প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন এবং ১১তম গ্রেড সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, বেতন কমিশনের মাধ্যমেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অবস্থান ও যুক্তি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে বিষয়টি কার্যকরভাবে সমাধান করা যায়।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কার্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ইন্সট্রাক্টর এবং নেপের সহকারী বিশেষজ্ঞদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পরীক্ষা চলাকালে আন্দোলন করাটা যুক্তিযুক্ত ছিল না। তবে শিক্ষকদের দাবিকে সরকার অযৌক্তিক বলছে না। পরবর্তীতে শিক্ষকরা বিষয়টি অনুধাবন করে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হয়েছিল, তবে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি দেশের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব পাঠ্যবই মন্ত্রণালয়ের কাছে পৌঁছেছে।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বই সংরক্ষণ ও বিতরণ নির্বিঘ্ন রাখতে নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো শিক্ষকতা পেশায় আসার আগেই প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে। যারা শিক্ষাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী এবং শিক্ষক হতে চান, তাদের জন্য ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্সটি বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষকতা পেশায় দক্ষ, দায়িত্বশীল ও কমিটেড জনবল তৈরি হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের দেশ হোক বা উচ্চ আয়ের দেশ— যে দেশই শিক্ষায় এগিয়ে আছে, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট প্রাক-যোগ্যতা ও বিশেষ প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনেক দেশে শিক্ষক হওয়ার আগে লাইসেন্স নিতে হয়। যেমন চিকিৎসকেরা এমবিবিএস শেষ করে বিএমডিসি থেকে লাইসেন্স না পেলে চিকিৎসা করতে পারেন না। একই ধরনের ব্যবস্থা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও চালু আছে। আমাদের দেশেও ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে এমন একটি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ফারাহ শাম্মী। এদিকে বিকেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বই মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, বই পড়লে মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।