গত ৬ ডিসেম্বর শনিবার ছিল সেনাশাসক জেনারেল এরশাদের পতনের দিন। ১৯৯০ সালের এই দিনে গণঅভ্যুত্থানের মুখে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন এবং তার ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের প্রাণভোমরা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কাতারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানির একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তৈরি আছে। মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেত পেলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের পথে আকাশে উড়বে। তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও খুব সংকটাপন্ন। চিকিৎসকদের ভাষায়—তিনি এখন ‘কোমায়’ রয়েছেন। এ অবস্থায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বিমানযাত্রা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
নব্বইয়ের দশক ছিল খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থানের দশক। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছর রাজপথে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনই তাকে এনে দিয়েছিল ‘আপসহীন নেত্রী’র মুকুট। তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের ফলেই এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করেন। জনগণের কাছে তিনি পান ‘দেশনেত্রী’ পরিচয়ের মর্যাদা।
দেশের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর একজন সাধারণ গৃহবধূ হিসেবে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হয়ে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৩ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, নব্বইয়ের ৬ ডিসেম্বর তার পতন ঘটিয়ে শেষ করেন সেই সংগ্রাম। এ সংগ্রামে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন বারবার। অন্তত সাতবার তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। টিয়ার গ্যাসের শেল এসে পড়েছে তার শরীরে। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজালো ধোঁয়া ছুড়ে মারা হয়েছে তার চোখে-মুখে। লাঠিপেটার নির্মম আঘাতে আহত হয়েছেন তিনি। তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে বাসভবনে। কিন্তু আন্দোলন থেকে তাকে টলানো যায়নি। তিনি দমেননি। এক মুহূর্তের জন্যও রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে যাননি।
খালেদা জিয়ার আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য জেনারেল এরশাদ একের পর এক ফন্দিফিকির করেছেন। দেশব্যাপী ছয় বছর সামরিক শাসন জারি ছিল। এরশাদ দেশে তিনবার জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। কারফিউ জারি করে দিনের পর দিন জনগণকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। ১৪৪ ধারা তো হরহামেশাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজপথের আন্দোলনে হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে এরশাদের ক্ষমতার মসনদ তাসের ঘরের মতো উড়ে যায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর বিজয়ী খালেদা জিয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘৯ বছরের সংগ্রামের সাফল্য আমার মনকে যুগপৎ দুঃখ-বেদনা এবং আনন্দে আপ্লুত করে তোলে। আপসহীন এই সংগ্রামে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ চিরদিনের জন্য আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সংগ্রামের এই দুঃখময় দিনগুলোর দিকে যখন তাকাই, তখন আমার মন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আবার সংগ্রামের সাফল্যে আমি আনন্দিত এ কারণে যে, দীর্ঘ আন্দোলনের কোনো পর্যায়েই আমরা আত্মসমর্পণ করিনি। কোনো নির্বাচনে অংশ নিইনি। এরশাদের সামরিক শাসনকে বৈধতা দিইনি। স্বৈরশাসনের ব্যাপারে কোনো আপস করিনি। আমাদের আপসহীন সংগ্রামই স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছে। এরশাদের স্বৈরশাসনের এই বিজয় দেশের সমগ্র জনগণের বিজয়।’
আপসহীন নেত্রী উপাধি পাওয়ার প্রেক্ষাপট
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ বন্দুকের নলের মুখে বঙ্গভবনে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। দেশব্যাপী জারি করেন সামরিক শাসন। সামরিক শাসনের পরপরই খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমবার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জনসমাবেশে বক্তব্য দেন। ১৯৮৪ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠন করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন বেগবান করেন।
এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনামলে পাঁচবার সংসদ নির্বাচন, তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তিনবার উপজেলা নির্বাচন, একবার গণভোট এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দেন। খালেদা জিয়া প্রতিবারই এরশাদের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। এরশাদ দেশে কেনাবেচার রাজনীতি শুরু করেন। দল ভাঙেন, জোট ভাঙেন। বিএনপি থেকে একের পর এক নেতা ভাগিয়ে নেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনে নিতে সক্ষম হন। কিন্তু পারেননি শুধু খালেদা জিয়াকে। এ সময় তার নেতারা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়লে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা চাইলে এখানে, ঠিক এখানে এসে হাজির হবে। কিন্তু ক্ষমতা নয়, সংগ্রাম। জনগণ আমাদের পাশে আছে। ইনশাআল্লাহ আমরাই বিজয়ী হবো।’ এরপর তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া সারা দেশে তিন হাজারেরও বেশি জনসভায় বক্তৃতা করেন।
১৯৮৬ সালের ১৭ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শেখ মুজিবের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘পাঁচ দফা পাশ কাটিয়ে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা হবে জাতীয় বেঈমান।’ অথচ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজেই জাতীয় বেঈমানে পরিণত হন। তার এই সিদ্ধান্তে ১৫ দল থেকে ৫ দল বেরিয়ে যায়। ১৯৮৬ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে ৭ মে এরশাদ নির্বাচনটি করেন। কিন্তু নির্বাচনে শেখ হাসিনার মোহ ভঙ্গ হয়। আশানুরূপ ফল তার হয়নি। তিনি ওই নির্বাচন ভোট ডাকাতির নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন। আর তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামী আবার নির্বাচন দাবি করে। এদিকে খালেদা জিয়া সাত দল ও পাঁচ দলকে নিয়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যার ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ও জামায়াতে ইসলামীকে আবার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে হয়েছে। তখন থেকেই তিনি আপসহীন নেত্রী।
পূর্বাণী হোটেল থেকে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার
১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে পূর্বাণী হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘এরশাদ হটাও’ এক দফা আন্দোলন বেপরোয়া গতি লাভ করে। তিনি তার নেতৃত্বাধীন সাত দল ছাড়াও আট দল ও পাঁচ দলকে নিয়ে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ১০ নভেম্বর নূর হোসেনসহ চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নূর হোসেনের উন্মুক্ত বুকে পিঠে লেখা ছিল—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। এর প্রতিবাদে ১১ ও ১২ নভেম্বর দেশব্যাপী হরতাল ডাকা হয়। খালেদা জিয়া রাজপথের কর্মসূচিতে জনগণের সঙ্গে অংশ নেওয়া এবং আন্দোলন সমন্বয় ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাতে পূর্বাণী হোটেলে অবস্থান নেন। কিন্তু ১১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় হঠাৎ হোটেল পূর্বাণীর প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে শত শত পুলিশ হোটেলটি কর্ডন করে ফেলে। পুলিশ হোটেলে প্রবেশ করে আটতলায় খালেদা জিয়ার স্যুটের দরজা খোলার চেষ্টা করে। ভেতর থেকে দরজা ‘বোল্ট’ করে দেওয়ায় বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে তিনজন রায়ট পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ফেলে। এ সময় খালেদা জিয়া বেডরুমের সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপি নেত্রী অধ্যাপক জাহানারা বেগম। এই পর্যায়ে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নসরুল্লাহ খান কক্ষে ঢুকে বেগম জিয়াকে বাইরে আসতে বলেন। খালেদা জিয়া কারণ জানতে চাইলে নসরুল্লাহ খান বলেন, ‘ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট’—আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেগম জিয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চাইলে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। তখন নসরুল্লাহ খান তাকে বাইরে নিয়ে আসতে মহিলা পুলিশদের নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়া ব্যাগ গুছিয়ে বাইরে আসেন। আগে থেকে ‘স্ট্যান্ড বাই লিফটে’ তাকে আটতলা থেকে নামিয়ে আনা হয়। লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ শত শত সাংবাদিককে খালেদা জিয়া তখন বলেন, ‘বেআইনি ও অগণতান্ত্রিকভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
জিপে তোলার আগে তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘এরশাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সব ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’ তিনি সর্বস্তরের জনগণকে আন্দোলন আরো বেগবান করার আহ্বান জানান। চলন্ত জিপ থেকে তিনি রাস্তার দুপাশে জড়ো হওয়া জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। এ সময় মহিলা পুলিশ তাকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। তার জিপের আগে-পিছে পুলিশের আরো সাতটি লরি ছিল। দেশি-বিদেশি কয়েকশ সাংবাদিকের বিরাট মোটরবহর তাকে অনুসরণ করে গুলশান থানায় যায়। গুলশান থানা থেকে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি জিপ থেকে নেমে পড়েন। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়া পুলিশকে বলেন, আমাকে এভাবে হয়রানি করছেন কেন? গ্রেপ্তার করে থাকলে জেলে নিয়ে যান। মহিলা পুলিশ তার পথ আগলে আবার তাকে জিপে তুলে বাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে।
খালেদা জিয়ার বিনয়ে মুগ্ধ নসরুল্লাহ খান
আগেই উল্লেখ করেছি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) এএমএম নসরুল্লাহ খান ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে পূর্বাণী হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। অনুতপ্ত ডিএমপি কমিশনার নসরুল্লাহ খান একদিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। খালেদা জিয়া নসরুল্লাহ খানকে একজন সৎ এবং দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে জানতেন। তিনি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলেন, দেশের প্রতি তো আপনার কমিটমেন্ট আছে। সেদিন আপনি সরকারি আদেশ পালন করেছিলেন। তিনি নসরুল্লাহ খানকে তার পেশাদারিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেন। খালেদা জিয়ার এই বিনয়ী ব্যবহারে সেদিন মুগ্ধ হন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নসরুল্লাহ খান। পরে তিনি পর্যটন করপোরেশনের প্রধান হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এ সময়ে সাবেক ডিএমপি কমিশনার নসরুল্লাহ খানের অনুভূতি জানার চেষ্টা করা হয়। তিনি চট্টগ্রামের বাসায় থাকতেন। তার বাসার ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানার জন্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আল্লাহ বকস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নসরুল্লাহ খান এখন অসুস্থ। ঢাকায় ছেলের বাসায় থাকেন এবং চিকিৎসাধীন। কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি নেই।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল হক
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মরহুম আমিনুল হক আইন অঙ্গনে একজন অত্যন্ত সম্মানিত আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জেনারেল এরশাদের পতনের পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি অ্যাডভোকেট আমিনুল হককে অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে বহাল রাখেন। আমিনুল হক আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা জানিয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তাকে বলেন, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকলে আপনার পদত্যাগের প্রয়োজন নেই, রাষ্ট্রের কাজে আপনি দায়িত্ব চালিয়ে যান। সেদিন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আমিনুল হক খালেদা জিয়ার এ সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছিলেন। এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলাগুলো তিনি দেখাশোনা করেন। ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ
Abdal62@gmail.com