ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম বহু দশক ধরে বাংলাদেশকে হিন্দুদের জন্য বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক টকশো আর সোশ্যাল মিডিয়াতেও একই কাজ করা হয়েছে। তারা বলে, হিন্দুরা শত্রুপ্রবণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই গল্পগুলোই বারবার পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে। এই বয়ানগুলো শক্তিশালী মনে হয়। কারণ গল্পগুলো সাধারণ। কিন্তু এই সাধারণ গল্পের আড়ালেই সাধারণত সত্য লুকানো হয়।
পূর্ব বাংলা থেকে বাঙালি হিন্দুদের অভিবাসন শুরু হয়েছে বহু আগে। পূর্ব বাংলা থেকে পরে পূর্ব পাকিস্তান হয়েছে। এখন এটা বাংলাদেশ। এই গল্পের বহু দিক আছে। শুধু একটা দিককে দোষারোপ করলে হবে না। মাতুয়া সম্প্রদায়কে প্রায়ই ভুল বোঝা হয়। তাদের গল্পকে সাধারণ ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে দেখানোটা ভুল। ১৯৫১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। আজ সেটা ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা বুঝতে হলে আমাদের হিন্দু বর্ণ প্রথা, ঔপনিবেশিক ইতিহাস, দেশ ভাগের সময়ের সহিংসতা, মিডিয়া নিয়ে ভয় এবং দুই পক্ষের রাজনীতিকে বুঝতে হবে।
এই নিবন্ধে আসল কারণগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে। মিথ্যা গল্প আর সস্তা শিরোনামের ঊর্ধ্বে উঠে সত্য উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।
মাতুয়ারা কারা? অর্থডক্সের বাইরের একটি সম্প্রদায়
মাতুয়ারা কি বিচ্ছিন্ন কোনো গোষ্ঠী? হরিচাঁদ ঠাকুর কে ছিলেন? তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক নেতা। তার শিক্ষাগুলো এখনো মাতুয়াদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়। ঠাকুরনগর-ঠাকুরবাড়ি ঘুরে দেখলেই এ বিষয়ে আরো অনেক কিছু জানা যাবে। এটাই তাদের আসল কেন্দ্র।
মাতুয়াদের কাহিনি শুরু হয়েছে ১৮০০-এর দশকে। বাঙালি হিন্দু সমাজের সবচেয়ে নিম্নস্তর থেকে উঠে এসেছে তারা। তাদের ডাকা হতো চণ্ডাল বা নমশূদ্র নামে। তারা ছিল বর্ণপ্রথার সবচেয়ে নিচের স্তরে। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এমনকি তাদের সেবা নিতেও অস্বীকার করত। হরিচাঁদ ঠাকুর সমতা আর শ্রদ্ধা শিখিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণদের কঠোর আইন-কানুন তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অনেকেই মনে করত, মাতুয়ারা শুধু হিন্দুত্ববাদের একটা অংশই ছিল না। বরং ব্রাহ্মণদের নিয়ন্ত্রণ থেকে পালানোর এটা ছিল একটা উপায়।
আজ মাতুয়াদের অনেকেই একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলছেন। ব্রাহ্মণরা যেভাবে বলে, হিন্দু সেভাবে আমাদের ধর্ম নয়। তারা ব্রাহ্মণদের অনুসরণ করে না। বর্ণপ্রথাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিশ্বাস হলো সবাই আসলে সমান।
কিন্তু ভারত আর বাংলাদেশের রাজনীতি তাদের হিন্দুত্ববাদের মধ্যে জোর করে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। নেতারা ভোটের জন্য এগুলো করে। এটা শুধু ধর্মবিশ্বাসের বিষয় নয়। এটা রাজনীতি, সমাজ, জীবন সবকিছুর উপরেই প্রভাব ফেলে।
সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাত নয়, বরং বর্ণপ্রথার উত্তেজনা হলো অভিবাসনের প্রথম কারণ
ভারতীয়দের গল্পগুলোতে সাধারণত বলা হয় যে, মুসলিমরা হিন্দুদের পূর্ব বাংলা থেকে জোর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এটা পুরোপুরি মিথ্যা। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মাতুয়া আর নিম্নবর্ণের অভিবাসনের প্রথমদিকের কারণ ছিল বর্ণবৈষম্য।
ব্রিটিশ শাসনামলে নিম্নবর্ণের মানুষদের তাদের অধিকার সম্পর্কে শেখানো হয়েছিল। তারা মর্যাদা চেয়েছিল। এতে মুসলিমদের চেয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল অনেক বেশি। ব্রিটিশদের দলিলে রয়েছে, দেশভাগেরও বহু আগে বিভিন্ন বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছিল।
১৯০০ শতকের শুরুর দিকে উচ্চবর্ণের নেতারা নিম্নবর্ণকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল। তাদের সাহায্য করার কোনো ইচ্ছা তাদের ছিল না। যখন দেশভাগ হলো, উচ্চবর্ণের হিন্দুরা দ্রুত বাংলা ছেড়ে গেল। তারা জানত যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। মুসলিমদের মতো নিম্নবর্ণের হিন্দুদেরও তারা ভয় পেত। নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তখন সচেতন হতে শুরু করেছে। উচ্চবর্ণ তাদের দমিয়ে রেখেছিল।
অভিজাত শ্রেনিরা চলে যাওয়ার পর নিম্নবর্ণের হিন্দুরা একা হয়ে পড়ে। তাদের কোনো নেতা ছিল না। তাদের ভয় বাড়তে থাকে। এই ভয়ই তাদের অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
দেশ ভাগের দাঙ্গা : জটিল সমীকরণ
একতরফা গল্প নয়
ভারতীয় মিডিয়া ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা নিয়ে কথা বলে। নোয়াখালীর দাঙ্গার কথাও ঘুরেফিরে আসে তাদের কথায়। এটাকে তারা মুসলিম নিষ্ঠুরতা হিসেবে দেখাতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা মিশ্র একটা চিত্র সামনে নিয়ে আসে।
কলকাতায় প্রায় ৫০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। মিডিয়াতে এ জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দায়ী করা হয়। তখন তিনি মেয়র ছিলেন। তাকে কসাই বলে ডাকে তারা। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশের রেকর্ডে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে চার হাজারই ছিল মুসলিম। পুলিশের সদস্যদের বেশিরভাগই ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দু। ব্রিটিশ অফিসাররা তাদের নেতৃত্ব দিত। তাদের উপর সোহরাওয়ার্দীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কিন্তু এই গল্পটাই জিইয়ে রাখা হয়েছে। কারণ এতে তাদের ঘৃণা ছড়াতে সুবিধা হয়।
নোয়াখালীতে ২১৩ জনের মতো হিন্দু নিহত হয়েছিল। এটা ছিল দুঃখজনক ও ভুল। ভারতীয় পত্রিকাগুলোতে এই সংখ্যাটা বাড়িয়ে বলা হয়। তারা পাঞ্জাবের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডকে এড়িয়ে যায়। সেখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছিল।
মানুষ সহিংসতাকে মনে রেখেছে একটা পক্ষপাতদুষ্ট জায়গা থেকে। সেখান থেকেই তাদের অভিবাসনের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে।
ভয়ের ইঞ্জিন গণমাধ্যম : মুসলিম বিদ্বেষের গল্প বানানো হয়েছে এক শতাব্দী ধরে
১৯৩০-এর দশক থেকেই ভারতের বড় বড় সংবাদপত্রগুলো ভয় ছড়িয়েছে। এদের অন্যতম হলো আনন্দবাজার পত্রিকা। অন্যগুলো চালাত মারোয়াড়ি মালিকরা। তারা বলত মুসলিমরা অনেক হিংস্র এবং হিন্দুদের জন্য হুমকি। বিরলা এবং গোয়েনকাদের মতো ধনী মারোয়াড়িরা এসব কাজে অর্থ দিয়েছে। ব্যবসা আর ক্ষমতার জন্য তারা বাংলাকে বিভক্ত করতে চেয়েছিল।
এই ভয় পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের মনে গেঁথে গিয়েছিল। বহু পরিবার কোনো হামলার শিকার না হয়েও দেশ ছেড়েছে। কলকাতার পত্রিকাগুলোর আতঙ্কজনক গল্প পড়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুসলিমদের ব্যাপারে ভয়টা তখন আপনাআপনিই বেড়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল ছিল না।
এমনকি এখনো বহু বাংলাদেশি হিন্দু সেভাবেই ভাবছে। ‘আমাদের আসল বাড়ি ভারতে’। ভারতীয় মিডিয়া এই ধারণাটা চাঙ্গা রেখেছে। সামান্য কোনো সমস্যা হলেই তারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করে।
সমকালীন অভিবাসন : মনস্তাত্ত্বিক সীমান্ত
নির্যাতনের দেয়াল নয়
অনেকে বলছে হিন্দুদের সংখ্যা কমে গেছে মুসলিমদের ঘৃণার কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের শহরগুলোতে জীবনযাত্রা দেখলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
বাংলাদেশে হিন্দুদের শীর্ষ চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সরকারে, স্কুলে, আদালতে, এমনকি কূটনীতিক হিসেবেও কাজ করছে। জনসংখ্যার ৮ শতাংশ হলো হিন্দু। কিন্তু উচ্চ পদগুলোর ২২ থেকে ২৫ শতাংশ পদে তারা কাজ করছে। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা হলো ১৪ শতাংশ। তারা এই ধরনের চাকরি পায় ৫ শতাংশেরও কম।
যখন মন্দিরের ক্ষতি করার চেষ্টা হয়েছে, স্থানীয় মুসলিমরা সেগুলোর সুরক্ষা দিয়েছে। এই ধরনের অপকর্ম করে সাধারণত খারাপ মানুষ ও চরমপন্থিরা। মুসলিম বা সরকারের কেউ এসব করে না। অধিকাংশ মানুষ যদি হিন্দুদের ঘৃণা করত, তাহলে প্রকাশ্যেই হামলা হতো। রাতে গোপনে হতো না।
ভারতের দিকে তাকান। মুসলিমদের উপর হামলা হলে সেখানে খুব কম হিন্দুরাই সাহায্যে এগিয়ে আসে। অধিকাংশই এগুলো এড়িয়ে চলে, অথবা হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ আলাদা।
ভারতে মাতুয়াদের রাজনৈতিক ব্যবহার
: আতঙ্ক দিয়ে ভোটব্যাংক উৎপাদন
বিজেপি কেন বার বার বলে যে বাংলাদেশে মুসলিমরা হিন্দুদের উপর নির্যাতন করছে? এটা বলা হয় নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার জন্য।
পশ্চিমবঙ্গে মাতুয়াদের সম্প্রদায় বেশ বড়। বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। একটা গোষ্ঠী হিসেবে তারা ভোট দেয়। নরেন্দ্র মোদি যখন বাংলাদেশে মাতুয়াদের জায়গাগুলো দেখতে গিয়েছিলেন, সেটা ছিল রাজনীতি। ধর্মবিশ্বাস নয়। পশ্চিমবঙ্গের মাতুয়াদের ভোটের জন্য সেটা করেছিলেন তিনি। সেখানে মমতা ব্যানার্জির দলের বিরুদ্ধে লড়তে হয় বিজেপিকে।
মমতা মুসলিমদের ভোটের উপর নির্ভর করেন। বিজেপির পরিকল্পনা সেখানে স্পষ্ট।
১. বাংলাদেশকে হিন্দুদের জন্য অনিরাপদ হিসেবে তুলে ধরা।
২. হিন্দুদের রক্ষক হিসেবে ভূমিকা রাখা।
৩. নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মন জেতা। অথচ বিজেপি এর আগে তাদের অগ্রাহ্য করেছিল।
৪. মাতুয়াদের উদ্বেগকে ভোটে রূপ দেওয়া।
এই খেলায় বাংলাদেশের হিন্দুদের জীবন আসলে কোনো বিবেচ্য নয়। কিন্তু তাদের নিয়ে যে গল্পটা ফাঁদা হচ্ছে, সেটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মীয় সংগঠন, বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
মাতুয়া আর ইসকন গ্রুপ ভারত থেকে সাহায্য পায়। কেউ কেউ বাংলাদেশে ক্ষমতা পেতে চায়। তাদের স্থানীয়দের সমর্থন দরকার। আওয়ামী লীগের একাংশ তাদের সাহায্য করেছে। এই গোষ্ঠীগুলোকে তারা ভোটার হিসেবে দেখেছে।
ভারত, ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং আওয়ামী লীগ মিলেমিশে গেছে। অভিবাসনের গল্পটাকে তারা নিজেদের রাজনৈতিক অর্জনে কাজে লাগায়। সত্যটা এখানে গৌণ।
হিন্দু অভিবাসনের ৭৫ বছর : বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা
প্রথম কারণ : হিন্দু সমাজের মধ্যে বর্ণবৈষম্য
নিম্নবর্ণের হিন্দুদের অন্য হিন্দুদের ঘৃণার মুখোমুখি হতে হয়। এটা তাদের দুর্বল করে। তারা অধিকারের জন্য লড়তে পারে না।
দ্বিতীয় কারণ : হিন্দুদের প্রতি হুমকির মিডিয়া বয়ান
ভারতে যে সব নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, সেগুলোর কারণে হিন্দুরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করে। তারাও হামলার শিকার হওয়ার ভয়ে থাকে। অনেকেই পালিয়ে যায়।
তৃতীয় কারণ : রাজনীতি
ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে দেশভাগ ও স্বাধীনতার সময়টাতে ক্ষমতা বদলে গেছে। এটা পুরোনো ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছে।
চতুর্থ কারণ : ভারতের প্রতি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতি আকর্ষণ
ভারত হিন্দুদের জন্য ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়। হিন্দুরা সে কারণে সেখানে যেতে আগ্রহী হয়।
পঞ্চম কারণ : চেইন অভিবাসন ও পারিবারিক বাধ্যবাধকতা
পরিবারের কেউ ভারত চলে গেলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে। পরিবার হিসেবে একসঙ্গে থাকতে চায় তারা।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে, ধর্মীয় হামলা হয়েছে। সহিংসতাও ঘটেছে। পাকিস্তানও কখনো কখনো বৈষম্য করেছে। কিন্তু সব মুসলিমদের এই বৈষম্যের কারণ হিসেবে তুলে ধরাটা পরিষ্কার মিথ্যা।
অভিবাসনের নানা কারণ রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, ভয়, অর্থ, রাজনীতি, আরো অনেক কিছু সেখানে মিলেমিশে গেছে।
বিলুপ্তির বয়ানটা কেন টিকে আছে
বিজেপি বলে আসছে বাংলাদেশের হিন্দুরা শিগগিরই নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারা বলে দেশভাগের সময় যে জনসংখ্যা ছিল ২৭ শতাংশ, তারা এখন ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তারা এজন্য নির্যাতনকে দায়ী করে।
সংখ্যাটা ভুল কারণটাও আরো খারাপ
এই গল্পটা বিজেপিকে তাদের স্বপ্নের ভারত নির্মাণে সাহায্য করে। সিএএ’র মতো আইন করা তাদের জন্য সহজ হয়। তারা এমন একটা গল্প তৈরি করে, যেখানে মুসলিমরা থাকবে না, কিন্তু হিন্দুরা থাকবে নিরাপদ। বাংলাদেশকে তারা খারাপ মুসলিম দেশ হিসেবে তুলে ধরে।
কিন্তু হিন্দুরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী। সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি শীর্ষ চাকরিতে আছে তারা। আইন ও সমাজ থেকে তারা সাহায্য পায়।
শেষ কথা : আরো ন্যায্য বয়ানের পথে
বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের অভিবাসনের গল্পটা সাদামাটা নয়। এখানে বর্ণবৈষম্য, মানসিক ভয়, রাজনৈতিক নেতাদের খেলা, উন্নত জীবনের আশা এবং পুরোনো যন্ত্রণাÑ সব মিলেমিশে আছে। সব ইস্যুই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলো বিকৃত করাটা অন্যায়। মাতুয়াদের কাহিনি দেখিয়েছে রাজনীতি কীভাবে দুর্বল গল্গগুলোকে ব্যবহার করছে। হরিচাঁদ ঠাকুর বর্ণপ্রথা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। বড় খেলার হাতিয়ার হতে চায়নি তারা।
হিন্দুদের অভিবাসনের গল্পটা যত্ন নিয়ে বলতে হবে। ভারতীয় মিডিয়ার গসিপ অগ্রাহ্য করতে হবে। নেতাদের ভুয়া ক্ষোভ এড়িয়ে চলতে হবে। মুসলিমদের সহজ টার্গেট করা বন্ধ করতে হবে।
ইতিহাস কঠিন বিষয়। অভিবাসনও অনেক কঠিন। বিভিন্ন গোষ্ঠীর ইতিহাসও সহজ নয়। সত্য জানতে হলে তাই এই একই কঠিন যত্নের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে।