হোম > ধর্ম ও ইসলাম

জন্মদিনের ইতিহাস ও ইসলামের বিধান

মাইফুল জামান ঝুমু

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের আচার-আচরণও। আগে যেখানে একে অন্যের খোঁজখবর নেওয়া কঠিন ছিল, সেখানে বর্তমানে একে অন্যের পালন করা বিভিন্ন রীতিনীতি দেখে ট্রেন্ডে গা ভাসানো যেন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমনি এখনকার যুগে একটি বড় ট্রেন্ড হলো জন্মদিন উৎসব পালন করা। বর্তমানে জন্মদিন উদযাপনের ট্রেন্ড এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে মুসলিম-অমুসলিম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সবাই জন্মদিন পালন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। আমাদের সমাজে এমনও অনেকে আছেন, যাদের মা-বাবা তাদের সঠিক জন্ম-তারিখ জানেন না, কিন্তু সার্টিফিকেট বা ফেসবুকের ভুয়া জন্ম-তারিখ ব্যবহার করে জন্মদিনের ধুমধাম আয়োজন করছেন। অথচ এই ধুমধাম জন্মদিন পালন করাকে ইসলাম সমর্থন করে কি না-তা একবারের জন্যও আমরা ভাবছি না।

শান্তির ধর্ম ইসলাম জাঁকজমকপূর্ণ জন্মদিনকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এর পেছনেও রয়েছে একটি যুক্তিপূর্ণ কারণ। জন্মদিন উদযাপনকে অনেকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের উৎসব মনে করলেও এর ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, সর্বপ্রথম জন্মদিনের উৎসব উদযাপন করত মিসরের ফারাও বা ফিরাউনরা, যারা ছিল পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী। এই দিনে তারা উপাসনা ও সম্মানের ওপর বেশি জোর দিত। পৌত্তলিকরা জন্মদিন উদযাপন করত বলে শুরুতে খ্রিষ্টানরা জন্মদিন উদযাপন করত না। কারণ তারা ফারাওদের পাপী মনে করত আর জন্মদিন উদযাপনকে তারা পাপীদের সংস্কৃতি হিসেবে ধরে নিয়েছিল।

এ উৎসব অমুসলিম কিংবা বিজাতিরা পালন করত বলে ইসলাম জন্মদিন পালন করাকে হারাম বলেছে। ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৩১)

এছাড়া জন্মদিন উৎসবের সংস্কৃতি জাদুবিদ্যা থেকে এসেছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আমরা একে অন্যকে ‘শুভ জন্মদিন’ বলে যে অভিবাদন জানাই, তার পেছনেও রয়েছে মুশরিকদের অন্ধ বিশ্বাস। তারা মনে করে, যার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে জন্মদিন উৎসব পালন করা হয়, সেদিন তার আত্মা তার কাছে আসে এবং সেই আত্মা জন্মদিনের শুভেচ্ছাগুলো শুনতে পায়। এই শুভেচ্ছা অনুযায়ী তার শুভ ও অশুভ পরিণতি নির্ধারণ করে। মুশরিকদের এ ধরনের অবান্তর বিশ্বাস আমরা অনেকে অন্তরে ধারণ না করলেও কর্মে ঠিকই ধারণ করছি।

আবার আমরা কেউ কেউ জাঁকজমকভাবে জন্মদিন উদযাপন না করলেও ঘরোয়াভাবে ছোটখাটো আয়োজন করছি। কেউ কেউ আবার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে প্রিয়জনকে উপহার কিনে দিচ্ছি। কিন্তু সময়ের স্রোতে এই বিচ্ছিন্ন আয়োজনগুলোও জন্মদিন উদযাপনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে, তা আমরা ভাবছি না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (আল হাশর-৭) কাজেই রাসুল (সা.)-এর নিষেধাজ্ঞা পালন করার উদ্দেশ্যে হলেও এ ধরনের উৎসব উপভোগ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

শয়তানের উপাসক এবং শয়তানের চার্চের প্রতিষ্ঠাতা তার লেখা-The Satanic Bible বইয়ে উল্লেখ করেছে, ‘শয়তানের ধর্মে সবচেয়ে বড় উৎসব হলো নিজের জন্মদিনের উৎসব।’ কাজেই শয়তানকে প্রশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইলে জন্মদিনের উদযাপন থেকে বিরত থাকা জরুরি। এ দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে রোজা রাখা, দান-সাদকাহ করা এবং নফল ইবাদতে নিজেকে মগ্ন রাখা উচিত। আর জন্মদিন কেন্দ্র করে কাউকে উপহার না দিয়ে কাউকে ভালো কাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উপহার দিতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও। কেননা উপহার মনের বিদ্বেষ দূর করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ৯২৫০) আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ধরনের পাপ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম

মানি চেঞ্জিং ব্যবসা হালাল নাকি হারাম

জীবনের নিরাপত্তা লাভের দোয়া

কাউকে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করাও সমান অপরাধ

তীব্র শীতে তায়াম্মুম করা যাবে কি?

ইবাদত শুধু আল্লাহর, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য

হতাশার মুহূর্তে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ

বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি দিতে গড়িমসি জঘন্য পাপ

নারীমুক্তির অগ্রদূত মহানবী (সা.)

বিজয় উদযাপনে ইসলামের শিক্ষা