গণভোটে ‘হ্যা’ বিজয়ের প্রচারণার উদ্যোগ
গণভোটে ‘হ্যা’ বিজয়ী করতে প্রচারণা’সহ আগের পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী’সহ আট দল। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বাদে সাত বিভাগীয় শহরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এসব সমাবেশে শীর্ষ নেতারা জনমতকে দুর্নীতিমুক্ত ও দখলবাজমুক্ত সরকার গঠনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করবেন। এ লক্ষ্যে আট দলের বিভাগীয় লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে—যারা সমাবেশ বাস্তবায়ন ও পরবর্তী আন্দোলন পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে সেখানে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ।
তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে আট দল। ইতোমধ্যে সরকার আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি—গণভোট নির্বাচনের আগে করার দাবি ছিল আমাদের; কিন্তু সরকার জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আরেকটি দাবি ছিল ফ্যাসিবাদীদের বিচার। ইতোমধ্যে ফ্যাসিস্টদের প্রধান ‘লেডি ফেরাউন’-এর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে কেউ আর ফ্যাসিবাদী হওয়ার দুঃসাহস করবে না বলে আমরা মনে করি। যারা ক্ষমতায় বসবে তারা আর গুম-খুনের রাজনীতি করার সাহস পাবে না। উন্মুক্ত আদালতের মাধ্যমে প্রদত্ত এই রায় ন্যায়বিচারসম্মত, উপযোগী এবং ইনসাফভিত্তিক।
মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, আমাদের দাবি ছিল পিআর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। আট দলের কেউ চেয়েছিলো উভয় কক্ষে পিআর, কেউ চেয়েছিলো শুধু উচ্চ কক্ষে। উচ্চ কক্ষে পিআর ব্যবস্থা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আদেশের মাধ্যমে সাময়িকভাবে বাস্তবায়িতও হয়েছে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল ন্যূনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন-খারাবি অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন আগে পল্লবীতে বিএনপি কর্মী খুন হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও ও ওসি পর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পঞ্চম দাবি ছিল—জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করা। এ দাবির কোনো অগ্রগতি এখনো দেখা যাচ্ছে না।
কর্মসূচি ঘোষণা করে মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, গত ১৬ নভেম্বর আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ ৫ দফা দাবি এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয় নিশ্চিত করতে প্রচারণা জোরদার করা হবে। কারণ ‘হ্যাঁ’ জয়ী না হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে না। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আন্দোলনে আছি এবং থাকবো।
প্রেস ব্রিফিং থেকে ঘোষণা করা হয়— ৩০ নভেম্বর রংপুর, ১ ডিসেম্বর রাজশাহী, ২ ডিসেম্বর খুলনা, ৩ ডিসেম্বর বরিশাল, ৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ, ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সিলেট এবং ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হওয়া ছাড়া আমাদের পাঁচ দফা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যদি ‘না’ জয়ী হয়, তাহলে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে না। পাঁচ দফার মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।
‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ক্যাম্পেইন পাঁচ দফার সঙ্গে নতুন সংযোজন কিনা—এ প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, হ্যাঁ-না ভোট জুলাই সনদের জন্য। আমাদের এক নম্বর দাবি—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আদেশের মাধ্যমে হয়েছে। এরপর গণভোট, তারপর নির্বাচন ও সংসদ। গণভোটের রায় না হলে প্রথম দাবি পূর্ণ হয় না। তাই এটি নতুন সংযোজন নয়; পাঁচ দফার মধ্যেই ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ক্যাম্পেইনের বিষয়টি রয়েছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদের পরিচালনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন— খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শরাফত হুসাইন, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা তাওহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম, অর্থ সম্পাদক রিয়াজ হোসেন প্রমুখ।