বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হতে পারে। তিনি জানান, একটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে। তার মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আদেশ জারি ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামো দিতে পারেন। তবে সবকিছুই বাস্তবতার নিরিখে এবং আইন দিয়ে হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ তা বাতিলের দাবি তুলতে না পারে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইউট্যাব) আয়োজিত ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে পরিবর্তন প্রত্যাশা
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা ও ভাবনা কী, সে বিষয়ে নতুন প্রজন্মের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার মতে, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষা হলো—পরিবর্তন। তিনি সবক্ষেত্রে মেধা, জ্ঞান এবং প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, সমাজের যে স্তরেই কাজ করা হোক না কেন, সবাইকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে হবে, যেখানে শিক্ষকদের ভূমিকা ব্যাপক, কারণ তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখান।
গবেষণা-ধর্মী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ধারণা হলো গবেষণা-ধর্মী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার প্রতিষ্ঠান। তিনি খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলেন, যাতে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তিনি কর্মমুখী ও সময়োপযোগী কারিকুলাম নির্ধারণের পাশাপাশি শুধুমাত্র নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবর্তে শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, জনসংখ্যার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে, তবে এক্ষেত্রে শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং মানসিক সংস্কার
সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তন আশা করছি, তা সর্বত্রই হতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুধু বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থানের জন্য নয়, এটি ছিলো দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। দ্রুত গতিতে এক দফার ভিত্তিতে আন্দোলন তীব্র হয় এবং বহু লড়াই, সংগ্রাম ও রক্তের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যত সংস্কারই করা হোক না কেন, মানসিক সংস্কার আগে প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী আইনি রূপান্তর ঘটাতে পারলেই জাতির মুক্তি হবে। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সকলকে একসাথে হওয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা.মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন এবং জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ। সেমিনার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকারের পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক শাহ মো. শামীম আহমেদ। সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. এসএম সোহাগ আওয়াল সকলকে ধন্যবাদ জানান।