হোম > রাজনীতি

বিএনপির তৃণমূলে ক্ষোভ-সংঘাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি

আমার দেশ অনলাইন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, তা ঘিরে তৃণমূলে চলছে তীব্র ক্ষোভ ও বিভক্তি। অনেক জায়গায় মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তালিকা ঘোষণার পর দলের ভেতর অসন্তোষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তৃণমূল নেতাদের মতে, খুব দ্রুত এসব কোন্দল নিরসন না হলে নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব পড়তে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, বিএনপিকে এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে এখনই শক্তিশালী দলীয় ঐক্য ও মাঠের বিরোধ নিষ্পত্তি জরুরি।

তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে এ মতানৈক্য আগামী নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। তার দাবি, একাধিক যোগ্যপ্রার্থী থাকলে একজনকে বেছে নিতে হয়। বাকিদের ক্ষোভ থাকবে স্বাভাবিক। আর এটা প্রতি নির্বাচনেই হয়ে থাকে। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী ঘোষণার দিন স্পষ্ট করেছেন, ঘোষিত তালিকা কেবল সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা। স্থায়ী কমিটি যেকোনো সময় এতে পরিবর্তন আনতে পারে।

গত সপ্তাহে ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম ইকবাল হোসেইনকে পরিবর্তনের দাবিতে গৌরীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের অনুসারীরা। পরের দিন ইকবাল এলাকায় প্রবেশের সময়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে মারা যান উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি তানজিল আহমেদ মিঠু। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের যেকোনো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়া-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে। ৮০ বছর-ঊর্ধ্ব এ নেতার আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী মনোনয়ন চেয়েছেন। এখানে মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন না এলে অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন খোকসা উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।

নেত্রকোণা-৫ আসনের মনোনয়ন নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আবু তাহের তালুকদার। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের শুরুতেই জেলা সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় আবু তাহের তালুকদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৬ সালে সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাঁঠাল প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি। তাকে এবারও মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

চট্টগ্রাম-৪ আসনে সালাউদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বিক্ষোভ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি এ আসনের বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীর বিকল্প কেউ প্রার্থী হতে পারে না।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা জহুরুল আলম জহুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘ ৯ বছর কারাগারে থাকার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য সব হারিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আসলাম চৌধুরীর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য পুরো পরিবারের ওপর নির্যাতন করেন। এ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রাম-১২ আসনে ৫ আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে দল। যদিও বহিষ্কারের কয়েক মাসের মধ্যে তদবিরের চাপে তার সাংগঠনিক শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে মতামত দিচ্ছেন। এ আসনে বিগত আওয়ামী আমলে গুমের শিকার সৈয়দ সাদাত আহমেদকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে সম্ভাব্য মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। বয়োবৃদ্ধ এ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় হতাশ হন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিগত ১৭ বছর মুশফিকুর রহমান কানাডাপ্রবাসী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর দেশে ফেরেন তিনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ আলমের কাছে পরাজয়ের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনীত করলেও মনোনয়নপত্রে ভুল করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। এ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা চান নেতাকর্মীরা।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হককে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ থাকায় এ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা চান এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ আসনে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেক বছর ধরেই কাজ করছেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। মামলা-হামলায় জর্জরিত এ নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ।

এছাড়া সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন ভিপি আইনুল হক। বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। এ আসনে মনোনয়নের জন্য বিএনপির দুঃসময়ের নেতাদের বিবেচনা করা হয়নি বলে ক্ষোভ জানান স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি, এ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার।

একই সঙ্গে এই আসনের অন্য তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী আইনুল হকের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন যারা

টাঙ্গাইল-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির। নাসির ঘাটাইলের স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় তার মনোনয়ন মেনে নিতে পারছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ আসনে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন—ঘাটাইলের সাবেক এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম। মনোনয়ন পরিবর্তন না হলে লুৎফর রহমান খান আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের ছোট মেয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। কিন্তু আপন বড় ভাই ও জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন তার বোনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রতিদিন পৃথকভাবে নির্বাচনি প্রচার করছেন। মনোনয়ন পরিবর্তন না হলে এ আসনে টিপু স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে জানান, দল প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করেছেন। এখনো কাউকে চূড়ান্ত করেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর এক সমাবেশে তাইফুল বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন না হয়, তবে আমি আমার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনে নামব।

এছাড়া কেন্দ্র যদি প্রার্থী পরিবর্তন না করে মাগুরা-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল। গত ১৮ নভেম্বর মাগুরার শালিখা উপজেলার আইডিয়াল হাই স্কুল মাঠে জনসভায় নিতাই রায় চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন তিনি।

প্রার্থী ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভের বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ বলেন, বিএনপি যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তা সম্ভাব্য তালিকা। আমরা এখনো চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করিনি। এখানে মনোনয়নবঞ্চিতদের একটু ক্ষোভ থাকবেই। যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের মূল্যায়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। সেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বলেছেন।

অভিযোগ পাওয়া প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবার নির্বাচনে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার মতো একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকে। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে আমাদের দুর্ভাবনার কিছু নেই। দ্রুতই বিষয়টি সমাধান করে ফেলতে পারব।

ইসলামের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব হবে: নূরুল ইসলাম বুলবুল

যেভাবে দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুরু

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে

জন্মদিনে স্ত্রী-কন্যার ছবি শেয়ার করে ৫ প্রতিশ্রুতি দিলেন তারেক রহমান

ফাঁকা আসনে ক্ষোভ বাড়ছে বিএনপি নেতাদের

শেখ পরিবার বিদেশে আয়েশে বিপর্যস্ত আ.লীগের তৃণমূল

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান অনেকেই

তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন আজ

পল্লবীর যুবদল নেতাকে হত্যায় বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন

মৌলভীবাজার-২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন