বিশেষ সম্পাদকীয়
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তার ওপর আমাদের মতো প্রবীণত্বে পৌঁছালে মনে হয় সময়ের গতি যেন অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিটি জন্মদিনে মনের ভেতরে আনন্দের পরিবর্তে যেন বিষাদের সুর বেজে ওঠে। ব্যাপারটা অনেকটা পাহাড়ে ওঠানামার মতো। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে চড়াইতে উঠতে হলেও উতরাইয়ের সময় মাধ্যাকর্ষণের টানে গতি বেড়ে যায়। জীবনও অনেকটা ওই রকম। বাল্যকালে ও কৈশোরে স্কুলজীবনের প্রতিটি শ্রেণি কতই না দীর্ঘ মনে হয়। প্রতিটি দিন আনন্দময়। জীবন নিয়ে তখন কত স্বপ্ন বোনা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মজীবন ইত্যাদি।
আর এখন দ্রুতবেগে কেবল অন্তের দিকে ধাবমান। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ফ্যাসিবাদমুক্ত বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার অশীতিপর মা সেই সময় গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একটু ভালো হলে তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় এনে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের কাজে ভয়ানক ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ২০২৪-এর ২২ ডিসেম্বর আমার দেশ-এর নবযাত্রা শুরু হয়েছিল। মাকে হারালাম এ বছর ৬ জুলাই অন্ধকার প্রত্যুষে।
দেখতে দেখতে আরো কতগুলো মাস পেরিয়ে আজ আবার ২২ ডিসেম্বর। ঝরে গেল জীবন থেকে আরো একটি বছর। আমাদের মহানবীর (সা.) একটি হাদিস শুনেছিলাম। তিনি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে উপদেশ দিয়েছেন। হাদিসটি সহিহ কিংবা দুর্বল সেটা আমি না জানলেও উপদেশটি মান্য করে চলি। সে অর্থে নতুনভাবে আমার দেশ চালাতে গিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। এক বছরের সেই অভিজ্ঞতার গল্প আজ পাঠকদের খানিকটা শোনাব।
২০০৮ সালে আমার দেশ-এর সাংবাদিক এবং তৎকালীন মালিক পক্ষের অনুরোধ ও আগ্রহে মিডিয়ায় আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। মরহুম আতাউস সামাদ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, জাহেদ চৌধুরী, এম আবদুল্লাহ এবং সেই সময় কারা অন্তরীণ মালিক মোসাদ্দেক আলী সম্মিলিতভাবে আমাকে পত্রিকা জগতে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আমি প্রথমবারের মতো জেলে গেলে নিরুপদ্রব জীবন থেকে আমাকে পত্রিকা জগতে টেনে আনার জন্য সামাদ ভাই খুব আক্ষেপ করেছিলেন। তিনি আবদালদের বলতেন, পত্রিকা চালাতে না এলে মাহমুদকে পরিবারসমেত হাসিনার এত জুলুম সহ্য করতে হতো না। সামাদ ভাই, পড়ন্ত বেলায় নতুন পেশায় আনার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আপনাকে বেহেশত নসিব করেন।
আমার লেখালেখি অবশ্য শুরু হয়েছিল আমার দেশ-এর সঙ্গে জড়িত হওয়ার বছর দুয়েক আগ থেকেইÑনয়া দিগন্তে কলাম লেখার মাধ্যমে। যা-ই হোক, পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে মইন-মাসুদ-ফখরুদ্দীন গং-এর ভারতীয় ও আওয়ামী কানেকশন এবং বিএনপি ধ্বংসের পরিকল্পনা উদঘাটনকেই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অন্যতম সম্পাদকীয় নীতিতে পরিণত করেছিলাম। আমার সে সময়ের মন্তব্য প্রতিবেদনগুলো পড়লেই আমার দেশ-এর তখনকার লড়াইয়ের ধরনটা বুঝতে পারবেন। তারপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করলে একেবারে প্রথম থেকেই তার সরকারের দুর্নীতি, বিচার বিভাগ দলীয়করণ, মানবাধিকার হরণ এবং যাবতীয় অপশাসনের বিরুদ্ধে আমার দেশ সোচ্চার থেকেছে। কোনো বিপদকে তোয়াক্কা করিনি।
ফ্যাসিস্ট সরকার মাত্র বছর চারেক আমাদের পত্রিকা চালাতে দিয়েছিল। সেই চার বছরের মধ্যেও ২০১০ সালে প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো সরকার আমার দেশ বন্ধ করে রেখেছিল। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ছাপাখানা একেবারে স্থায়ীভাবে পুলিশ সিলগালা করে দেওয়ার ফাঁকে আমি বছরখানেকের জন্য প্রথমবারের মতো জেলখানা ঘুরেও এসেছিলাম। জেলে বসে সেই সময়কার জেলজীবন নিয়ে লিখেছিলাম অদ্যাবধি আমার সবচেয়ে পাঠকনন্দিত বইÑ‘জেল থেকে জেলে’। ২০১৩ থেকে ২০১৬-এর একেবারে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার দীর্ঘতর জেলজীবনে লিখেছিলাম ইংরেজি বইÑ‘দি পলিটিক্যাল হিস্ট্রি অব মুসলিম বেঙ্গল’। ২০১৮ সালে আমি নির্বাসনে গেলে বইটি ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সব ধরনের জুলুম করেও শেখ হাসিনা আমার লেখালেখি কিংবা জবান কোনোটাই বন্ধ করতে পারেননি।
২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ফ্যাসিস্ট সরকার পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সময় আমাদের যে সম্পাদকীয় নীতি ছিল, সেই ফ্যাসিবাদ এবং আগ্রাসনবিরোধী নীতি শতভাগ অপরিবর্তিত রেখেই আমার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর আমার দেশ পুনঃপ্রকাশ করেছি। সেই থেকে প্রতিদিন সংবাদ প্রকাশের সময় আমরা নিরপেক্ষ থেকে কেবল সঠিক তথ্য এবং বস্তুনিষ্ঠতার ওপর জোর দিয়েছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া করপোরেট স্বার্থসংশ্লিষ্ট হওয়ায় সেগুলো সর্বদা ‘এস্টাবলিশমেন্ট’কে তোয়াজ করে চলতে অভ্যস্ত।
আমি এখানে ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ বলতে সরকার, বিভিন্ন সময়কালে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দল এবং নানা প্রক্রিয়ায় অতুল বিত্তবৈভবের অধিকারী বড় বিজ্ঞাপনদাতাদের বুঝিয়েছি। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে আমরা মিডিয়াকে দানব শাসকের পায়ের তলায় বিড়ালের মতো গড়াগড়ি দিতে দেখেছি। সব তথাকথিত ‘পেশাদার সম্পাদকের’ দল ঘি-মাখনের ভাণ্ড হাতে নিয়মিত মহারানির দরবারে হাজির হতেন। রাহুল রাহার মতো সাংবাদিক নামধারী তেলবাজরা হাসিনার শয়নকক্ষে গিয়ে গানও শোনাতে চাইতেন। তেল প্রদানকারী এবং গ্রহণকারীরা মিলেমিশে তখন কী সুন্দর দিন কাটাইতেন! এসব পত্রিকা তৎকালীন সরকার এবং দিল্লির প্রভুদের নির্দেশে বিরোধীদল এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে অবিরাম অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালিয়েছে।
জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার অপ্রত্যাশিত পতনের পর এরা কিছুদিন ঘাপটি মেরে থেকে সুযোগমতো নতুন কর্তাদের সঙ্গে লাইনঘাট করে একে একে রাজনৈতিক মালিকদের কোলে গিয়ে উঠেছে। যেসব পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করে তাদের চরিত্র হনন করা হতো, সেসব পত্রিকায় এখন হাসিনার আমলের মতোই তেলবাজি চলছে। অবশ্য তেল-মাখন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের পরিবর্তন হয়েছে। নব্য ক্ষমতাবানরাও তেল-পানিতেই তুষ্ট, তেলবাজদের পিচ্ছিল অতীত দেখার সময় তাদের নেই।
আমি কখনো ওদের মতো বুদ্ধিমান ছিলাম না। তাই সম্ভাব্য বিপদের পরোয়া না করে আগের মতোই স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করে চলেছি। আগামী নির্বাচনে কে বা কারা ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আমাদের সেখান থেকে কী কী সুবিধা মিলতে পারে, সেই চিন্তা করে সম্পাদকীয় নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনিনি। পত্রিকায় শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়ার অবদানকে সর্বদা যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই বলে দলদাসের ভূমিকা গ্রহণ করতে আমরা কোনোকালেই সম্মত ছিলাম না। আমার জন্য খুব সহজ ছিল বিএনপির নীতিনির্ধারকদের খুশি করে আমার দেশকে দলীয় পত্রিকা বানিয়ে ফেলা। তাতে নির্বাচনের পর আমার সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কের সুবাদে বর্তমান তেলবাজদের চেয়ে অনেক বেশি নগদ লাভের সুযোগ ছিল।
দেশের অন্যতম সুশীল পত্রিকার জরিপ থেকে জেনেছি যে, বিএনপির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আমিও মনে করি, জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী বিজয় একেবারে ভূমিধস না হলেও বিএনপিই সরকার গঠন করবে। দুর্ভাগ্যবশত আমি জন্মাবধি একগুঁয়ে। আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে তেল মারার অভ্যাস কখনো রপ্ত করতে পারিনি। এই জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে মাথা নোয়ানো আর সম্ভবও হবে না। ফলে আমার এক সময়কার বিএনপির বন্ধুরা আমার ওপর বেজায় গোসসা করেছেন। দলটির পদলেহনকারী বটবাহিনী নাকি দিবারাত্র আমার পিন্ডি চটকাচ্ছে।
তবে সুবিধার কথা হলো, আমি যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনোদিন ছিলাম না, তাই ওইসব মাসোহারাপ্রাপ্তদের নিন্দাবাক্য আমার কাছে পৌঁছায় না। ওসমান হাদিকে হত্যার পর আমিও ভারতীয় এবং ফ্যাসিস্ট আঁততায়ীদের লক্ষ্যবস্তুতে থাকব সেটা স্বাভাবিক। আশা করছি, আমার প্রতি বিএনপি নেতৃত্বের ঘৃণা একেবারে জানে মেরে ফেলার মতো পর্যায়ে পৌঁছেনি। প্রসঙ্গক্রমে সম্প্রতি শোনা একটি ঘটনার কথা বলিÑ
আমি প্রায় দুই দশক জাতীয়তাবাদী পেশাজীবীদের নেতৃত্ব দিয়েছি। সে সুবাদে সব পেশাজীবীর সঙ্গেই আমার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। দেশের একজন প্রখ্যাত পেশাজীবীর সঙ্গে এই কয়েকদিন আগে দেখা হলে তিনি বললেন, বিএনপির এক প্রবল প্রভাবশালী নেতা আমার কাছ থেকে তাকে দূরে থাকতে বন্ধুসুলভ পরামর্শ দিয়েছেন।
সংবাদটি শুনে আমি বেশ কৌতুক বোধ করেছি। বিএনপির উল্লিখিত নেতাটির উত্থান হয়েছে পেশাজীবী রাজনীতি করে। একসময় তার উপকার করতে গিয়ে দলে সেই ব্যক্তির প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে আমি বিরাগভাজনও হয়েছিলাম। এটাই বাঙালির আদি চরিত্র, যার গল্প শেরেবাংলা অনেক আগেই করে গেছেন। জানা গল্পের আর পুনরাবৃত্তি করলাম না। আমার বর্তমান অবস্থা বহুলাংশে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘আমার কৈফিয়ত’-এর মতো, যেখানে তিনি লিখেছিলেন-
‘কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো, ফের যেন তুই যাস জেলে।’
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা যদি আগামী সরকারের জামানায় সেটাই আমার নিয়তি স্থির করে থাকেন, তবে তা-ই সই। শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ শরীফ ওসমান হাদি জীবন দিয়ে আমাদের পথ দেখিয়ে গেছে। আমরা ভয়কে জয় করতে শিখে গেছি। তবে রাজনীতিবিদদের সব হুমকি, ভারত ও আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী বিজ্ঞাপনদাতাদের অসহযোগিতা এবং নিন্দুকের অন্যায় সমালোচনাকে ছাপিয়ে গেছে পাঠকের অপরিসীম ভালোবাসা। পাঠকরা আমাদের ফিরে আসাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তারা উজাড় করা ভালোবাসার অকৃপণতায় আমাদের সব ধরনের ক্ষতি উসুল করে দিয়েছেন। পুনঃপ্রকাশের বর্ষপূর্তিতে তাই পাঠকদের প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।
ভিন্ন প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে আমার লেখা শেষ করব। এবারের দফায় পত্রিকা চালাতে এসে এমন এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, যার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ২০১৩ সালের এপ্রিলে আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখনকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তখনো অনলাইন এবং ই-পেপার বের করতে হতো। কিন্তু মাল্টিমিডিয়া, বিশেষ করে ইউটিউব এত জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠেনি।
পুরোনো সহকর্মীদের নিয়ে পত্রিকা শুরু প্রসঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাতেই তারা আমাকে জানিয়েছিলেন এই চ্যালেঞ্জের কথা। বুড়ো বয়সে নতুন প্রযুক্তির কথা শুনে বেশ ঘাবড়েও গিয়েছিলাম। তাছাড়া আমাদের তহবিলেরও প্রচণ্ড সংকট ছিল। ইউটিউবের জন্য উপযুক্ত, মনোমুগ্ধকর কনটেন্ট তৈরিতে যেসব যন্ত্রপাতি কিনতে হয়েছিল, তার মূল্যও নিতান্ত কম ছিল না। সব মিলিয়ে আমি অপ্রত্যাশিত অতিরিক্ত ব্যয়ে একপ্রকার নিমরাজি ছিলাম। শেষ পর্যন্ত খুবই সীমিত বাজেটের মধ্যে আমাদের স্টুডিও ইত্যাদি নির্মাণ করতে হয়েছিল।
পত্রিকা প্রকাশের আগেই যখন প্রথম কনটেন্ট তৈরি করা হয়, তখন আমাদের বসারও জায়গা ছিল না। ইন্টেরিয়রের কাজ চলা অবস্থায় ধুলোবালির মধ্যে নেওয়া আমার পাঁচ মিনিটের একটি ইন্টারভিউ ইউটিউবে আপলোড করা হলে ৬০ হাজার ভিউ হতেই আমরা বেজায় খুশি হয়েছিলাম। শূন্য সাবস্ক্রাইবারের অপরিচিত চ্যানেলে ওরকম ভিউ হবে আশা করিনি। ইউটিউবে প্রথম যাত্রার এক মাসের মধ্যে পুনঃপ্রকাশিত আমার দেশ-এর প্রথম দিনের লিড নিউজ, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। ইউটিউবে প্রায় পনেরো মিনিটের কনটেন্টের ভিউ হয়েছিল ৩৬ লাখ, যে রেকর্ড আজ পর্যন্ত ভাঙা সম্ভব হয়নি। ছাপানো পত্রিকার পাশাপাশি আমার দেশ ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলকেও যে পাঠক এবং দর্শকরা এতটা আপন করে নেবেন, সেটা আমাদের সুদূর কল্পনাতেও ছিল না।
এখন অনেক শুভানুধ্যায়ী আমাকে প্রায়ই ফোন করে জানান যে, তারা প্রতিদিন সকালে নাকি ইউটিউবে আমাদের লিড নিউজ প্রচারের অপেক্ষায় থাকেন। আমাদের গরিবের চ্যানেল প্রায় জনপ্রিয় টেলিভিশনের সমকক্ষ হয়ে উঠছে। এসব কথা শুনে আমার সেকেলে মনে এক মিশ্র ভাবের উদয় হয়। একদিকে মনে হয়, এটা তো আনন্দের সংবাদ। কিন্তু সেকেলে মন বলে, ইউটিউব এতটা জনপ্রিয় না হলে আমার ছাপা হওয়া পত্রিকার সার্কুলেশন হয়তো আরো বাড়ত। সব সম্পাদকেরই বোধহয় নিজের পত্রিকার প্রতি এ দুর্বলতাটুকু থাকে।
মোটকথা, যে প্রত্যাশা নিয়ে গত বছর ২২ ডিসেম্বর আমরা পুনঃযাত্রা করেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি খোদা তায়ালা এই এক বছরে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এভাবেই বেহিসাব কল্যাণ প্রদান করেন। এবার বোধহয় আমার অবসরের চিন্তা করা উচিত।