এক বিশেষ পরিস্থিতিতে গত বছর আগস্টে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর একসময় হতাশা ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘যেখানে হাত দিই, সেখানেই ভেজাল।’ তিনি উল্লেখ করেছেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব জেলায় একটি করে এবং কিছু জেলায় একাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা দোষের কিছু নয়, কিন্তু আসল সমস্যা হলো এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা, শিক্ষা ও উন্নয়নের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষালাভের সুযোগ দেওয়া। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও, ছোট্ট এই দেশে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দেশের অর্থনীতি এবং টেকসই শিক্ষাগত উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন, সৃষ্টিশীল এবং উদ্ভাবনী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি এবং সেগুলো পরিচালনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ১৬ বছরে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় দলীয়-ক্যাডার নিয়োগের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের মতে, এ সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে ‘ভোটার’ নিয়োগ দেওয়া হতো। (প্রথম আলো, ২৩ জুন ২০২৫)
জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠিত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্রের সংখ্যা অত্যন্ত কম হলেও, সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রশাসনিক পদধারীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বহন করতে হয়, যা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ বলে অনেকে মনে করেন। দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক, অবকাঠামো ও আবাসিক সুবিধা, গবেষণার সুযোগ এবং প্রকাশনার জন্য কোনো বিশ্বমানের জার্নাল সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রম যথাযথভাবে কার্যকর করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বিদ্যমান। এসব কারণে দেশের বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় কার্যক্রমে ব্যাপক অর্থায়ন করলেও প্রযুক্তি বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখান না। দেশে ‘ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি’ সহযোগিতার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমাবদ্ধতা ব্যাপক। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেই এবং তারা শুধু সরকারি বাজেটের ওপর নির্ভরশীল হতে চায়। দেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এত বেশি যে, সেগুলোর জন্য ‘যোগ্য’ উপাচার্য খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। (সমকাল, ২১ জুন ২০২৫) যোগ্য লোকের অভাব শুধু ভিসির ক্ষেত্রেই নয়, বরং জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্য কর্মী পেতে ইন্ডাস্ট্রিগুলো হিমশিম খাচ্ছে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে অনেক বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছেন বলে পত্রিকার খবর দেখা যায়।
সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। (দৈনিক শিক্ষাডটকম, ২২ জুন, ২০২৫) এদের মধ্যে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা যেমন আছেন, তেমনি জেলায় জেলায় গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও পিছিয়ে নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (নতুন নাম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (নতুন নাম গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (নতুন নাম গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। এতে বোঝা যায়, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শিক্ষার গুণগত উন্নতির পরিবর্তে কিছু ব্যক্তির ‘মোটা-তাজাকরণ’ প্রকল্পে পরিণত হয়েছিল।
দুর্নীতির পাশাপাশি, এদেশে ভিসিদের ক্ষমতাচর্চার সুযোগ অত্যধিক। ২০০৮ সালের শুরুতে ইউরোপ থেকে দুটি উচ্চতর ডিগ্রি শেষ করে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ কর্মস্থলে যোগ দিলে একজন সহকর্মী বলেছিলেন, “দ্রুত ভিসি স্যারকে ‘সালাম’ দিয়ে আসুন।” যথারীতি ভিসির সেক্রেটারির সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে পরের দিন সকালে ভিসি-অফিসে গিয়ে সেক্রেটারি সাহেবের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। ইতোমধ্যে দেখলাম, বহু ‘ছাত্র-নেতা’, ‘শিক্ষক-নেতা’ ও অফিসার ভিসির রুমে প্রবেশ করছেন এবং বের হচ্ছেন, কিন্তু আমি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছিলাম না। অফিসের সময় শেষ হলে সেক্রেটারি সাহেব বললেন, “আজ অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ লোকের সঙ্গে স্যারের মিটিং ছিল। ভিসি স্যার বাসায় চলে গেছেন। আপনার সঙ্গে আজ আর দেখা হবে না, সময় করে আরেক দিন আসেন, স্যার!” সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, ‘সাধারণ পাবলিকের’ শুধু ডিসি অফিসে নয়, ভিসি অফিসে প্রবেশও কতটা কঠিন!
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা নতুন জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি দিয়ে নিজ নিজ দেশের উন্নয়নে সহায়তা ও সরকারের কার্যক্রমের গতি, দক্ষতা এবং উদ্ভাবন কাজে উদ্দীপক ভূমিকা রাখছে। তবে আমাদের দেশে সুযোগের অভাবে বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অনেক মেধাবী বাংলাদেশি বিগত দিনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন । খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বিদেশে আনাচে-কানাচে অসংখ্য মেধাবী বাংলাদেশি আছেন, সেই মেধাগুলো ইউটিলাইজ করতে পারলে রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে উপকৃত হতো। এদিকে বিদেশে প্রশিক্ষিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক কিছু অভিজ্ঞ প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে এনে তার প্রশাসনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগের কারণে। আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রফেসর ইউনূস যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন প্রশাসনে যোগ্য অথচ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খুঁজতে গিয়ে তার সামনে বেশি বিকল্প ছিল না। আগস্ট অভ্যুত্থানে দেশের যুবসমাজের অবদান এবং প্রবাসীদের বিদেশি শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকে প্রফেসর ইউনূস তার রাষ্ট্র পরিচালনায় দুটি ‘নতুন’ বিষয় যুক্ত করেন : একটি হলো জেনারেশন-জি (জেন-জেড) বা যুবসমাজের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং অন্যটি হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচিত ও অভিজ্ঞ প্রবাসীদের তার প্রশাসনে যুক্ত করা; কিন্তু ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে অভিজ্ঞ প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রশাসনে অন্তর্ভুক্তিকে একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছেন এবং তাদের কারো কারো পদত্যাগও দাবি করছেন । উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও সংস্কার নিয়ে যখন ইউনূস সরকার এবং বিএনপির মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলছিল, তখন বিএনপি অনেক সিনিয়র নেতা বিশেষ করে মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছিলেন, বর্তমান সরকার ‘সংস্কার’ করতে গিয়ে ‘বিদেশি আমদানি’ শুরু করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেছিলেন, ‘শহীদ জিয়া বহু সংস্কার করেছিলেন, কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেনি। (বিডিনিউজ২৪.কম, ৩১ মে ২০২৫)
আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, সত্তরের দশক আর বর্তমান পৃথিবীর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত সৃষ্টি হয়েছে। তখন ডিজিটালাইজেশন, টেকসই-উন্নয়ন, উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা সোশ্যাল মিডিয়াÑএই কনসেপ্টগুলো ছিল অজানা। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো ‘ব্রেন গেইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রবাসীদের কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে গেছে অথচ বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতারা সে ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। কেউ যদি মনে করেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মেধার ‘মাশরুম-ফলন’ হচ্ছে, তবে সেটি একটি বাস্তবসম্মত দাবি হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান বাস্তবতায় চাকরির উপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও প্রফেসর ইউনূসের প্রাগুক্ত ‘টেস্ট-কেস’ দুটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবু বিদেশ থেকে ‘আমদানি করা’ ব্যক্তিরা ক্রমেই আমলাতান্ত্রিক ‘রেড-টেপ’ ডিঙিয়ে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবর্তন আনার এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছেন, যা লক্ষণীয়। এ ব্যাপারে বিডার আশিকের পত্রিকায় প্রকাশিত আট মাসের কাজের ‘আমলনামা’ উল্লেখযোগ্য। (কালের কণ্ঠ, ৬ জুন, ২০২৫)
পরীক্ষা ছাড়াই ডিগ্রি অর্জনের খায়েশ, অপ্রয়োজনে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি। সে জন্য রোড ব্লক ও মব সৃষ্টি, কিংবা নেতার ক্যাডার বা চাঁদাবাজির মাধ্যমে ছাত্রজীবন কাটানোর যাদের ইচ্ছে, এ ধরনের ‘ছাত্র’ জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় থাকলে আর যা হোক সেখান থেকে দেশ পরিচালনার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ‘আইডিয়া জেনারেশন’ কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত করা এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া, কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের নামে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠানো বর্তমানে ‘ফ্যাশনে’ পরিণত হয়েছে। প্রশিক্ষিত এবং বিশ্বমানের দক্ষ প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হলে, তা দেশের জন্য উপকার এবং অর্থ সাশ্রয়ী হবে। সরকার ও রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স পছন্দ করলেও, দেশের উন্নয়নে তাদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে অতীতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদের তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। ‘আগস্ট-অভ্যুত্থান’ এবং সেই সঙ্গে প্রফেসর ইউনূসের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ আমাদের সামনে সেই সুযোগ উন্মোচিত করেছে । সেই সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারটি নিকট ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতাপ্রত্যাশী, তাদের বিবেচনার বিষয়।
লেখক : প্রফেসর, ওয়েস্টার্ন নরওয়ে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ও প্রাক্তন অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়