বাংলাদেশি পাসপোর্টকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন প্রবাসীদের মধ্যে খুব কম মানুষের এনআইডি আছে। বাস্তব কারণে অনেকেই আগে এনআইডি করতে পারেননি। নতুন এনআইডি প্রদানের উদ্যোগ সব দেশে জোরালোভাবে চালানো সম্ভব হয়নি। তাই আমরা এ প্রস্তাব করেছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদিও অনেক ফেক বা অনিয়মিত পাসপোর্ট রয়েছে...রোহিঙ্গাদের মতো অনাগরিকরাও অতীতে দুর্নীতির মাধ্যমে পাসপোর্ট পেয়েছেন। তবুও আমরা বলেছি, পাসপোর্টধারীরা চাইলে তাদের পাসপোর্টের ছবি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে ভেরিফিকেশন করিয়ে নিতে পারেন। ভেরিফিকেশন সঠিক হলে তাদের ভোটার করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বড় অংশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশে থাকেন, যেখানে যাতায়াত ও যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে ভোটার নিবন্ধন কঠিন। তাই এসব দেশে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী ভোটার হতে পারেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তাদের নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে একটি অতিরিক্ত সুযোগ রাখা আছে। মূল নিবন্ধন শেষে কিছুদিন বাদ পড়া ব্যক্তিরা নিবন্ধিত হতে পারবেন। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা চেয়েছে। আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো। কারণ, ২০২৪ সালের ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এক ধরনের বিজয় অর্জন করেছি। দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন থেকে মুক্ত হয়েছি। আমাদের এক দফা দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন তখনই হবে যখন দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেটা নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। তাই অবশ্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবো।
প্রবাসীদের নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পোস্টাল ব্যালটের বিধান বহু বছর ধরে আছে, কিন্তু পূর্ববর্তী নির্বাচনে মাত্র ১৫৪ জন ভোট দিয়েছিলেন। এবার ১৯ তারিখ থেকে নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজারের মতো নিবন্ধন হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবে আরও ভালো হতে পারতো এটা সত্য। তবে অ্যাম্বাসিগুলোর সক্ষমতা সীমিত আমি নিজে রাষ্ট্রদূত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে জানি। তবুও আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আপনারা বলেছেন... ন্যাশনাল আইডি সরকার দেয়, পাসপোর্টও সরকার দেয়। তাহলে পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না কেন? সমস্যা হলো বহু ভুয়া পাসপোর্ট, গলাকাটা পাসপোর্ট, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইত্যাদি। তাই আমরা বলেছি যাতে নাগরিক নন এমন কেউ ভোটার না হন, এজন্য পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হোক। আমরা চাই যত বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার হন, কিন্তু যেন কেউ অনাগরিক ভোটার না হন।
এ সময় পুলিশ সুপারদের লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বলছি, আমাদের দল এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমার কাছে মনে হয়... যেমন সাংবাদিকদের মধ্যে বিশেষ যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব বণ্টন হয়, তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেও দক্ষতা বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের দল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যা বলবে সেটাই সর্বশেষ মতামত হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া।