হোম > ধর্ম ও ইসলাম

বছর শেষে আমাদের করণীয়

আসআদ শাহীন

মানুষের জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী; অথচ এই অল্প সময়ের মধ্যেই অনন্তকালের সফলতা কিংবা চূড়ান্ত ব্যর্থতার ফয়সালা হয়ে যায়। তাই একজন মুমিনের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। বছরশেষ আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে—নিজের নফস ও আমলের গভীর হিসাব নেওয়ার, আত্মশুদ্ধির পথে নতুন করে যাত্রা শুরুর।

১. আত্মসমালোচনা ও খাঁটি তওবা

বছর শেষে আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো আত্মসমালোচনা। নিজের অতীত জীবনের দিকে ফিরে তাকিয়ে চিন্তা করা—কোথায় আল্লাহর হক আদায়ে গাফিলতি হয়েছে, কোথায় বান্দার হক নষ্ট হয়েছে। মানুষের হকের সঙ্গে সম্পর্কিত গুনাহ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে ছোট-বড় সব নাফরমানির জন্য খাঁটি অন্তর থেকে তওবা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল; তিনি বান্দার অনুশোচনা ও ভবিষ্যতে গুনাহ ত্যাগের দৃঢ় সংকল্পকে পছন্দ করেন। তওবাই আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপ।

২. নফস ও শয়তানের মোকাবিলা

মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তান, আর গোপন শত্রু তার নিজের নফস। নফসের প্রবৃত্তি মানুষকে গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়, আর শয়তান তাতে কুমন্ত্রণা জোগায়। তাই শুধু শয়তান থেকে বাঁচাই যথেষ্ট নয়; নফসের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। নিয়মিত ইবাদত, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নফসকে বশে আনতে হবে, যাতে নফস আমাদের চালনা না করে, বরং আমরা নফসকে পরিচালনা করতে পারি।

৩. সৎ সঙ্গ ও সময়ের গুরুত্ব

মানুষের জীবনগঠনে সঙ্গের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। সৎসঙ্গ মানুষকে সময়ের মূল্য শেখায়, গাফিলতি থেকে রক্ষা করে। পক্ষান্তরে অসৎসঙ্গ ধীরে ধীরে লক্ষ্যচ্যুত করে ফেলে এবং অমূল্য সময় নষ্ট করে। তাই এমন বন্ধু ও সহচর বেছে নেওয়া জরুরি, যারা আখিরাতমুখী জীবনযাপনে অনুপ্রেরণা জোগায়।

৪. সালাফদের জীবনচর্চা

সালাফে সালেহিনের জীবন অধ্যয়ন করলে শৃঙ্খলা, ভারসাম্য ও দৃঢ়সংকল্পের শিক্ষা পাওয়া যায়। তাঁদের জীবন প্রমাণ করে—অসাধারণ সাফল্যের জন্য শুধু প্রতিভা নয়, বরং সময়ের সঠিক ব্যবহার ও নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা অপরিহার্য। সীমিত সামর্থ্য নিয়েও তাঁরা যুগান্তকারী অবদান রেখে গেছেন।

৫. সুস্থতা ও জীবনের যথাযথ ব্যবহার

রোগ আসার আগে সুস্থতা এবং মৃত্যুর আগে জীবন—এ দুটোই অমূল্য নিয়ামত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বলতেন, ‘সন্ধ্যা হলে সকালের অপেক্ষা করো না, আর সকাল হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না।’ (বুখারি : ৬৪১৬)। এর তাৎপর্য হলো, যে কাজ সন্ধ্যায় করার সুযোগ আছে, তা পরের সকালের জন্য রেখে দিও না; আর সকালের কাজ সন্ধ্যার জন্য স্থগিত কোরো না। কারণ জীবন ও সুস্থতা—দুটোই অনিশ্চিত।

৬. মৃত্যুচিন্তা ও জবাবদিহিতার অনুভব

মৃত্যুর স্মরণ হৃদয়কে নরম করে, দুনিয়ার মোহ কমায় এবং আখিরাতের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ করে। মৃত্যুর মুহূর্তে কিংবা কিয়ামতের দিন মানুষ বুঝবে—ধন-সম্পদ, আত্মীয়স্বজন কিছুই কাজে আসবে না; কেবল নিজের আমলই হবে তার সঙ্গী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে তার জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (তিরমিজি : ২৪১৭)

এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সময় শুধু চলমান মুহূর্ত নয়; এটি একদিন আমাদের বিরুদ্ধে বা পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।

৭. সময়ের শপথ ও তার শিক্ষা

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে সময়ের শপথ করেছেন—রাত, দিন, ফজর ও আসর। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন সময়ের গুরুত্ব। সময়ের অপচয় শুধু দুনিয়ার ক্ষতি নয়; এটি আখিরাতের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

৮. নববর্ষ : নিছক আনন্দ নয়, আত্মসমালোচনা

নতুন বছরকে মানুষ আনন্দোৎসবের উপলক্ষ বানায়। অথচ বাস্তবতা হলো, একটি বছর পার হওয়া মানে জীবনের একটি বছর কমে যাওয়া, মৃত্যুর আরো কাছে পৌঁছে যাওয়া। তাহলে নিজের আয়ু হ্রাস পাওয়ার আনন্দ কীভাবে উদ্‌যাপন করা যায়? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি সেই বাস্তবতা জানতে, যা আমি জানি, তবে কম হাসতে ও বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি: ৬৪৮৫)

এই হাদিস আমাদের গাফিলতির পর্দা সরিয়ে দেয় এবং জীবনের প্রকৃত চিত্র সামনে আনে। সুতরাং নতুন বছরের প্রকৃত তাৎপর্য উৎসব নয়; বরং আত্মসমালোচনা। আসুন, আমরা অঙ্গীকার করি—গুনাহ থেকে তওবা করব, সময়ের সদ্ব্যবহার করব এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বানাব। ইনশাআল্লাহ—এই আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই আমাদের নতুন বছরের সূচনা হবে।

শহীদের অকল্পনীয় মর্যাদা

পবিত্র কোরআনে ঈসা (আ.)

বিদায়ের সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলার অর্থ কী

ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা

হজ প্যাকেজের বাকি টাকা পরিশোধের সময় জানাল সরকার

রজব মাস মুসলিমদের কাছে যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ

ঢাকায় হযরত ফাতিমা (রা.) নিয়ে আলোচনা সভা

মধ্যপ্রাচ্যে দেখা গেল রজবের চাঁদ, রমজানের দিন গণনা শুরু

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম