সর্বজনীন প্রতারণার কালে সত্য বলাটাই একটা বৈপ্লবিক কাজ জর্জ অরওয়েল
জাতি যখন কণ্ঠস্বর হারাল, তখন সাহস নিয়ে দাঁড়াল একটি সংবাদপত্র
একটি জাতির জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে, যখন সত্য খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। সত্য বলাটা তখন বিদ্রোহের মতো শোনায়। প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক ধসে পড়তে থাকে। পার্লামেন্ট হয়ে পড়ে প্রদর্শনীর জায়গা। চাপের কাছে নত হয় আদালত। জনগণের পরিসর সংকুচিত হয়ে আসে। ভয়ই হয়ে ওঠে সত্যিকারের আইন। এ রকম সময় মানুষ একটা জিনিসই খুঁজতে থাকে। এমন একটা কণ্ঠস্বর, যেটি সেই পরিস্থিতিতেও কথা বলবে। বাংলাদেশে সেই কণ্ঠস্বরটা হয়ে উঠেছিল আমার দেশ।
তখন ভিন্নমত ছিল অপরাধ। গলা চেপে ধরা হয়েছিল সাংবাদিকতার। আমার দেশ লিখেছিল, কারণ মানুষ লিখতে পারেনি। তারা কথা বলেছিল, কারণ জাতিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তারা প্রশ্ন তুলেছিল, কারণ সত্যের জন্য সেটা ছিল দরকারি।
এটা শুধু একটা সংবাদপত্রের গল্প নয়। এটা একটা জাতির বিবেকের গল্প যে মরে যেতে অস্বীকার করেছিল। আমার দেশ অন্তহীন হামলার শিকার হয়েছে। সেন্সরশিপ আরোপ, বন্ধ করে দেওয়া এবং সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। তারপরও জনগণের সংবাদপত্র হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে তারা।
আমার দেশ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে এই নিবন্ধে গণতন্ত্রের অভিভাবক হিসেবে, নীরবের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং দস্যুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দলিল হিসেবে আমার দেশকে সম্মান জানানো হয়েছে।
একটি বিবেকবান সংবাদপত্রের জন্ম
স্বাধীনতার কাজ হলো অন্যকে মুক্ত করাÑটোনি মরিসন
বড় অঙ্কের অর্থ বা অনেক রাজনৈতিক মিত্র নিয়ে আমার দেশ-এর যাত্রা শুরু হয়নি। একটা বিশ্বাস নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তারা বিশ্বাস করত সাংবাদিকতাকে অবশ্যই জনগণের জন্য কাজ করতে হবে, শাসকের জন্য নয়। প্রথমদিন থেকেই সুবিধার চেয়ে স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছিল তারা। দরিদ্রের পক্ষে কথা বলা, ক্ষমতার রাশ টেনে ধরা এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াইকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছিল তারা।
এই পত্রিকার পাতায় পাতায় কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ নিজেদের জায়গা খুঁজে পেয়েছে। অন্যরা তাদের অগ্রাহ্য করেছিল। আমার দেশ অন্যদের থেকে আলাদা। রাষ্ট্র যখন স্বাধীন মতপ্রকাশের দরজা বন্ধ করে দিল, আমার দেশ সহজ পথে হাঁটেনি। নিরাপত্তার চেয়ে সত্যকে প্রাধান্য দিয়েছে তারা। এই সিদ্ধান্তটা যেমন বোঝা হয়েছে, তেমনি হয়েছে অহংকারের কারণ।
স্বৈরাচারের যুগে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা
অশুভের বিজয়ের জন্য শুধু একটি জিনিস প্রয়োজন। সেটা হলো ভালো মানুষগুলোর নীরবতাÑএডমুন্ড বার্ক
বাংলাদেশ অন্ধকার কর্তৃত্ববাদের যুগে ঢুকে পড়েছিল। আমার দেশ তখন শাসকের টার্গেটে পরিণত হয়। ক্ষমতার ধারকরা একটাই গল্প শুনতে চেয়েছিল। বিরোধী মত মুছে দেওয়া হয়েছিল। হুমকির মুখে পড়েছিল সাংবাদিকতা। বহু মিডিয়া হাউস নীরবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমার দেশ সেটা করেনি।
আমার দেশ-এর অফিসে অভিযান চালানো হয়। প্রেস কেড়ে নেওয়া হয়। সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়। পত্রিকাটিকে বহুবার বন্ধ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে। আদালতে মামলার পেছনে অর্থ ঢালা হয়েছে। প্রতিটি আঘাতে এই পত্রিকার প্রতি জনগণের আস্থা আরো বেড়েছে। রাষ্ট্র যত শক্ত আঘাত করেছে, আমার দেশ জনগণের চোখে তত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মানুষ এই পত্রিকার কাছে খবরের জন্য এসেছে। আশার জন্য এসেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ছাড়ার মুহূর্তে নজরদারির দায়িত্ব
ক্ষমতা দুর্নীতিপ্রবণ। আর চরম ক্ষমতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় চরম মাত্রায়Ñলর্ড অ্যাকটন
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শক্তি হারিয়েছিল। সেই শূন্যতা পূরণ করেছিল আমার দেশ। সত্যিকারের নজরদারির প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিল তারা।
মিরসরাইয়ে ৯০০ একর খাসজমি ভারতের আদানি গ্রুপের হাতে গোপনে তুলে দেওয়ার খবর আমার দেশই ফাঁস করেছিল। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই জমি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অথচ জমির কোনো মূল্য নির্ধারণ হয়নি। স্থানীয় কোনো ফার্ম দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি। এমনকি সেখানকার শ্রমিক আর সরঞ্জামও এসেছে ভারত থেকে। বাংলাদেশ সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই সত্যটা তুলে ধরেছিল আমার দেশ।
নিখোঁজ মানুষ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং বাকস্বাধীনতার ওপর হামলার খবর দিয়েছিল আমার দেশ। হামলার শিকার আর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছিল তারা, যদিও অন্যরা ছিল চুপ। প্রতারণার নির্বাচনের ওপর নজরদারি করেছিল তারা। ভুয়া ভোট, ব্যালটভর্তি বাক্স, পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের খবর তুলে ধরত আমার দেশ। গণতন্ত্র কীভাবে মারা যায়, জনগণকে তারাই সেটা জানিয়েছিল।
নির্যাতিতের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা
সাংবাদিকতা হলো সেসব জিনিস ছাপানো, যেটা অন্যরা ছাপতে চায় না। বাকি সবকিছুই হলো গণযোগাযোগÑজর্জ অরওয়েল
রাষ্ট্র যাদের চুপ করাতে চেয়েছিল, তাদের জায়গা দিয়েছিল আমার দেশ। বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা কথা বলেছিলেন। পুলিশের শিকার ব্যক্তিরা যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলেন। সাহসী ব্যক্তিরা ভেতরের তথ্য ফাঁস করেছিলেন। শিক্ষকরা বিপদ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। অ্যাকটিভিস্টরা পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন।
এই গল্পগুলো ছাপার মাধ্যমে আমার দেশ মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মিথ্যার ওপরে তারা মানুষের চেহারাকে স্থান দিয়েছিল। কথা বলার জায়গা যখন হারিয়ে গিয়েছিল, তখন সত্যিকারের জনপরিসর হয়ে উঠেছিল আমার দেশ।
রাষ্ট্র কেন আমার দেশকে ভয় পেত
মুক্ত গণমাধ্যম ভালো বা মন্দ হতে পারে। কিন্তু স্বাধীনতা না থাকলে সেটা খারাপ ছাড়া অন্য কিছু হবে নাÑআলবার্ট কামু
রাষ্ট্র খারাপ কাজকে ভয় পায়নি। সত্যকে ভয় পেয়েছে। আমার দেশ উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি প্রকাশ করেছে। যেসব চুক্তি দেশের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেছে। অন্যায়কারীদের নাম প্রকাশ করেছে। বড়-ছোট সবাইকে তারা সুরক্ষা দিয়েছে।
অন্ধকারের রাজত্বে আলো নিয়ে এসেছিল আমার দেশ। ভয়ের শাসনের মধ্যে তারা সাহসিকতা নিয়ে এসেছে। মিথ্যার জগতে নিয়ে এসেছে সত্য।
এই পত্রিকাটি ধ্বংস করে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে রাষ্ট্র। কিন্তু চেতনাকে তারা মারতে পারেনি। পাঠক, লেখক, আর অনলাইন কপিগুলো এটাকে জীবিত রেখেছিল।
আমার দেশ যে কারণে স্মরণে থাকবেÑসাহসের অগ্নিশিখা
সাহস ভয়ের অনুপস্থিতি নয়, বরং ভয়ের ওপর বিজয়ী হওয়াÑনেলসন ম্যান্ডেলা
আমার দেশ শুধু সংবাদ ছাপেনি। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তারা মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে বিপদকে বেছে নিয়েছে তারা। তিনটি বড় মুহূর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন এই পত্রিকাটি বেঁচে থাকবে।
প্রথমত, এই পত্রিকাটি বিচার বিভাগের স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছিল। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা গেছে, বড় মামলাগুলোয় বিচারকদের ওপর চাপ ছিল। জাতি চমকে গিয়েছিল। রাষ্ট্র এই তথ্য ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। পত্রিকাটিকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল। আমার দেশ বলেছে, সত্য প্রকাশ কোনো অপরাধ নয়। বিচার বিভাগের ভঙ্গুর অবস্থার দিকে তাকানোর জন্য জাতিকে তারা বাধ্য করেছে।
দ্বিতীয়ত, শাহবাগের আসল গল্প তারা তুলে ধরেছিল। অন্যরা এটাকে তরুণদের বিপ্লব বলেছিল। আমার দেশ-এর পেছনে রাষ্ট্রীয় কূটকৌশল দেখতে পেয়েছিল। তারা সতর্ক করে বলেছিল, ভিন্নমতকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিলে রাষ্ট্র স্বৈরশাসনের দিকে হাঁটবে। সময় প্রমাণ করেছে আমার দেশই ছিল সঠিক।
তৃতীয়ত, ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে আমার দেশ। অন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব হারানোর ব্যাপারে সতর্ক করেছিল তারা। মিরসরাই জমির খবরটি দেখিয়েছিল কীভাবে কৌশলগত ভূমি ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জাতির রক্ষক হিসেবে সেখানে ভূমিকা রেখেছিল আমার দেশ।
এই তালিকাটা আরো দীর্ঘ। অন্যরা যখন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে ব্যস্ত ছিল, তখন তাদের হয়ে কথা বলেছে আমার দেশ। বড় প্রকল্পগুলোয় জনগণের অর্থলুটের তথ্য উদঘাটন করেছে তারা। বিপজ্জনক ডিজিটাল আইন নিয়ে তারা আগাম সতর্ক করেছে। নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও নিহত অ্যাকটিভিস্টের নাম প্রকাশ করেছে। দলীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ১৯৭১-এর সত্যিকারের চেতনা চাঙা রেখেছে এই পত্রিকা।
সব বিবেচনাতেই এ জন্য আমার দেশকে মূল্য দিতে হয়েছে। পুলিশি অভিযান, জেল, মিথ্যা অভিযোগ ও চাপÑসবই এসেছে তাদের ওপর। তারপরও তারা মাথা নত করেনি। বরং সৎ সাংবাদিকতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
প্রতীক হয়ে উঠেছেন যে সম্পাদকÑমাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন, নিপীড়ন ও নির্বাসনে পাঠানো
আপনি একজন মানুষকে শেকলে বাঁধতে পারেন, বেড়ি পরাতে পারেন, নির্দয়ভাবে পেটাতে পারেন, কিন্তু তার কণ্ঠ আপনি আটকাতে পারবেন নাÑঅজ্ঞাত
আমার দেশ-এর হৃদয় ছিলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তার সাহসী শব্দমালা দুর্নীতি, ভুয়া আদালত এবং বিদেশি নিয়ন্ত্রণের মুখোশ খুলে দিয়েছে। সরকার সবচেয়ে ঘৃণা করত তাকে।
বহুবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জামিন ছাড়া আটকে রাখা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার একমাত্র অপরাধ ছিল সত্য প্রকাশ করা।
একমাত্র যে জায়গাটি নিরাপদ হওয়ার কথা, সেই আদালতেও প্রকাশ্য দিবালোকে ক্ষমতাসীন দলের পাণ্ডারা তার ওপর হামলা করেছিল। তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল। পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। কিছুই করেনি। বিচারব্যবস্থা কতটা নিচে নেমে গিয়েছিল, এটা তার প্রমাণ।
তারা ভেবেছিল কারাগারে গেলে তিনি মুষড়ে পড়বেন। নির্যাতন তাকে স্তব্ধ করে দেবে। হামলা করে অন্যদের ভয় দেখানো যাবে। কিন্তু তারা ছিল ভুল।
কারাগার থেকে নির্বাসনে তার কণ্ঠ আরো উচ্চকিত হয়েছে। দেশের বাইরে থেকেও তিনি ক্রমাগত লিখে গেছেন। বহু মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে তার লেখা। নির্বাসনের স্বাধীনতা তাকে আরো কথা বলতে উৎসাহিত করেছিল।
যে সরকার মাহমুদুর রহমানকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তারাই আসলে তার শক্তি প্রমাণ করে দিয়েছে। মানুষ তার যন্ত্রণাকে সম্মান হিসেবে করেছে। তার রক্তাক্ত ছবি একটা প্রতীক হয়ে উঠেছে। তার নির্বাসন বিশ্বকে একটা ভীত স্বৈরাচারের চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ এক হয়ে গিয়েছিল। তার শক্তিই হয়ে গিয়েছিল পত্রিকার শক্তি।
জনতার সংবাদপত্রÑসীমানা পেরিয়ে, বাধা মাড়িয়ে
স্বপ্নদ্রষ্টাকে হত্যা করা যায়, স্বপ্নকে যায় নাÑমার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রেস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও আমার দেশ অনলাইন জীবিত ছিল। মিরর সাইট, বিদেশি সার্ভার, ফাইল শেয়ার করে টিকে ছিল পত্রিকা। একজন সাংবাদিকের পতন হয়েছে। অন্যরা উঠে দাঁড়িয়েছে।
পাঠক এই পত্রিকাকে হৃদয়ে ধারণ করেছিল। এটা হয়ে উঠেছিল একটা আন্দোলন, শুধু কিছু মুদ্রিত পাতা নয়।
জুলাই বিপ্লব ও জনতার সাহসের পুনরুত্থান
যেখানে ক্ষমতা আছে, সেখানেই প্রতিরোধ হবেÑমিশেল ফুকো
২০২৪-এর জুলাই মাসে ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছিল। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল আমার দেশ। সাহসী তরুণ, পরিবারের হাহাকার, ভয় কাটিয়ে ওঠার গল্প বলেছে পত্রিকাটি। সন্ত্রাসী শাসনের শেষ দিনগুলোর দলিল হয়ে উঠেছিল আমার দেশ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন দায়িত্ব নিলেন, আমার দেশ তখন বিপ্লবের স্মৃতি রক্ষা করেছে। যে বিপ্লবের জন্ম হয়েছে আত্মত্যাগ আর সত্যিকারের স্বাধীনতার আশার মাধ্যমে।
আমার দেশ-এর নৈতিক বিজয়
পৃথিবীরে মুখ থুবড়ে পড়া সত্য আবার জেগে উঠবেইÑউইলিয়াম কালেন ব্রায়ান্ট
বহু বছরের হামলাতেও আমার দেশ-এর আত্মা ধ্বংস করা যায়নি। শুধু মুদ্রণ জারি রাখলেই সেটাকে বিজয় বলা যায় না। বিজয় হলে সত্যকে কখনো পরিত্যাগ না করা।
ইতিহাসযোদ্ধাদের মনে রাখে, অনুসারীদের নয়। আমার দেশ-এর বিশাল অর্থ নেই, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নেই। কিন্তু মানুষের আস্থা আছে। এই আস্থাটা চিরকালীন।
অনমনীয় বাহিনী : যে সাংবাদিকরা হয়ে উঠেছিলেন আমার দেশ-এর আত্মা
সাহসী নারী ও পুরুষরা আমার দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। সহজ চাকরি ছেড়ে তারা বিপজ্জনক পথ ধরেছিলেন। দিন-রাত সামান্য বেতনে তারা কাজ করেছেন। নিত্যদিন তারা হুমকির মোকাবিলা করেছেন।
তারা বিশ্বাস করতেন সাংবাদিকতা হলো জাতির জন্য কাজ করা, শাসকের জন্য নয়। তারা বিশেষ করে বাইরের চাপের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছেন। দেশের দরজা যখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তারা বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
এমনকি বন্ধুদের যখন জেলে নেওয়া হয়েছে বা তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তখনো সাংবাদিকরা কাজ করে গেছেন। আমার দেশকে তারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের মুখপাত্র করে তুলেছিলেন।
সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায়ই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নতুন শাসকরাও হয়তো সত্য বলার কারণে আমার দেশ-এর ওপরে হামলা করবে। তার এই উদ্বেগই প্রমাণ করে সত্যিকারের সাংবাদিকতা কতটা মূল্যবান।
শেষ কথা : স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন অন্য সময়ের চেয়েও এখন বেশি জরুরি
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শুধু গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটা নিজেই হলো গণতন্ত্রÑওয়াল্টার ক্রনকাইট
বাংলাদেশ একটা নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। আমার দেশ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র হতে পারে না। সত্য ছাড়া স্বায়ত্তশাসন হতে পারে না। সত্য যেখানে বিকৃত করা হয়, সেখানে অধিকার থাকতে পারে না।
আমার দেশ দেখিয়েছে সাংবাদিকতা হলো সাহস। মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই। দুর্বলের জন্য এটা ঢাল।
আমার দেশ-এর এই বার্ষিকীতে আমরা জনগণের জানা, বলা, প্রতিরোধ করা এবং মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাই।
আমার দেশ-এর মতো কণ্ঠস্বর যতদিন থাকবে, কোনো জাতিই ততদিন নীরব থাকবে না।