হোম > মতামত

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শঙ্কা

আবদুল লতিফ মাসুম

‘নিরাপত্তা’ শব্দটির অর্থ হলো সম্ভাব্য ক্ষতি, হুমকি বা অনাকাঙ্ক্ষিত জবরদস্তি থেকে সুরক্ষা বা প্রতিরোধ ক্ষমতা। নিরাপত্তার ধারণাটি ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনায় নিরাপত্তা বিষয়টি ছিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সীমিত। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী—এসব বাহিনী ঘিরেই ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়—একটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অপরটি বহিঃস্থ নিরাপত্তা। বহিঃস্থ নিরাপত্তার বিষয়টি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি ও নানা বিষয়ের ব্যাপ্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বহুমুখী কার্যক্রমে বিভক্ত করেছে। আজকের পৃথিবীতে শারীরিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডিজিটাল সুরক্ষা, এমনকি আর্থিক স্থিতিশীলতা নিরাপত্তা ধারণার অন্তর্গত। প্রতিটি রাষ্ট্রের বহিঃশত্রুকে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য প্রতিরক্ষা শিরোনামে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র যেহেতু শক্তি প্রয়োগের একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা, সেজন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি দিন দিন গুরুত্ব অর্জন করছে। বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তি বিকাশের পর বহিঃস্থ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি একাকার হয়ে গেছে। এখন নানা অভিধায় ও নানা অভিপ্রায়ে নিরাপত্তার বিষয়টি বহুমুখী ব্যাপ্তি অর্জন করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা শব্দটি নতুন সমস্যা ও নতুন ব্যঞ্জনা নিয়ে আধুনিক বিশ্বকে তাড়িত করছে। যখনই জাতীয় নিরাপত্তা শব্দটি উচ্চারিত হয়, তখন সামগ্রিকভাবে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ নিরাপত্তাকে একই বলয়ে একই বৃত্তে ব্যাখ্যা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা এখন নানা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত—শারীরিক নিরাপত্তা (Physical Security), আর্থিক নিরাপত্তা (Financial Security), তথ্য নিরাপত্তা (Information Security), সমন্বিত নিরাপত্তা (Corporate Security) এবং সাইবার নিরাপত্তা (Cyber Security) ইত্যাদি। এমনকি নাগরিক সাধারণের মানসিক নিরাপত্তার (Emotional Security) বিষয়টিও আজকের বিশ্বে আলোচ্য বিষয়।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অবশ্যই এতসব নিরাপত্তার ধারণা ও বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। নিরাপত্তার ধারণার সঙ্গে রাষ্ট্রের অবস্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক নিরাপত্তার (Geo-Politics) ধারণা দ্বারা এসব বিষয় আজকাল ব্যাখ্যা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাটির সঙ্গে এই ভৌগোলিক নিরাপত্তার ধারণাটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি দেশ ও জাতির অবস্থান ভৌগোলিকভাবে বা কৌশলগতভাবে যদি তাৎপর্যপূর্ণ হয়, তাহলে সেটি তার জাতীয় নিরাপত্তা তথা প্রতিরক্ষা ধারণাকে অপরিহার্যভাবে সম্পর্কিত করে। ভারত মহাসাগরে সিঙ্গাপুরের অবস্থান এটিকে অপরিহার্যভাবে মহাসাগরীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত করেছে। সুয়েজ খাল ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংযোগ পথ হওয়ার কারণে গোটা বিশ্বে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রবেশপথ আরব উপদ্বীপ ও ইরানের মাঝখানের সরু জলপথ হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম ভৌগোলিক কৌশলগত জলপথ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব গোলার্ধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ার কারণে পৃথিবীর কোনো যুদ্ধই তাকে স্পর্শ করেনি। বাংলাদেশকে বলা হয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধ বা ব্রিজ। বাংলাদেশের অবস্থান ভারত মহাদেশ, যা বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া নামে কথিত, সে অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে। অপরদিকে বিপুল বিস্তৃত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে এর অবস্থান হওয়ায় দু অঞ্চলের মধ্যে সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ কথিত হতে পারে। বিশেষত বঙ্গোপসাগরজুড়ে আমাদের উপকূল হওয়ায় বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই সাম্প্রতিককালে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা বলয়ে বাংলাদেশের কদর বেড়ে গেছে। পরাশক্তিগুলো দৃশ্যমানভাবে না হলেও অদৃশ্যমানভাবে বিষয়টি নিয়ে নীরব প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। এই ভূ-অবস্থানটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে সন্দেহ নেই। সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রকারান্তরে অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিল্লুর আর খান তার একটি গ্রন্থের উপশিরোনাম দিয়েছিলেন ‘Crisis to Crisis’। অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও আমরা যেন সংকট থেকে সংকটে অবতীর্ণ হচ্ছি। এই সময়টায় যখন বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ বিপ্লব-উত্তীর্ণ সময় অতিক্রান্ত করছে, প্রতিবেশীর খড়্‌গ কৃপাণ ভীম বাংলাদেশকে ভীতি প্রদর্শন করছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির মুখোমুখি অবস্থান করছে, তখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রীতিমতো শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন। একই সময় অভ্যন্তরীণ শান্তি, স্বস্তি ও শৃঙ্খলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, গোটা জাতি একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশের অতিক্রান্ত এখনকার সময় সম্পর্কে যদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে সন্ত্রাসীরা যেন এই সময়টিকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যত্র একটির পর একটি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা লক্ষ করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবলতা এই যে এটি ব্যাপকভাবে সাধারণ জনসমর্থনপুষ্ট, অপরদিকে সন্ত্রাসীদের কাছে এই সরকারের দুর্বলতা এই যে, এটি বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের আচরণদুষ্ট। এই সরকার যেহেতু একটি রাজনৈতিক সরকার নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীরা তাদের জন্য সময়-কালকে অভয় ও অসীম মনে করছে। অস্বীকার করে লাভ নেই যে, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। পুলিশ তাদের নিজেদের কুকীর্তির কারণে জনরোষের সম্মুখীন হয়। পুলিশ ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ বাহিনীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি। পুলিশ তথা প্রশাসনে যারা ফৌজদারি অপরাধ করেনি, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ধরনের কিছু করা যেত হয়তো, আর বাড়তি জনশক্তি সংগ্রহ করতে তারা ছিল দ্বিধান্বিত। ফলে পরিপূর্ণভাবে সক্ষমতা ফিরে না এলেও মোটামুটি এখন পুলিশ বাহিনী আবার কার্যকর হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে একটা সংকট হলো বিগত সরকারের দলবাজির নমুনা এতই তাদের প্রভাবান্বিত করেছে যে একটি সম্ভাব্য সরকারের আনুকূল্য বা তোষণ পাওয়ার জন্য তারা যেখানে যে দল প্রবল, সেখানে তাদের সঙ্গে সে রকম আচরণ করছে। পুলিশ বাহিনীতে বা প্রশাসনে যে পচন ধরেছে বা যে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা লালিত হয়েছে, তা সহজে দূর করা কঠিন। ভবিষ্যৎ সরকার যে দলেরই হোক না কেন যদি তারা পূর্ণ পেশাদারত্ব অর্জনের সুযোগ না দেয়, তাহলে পরে পুলিশের দৌরাত্ম্য কোনো ক্রমেই কোনো কালেই কমে আসবে না।

একটি রাজনৈতিক সরকারের অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ আশা করা যায়, কিন্তু ভরসা করা যায় না। কারণ বাংলাদেশ জনগোষ্ঠী অতিমাত্রিকভাবে রাজনীতিপ্রবণ। এই দেশে সুস্থ ধারার সহনশীল রাজনৈতিক জনশক্তি গড়ে না উঠলেও মিটিং-মিছিল ও দাঙ্গার জন্য অপজনশক্তির অভাব হয় না। এটাকে বলা যায় ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো। একটি সুন্দর সহনশীল ও আপসকামী রাজনৈতিক কর্মিবাহিনী গড়ে না উঠে হয়েছে তার উল্টোটি। রাজনৈতিক দলগুলো এখন এবং তখন সবসময়ই উগ্র মাত্রার রাজনৈতিক আচরণ উৎসাহিত করে আসছে। অপর পক্ষকে পিটিয়ে দেওয়ার জন্য কখনোই রাজনৈতিক নেতারা নিজ দলের কর্মী বা নেতৃত্বের নিন্দা করেনি। বরং আমার মনে আছে, চট্টগ্রামের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পতিত স্বৈরাচার সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও সংঘর্ষ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যে দল যেখানে শক্তিশালী, তারা শক্তির জানান দিতে ভুল করছে না। আরো বিপজ্জনক হচ্ছে নিজেদের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা। প্রাধান্য বিস্তারের জন্য বা ব্যক্তির পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য এসব ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক দলগুলো যে এসব ঘটনায় বিব্রত হচ্ছে না, তা নয়। কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা সত্ত্বেও এটা যেন কালচারে পরিণত হয়েছে। কেউ কাউকে পরোয়া করছে না। রাজনৈতিক নেতারা কখনো কখনো এমন সব ভাষা প্রয়োগ করেন, যা সংঘাত উসকে দেওয়ার শামিল হয়ে দাঁড়ায়। আশার কথা যে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। তবে তৃতীয় সারির তৃতীয় মাত্রার নেতা ও কর্মীরা এই দুর্যোগ ডেকে আনছে।

মানুষ হিসেবে আমরা যে ভালো নই, তা কী করে অস্বীকার করব। আমাদের জনমনস্তত্ত্বে সমস্যা আছে। প্রাচীনকালে ইবনে বতুতা আমাদের সম্পর্কে ভালো বলে যাননি। বর্তমানে একজন আকবর আলি খান বাংলাদেশের জনগণের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নিরেট সত্য কথা বলেছেন। আমাদের লোকেরা আওয়ামী লীগের সৌজন্যে বিগত ১৫ বছরে যে বেপরোয়া মনোভাবের দীক্ষা পেয়েছে, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতকারীর যে প্রশিক্ষণ পেয়েছে, তাতে সমগ্র জাতি একরকম একটি ধসের মধ্যে আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সৎ। এই মানুষেরাই আবার স্বার্থের জন্য আর সুবিধার জন্য দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। সমাজে যেসব চোরচোট্টা, গুন্ডাপান্ডা, বাটপাড়-বদমাইশ রয়েছে, তারা বিগত আন্দোলনের সুবাদে মুক্ত হয়েছে। জেল ভেঙে পালানো দুষ্কৃতকারীদের সংখ্যাও কম নয়। সেসময় অনেক অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল। সেগুলোও পরিপূর্ণভাবে উদ্ধার করা হয়নি। সুতরাং নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তের দিনগুলো যে নিরাপদ হবে, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। গোটা দেশ যেন একটি সন্ত্রাস সংস্কৃতির কবলে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে নৈতিক কথা, কার্যক্রম ও ব্যবস্থা দরকার, তা সরকার ও রাজনৈতিক দলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

সবচাইতে বড় সমস্যা ঘরের শত্রু বিভীষণ। পতিত স্বৈরাচার এখনো ওপারে বসে কলকাঠি নাড়ছে। এই সেদিন তারা তথাকথিত লকডাউন বা শাটডাউনের কথা বলেছে। জনসমক্ষে অগ্রসর হয়ে খোলাভাবে রাজনীতি করার সাহস ও অবস্থা তাদের নেই। বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসে আগুন দেওয়ার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা পরিচালনা করছে। এখনো যেখানে যেখানে তাদের অবস্থান শক্ত, সেসব জায়গায় তারা আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, তারা পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কলকাতায় সমবেত এসব নেতা অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার ফলে তারা জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলের কাঁধে সওয়ার হওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল অনুমান করে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে আওয়ামী সন্ত্রাসী তৎপরতা তত বেড়ে যাবে। যেহেতু তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে, সেজন্য সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করাই তাদের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়াবে।

নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিশ্চয়তা বিধান সবচেয়ে জরুরি। সরকার সেনা, বিডিআর ও পুলিশ মোতায়েনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি যথার্থ। আট দিনে আটটি বিভাগে নির্বাচন হওয়ার যে প্রস্তাব কোনো কোনো মহল থেকে দেওয়া হয়েছে, তাও যথার্থ। কারণ আমাদের দেশটি আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যায় অনেক বড়। সুতরাং ভোটটি যাতে মানুষ নিরাপদে দিতে পারে, সে ব্যবস্থা এভাবেই সম্ভব। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলো যেমন রাজনীতির নিয়ামক, ঠিক একইভাবে তারা অরাজনীতিরও নিয়ামক। জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্র দখল, নীরবে ব্যালট পেপারে সিল এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ও শক্তির বিনিময়ে হাত করে নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে সচরাচর ঘটে। সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা প্রবল। এই প্রবণতার মোকাবিলা করার জন্য প্রচারণাও দরকার।

সরকারের গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক করণের জন্য কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। গোটা প্রশাসন ব্যবস্থা ও সরকারের সব কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি নৈতিক আন্দোলন সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার শঙ্কা এখানেই শেষ নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে দুর্যোগ আমাদের নিত্যসাথি। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে বারবার ভূমিকম্প শান্তি-শৃঙ্খলার বাইরে আরেকটি ভীতির কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। প্রতি বছর উপকূলে প্লাবন ও অন্যত্র বন্যার পানি আমাদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয়। দুর্যোগ ও দুর্ভোগের এই দেশে জনগণের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও সংযম আমাদের পাথেয়।

লেখক: রাজনীতি বিশ্বেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বৈরশাসকদের প্রতি নয়াদিল্লির সমর্থন

যুদ্ধের নীরব অস্ত্র যৌন নিপীড়ন

ভূমিকম্পে সতর্কতা ও করণীয়

ভূমিকম্পের মাত্রা যদি আরেকটু বেশি হতো!

পাহাড়ে নতুন ষড়যন্ত্র

বিনোদনের বিপ্লব ও জেন-জি সংস্কৃতি

বামপন্থা ও স্বৈরাচার

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব?

রুনা লায়লা : এক সুরলোকে যাওয়ার দরজা

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ও ভারতের দ্বিধা