দিনের পর দিন আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, সে কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য ভারতের ওপর অবশ্যই এখন চাপ বাড়বে। বিবিসির মতে, শিগগির ভারতকে এ ব্যাখ্যা দিতে হবেÑকেন তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করে যাচ্ছে।

শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ রায়ে শহীদ পরিবার ও আহতরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। শুধু রায় দিয়ে বসে থাকলে হবে না। কীভাবে খুনি শেখ হাসিনা ও খুনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেশে এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত আনা হবে, তা দেশবাসীকে জানাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শহীদ পরিবার ও আহতদের পক্ষ থেকে আমরা এ দাবি করছি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি ফাঁসির আসামি শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে দিল্লির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। গণমাধ্যমে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এতদিন শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত বলা হতো। কিন্তু তিনি এখন আর অভিযুক্ত নন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ফাঁসির আসামিকে ভারত ধরে রাখতে পারে না। ভারতের হাইকমিশন ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের দাবি, শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে হবে। আসামিকে ধরে রেখে ১৮ কোটি জনগণের দেশকে শত্রু বানালে বাংলাদেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। তখন আর ভারত নিরাপদ থাকবে না। ভারতকে নিরাপদ রাখার জন্যই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দুই দেশের বন্দি প্রত্যাবর্তন চুক্তির মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে রায় কার্যকর করতে হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৬ সালে ওই চুক্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত থেকে শুরু করে অভিযুক্ত যে কাউকেই ফেরত পাঠাতে হবে। হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে সহজ করতে ২০১৬ সালের সংশোধিত চুক্তিতে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়। ওই চুক্তির ১০(৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেসব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে। শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে। তবে এর পরও চুক্তিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা প্রয়োগ করে অনুরোধের বিষয়টি খারিজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন, অনুরোধ প্রাপক দেশেও যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা চলে তাহলে তা দেখিয়ে অন্য দেশের অনুরোধ খারিজ করা যায়। কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। কারণ, ভারত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। অদূর ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ইস্যুটিতে শক্তহাতে ডিল করার ওপর গুরুত্বরোপ করে আমার দেশকে বলেন, এ ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর নেগোসিয়েশন করতে পারিনি অথবা করিনি। আমরা এখানে দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাঝে মাঝে দুয়েকটি বিবৃতি ও একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। আমরা জানি ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে না। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার দণ্ড হওয়ার পর এখন নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতকে অবশ্যই বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। এ চুক্তির অধীন আমরা ভারতের দাবি মেনে পরশ বড়ুয়াকে হস্তান্তর করেছি। এখন ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাহলে শেখ হাসিনাসহ ভারতে আশ্রয় নেওয়া অন্য খুনিদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, শেখ হাসিনা এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। সারা বিশ্ব দেখেছে একটি স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশ, এমনকি ভারতও কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারেনি।

তিনি বলেন, ভারত শেখ হাসিনাসহ অন্য খুনিদের ফেরত পাঠাবে না, এটি আমরা সবাই জানি। তবে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। ভারতকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য। ভারত যদি তাকে ফেরত না পাঠিয়ে অব্যাহতভাবে আশ্রয় দিতে থাকে, তা হবে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির চরম লঙ্ঘন।

হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করে এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার কাছে খুনি হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। বিশ্বব্যাপী বার্তা দিতে হবে যে, ভারতের ভূমিকা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি। দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যার জন্য যারা দায়ী, ভারতের কারণে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা না গেলে স্পষ্ট হবে রাষ্ট্রটি বিশ্ব মানবাধিকারে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া একটি দেশ।

ইন্টারপোলে আবেদন প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ফেরাতে শিগগির এ রায়ের কপি ইন্টারপোলে আগে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজা পরোয়ানা মূলে নোটিস জারির জন্য আবেদন করা হবে। গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি বলেন, দুজন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপিসহ রেড নোটিস জারির আবেদন আগেই করা আছে। সেটাকে এখন মোডিফাই করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজা পরোয়ানা মূলে আরেকটি নোটিস জারির জন্য আবেদন করব। আমরা অলরেডি এটার কাজ শুরু করেছি।

আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ দম্পতির বিপুল অবৈধ সম্পদ

মধ্যরাতে গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন

কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যে স্থানীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র

আগারগাঁওয়ে পার্কিং করা গাড়িতে আগুন

লুটকারীদের আগামী নির্বাচনে বর্জন করুন: শাকিল

বুধবার বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে ইসির সংলাপ

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু কাল, কোন দেশে কখন

ট্রাইব্যুনালের রায়ে মাহমুদুর রহমান ও অন্যদের ওপর নিপীড়ন প্রসঙ্গ

নারীর প্রতি নির্যাতন দ্বিগুণ বেড়েছে সাইবার সহিংসতার কারণে

২১ নভেম্বর যান চলাচল সীমিত থাকবে ঢাকা সেনানিবাসে