হোম > ধর্ম ও ইসলাম

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কঠোর

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ। বর্তমানে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অফিস, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ কোথাও নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নেই। অথচ ধর্ষণ সম্পূর্ণরূপে হারাম। এটা শিরক ও হত্যার পর জঘন্য অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘ব্যভিচার কর না’-এর তুলনায় আল্লাহর বাণী ‘ব্যভিচারের কাছেও যেও না’ অনেক বেশি কঠোর। এর অর্থ-যেসব বিষয় ব্যভিচারে ভ‚মিকা রাখে, সেগুলোও হারাম। ইসলাম ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। কারণ, বিয়েবহিভর্‚ত যেকোনো যৌনসঙ্গমই ইসলামে অপরাধ। ধর্ষণও জঘন্য ব্যভিচার। এর ক্ষতি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেয়ামতের দিন তার আজাব বাড়ানো হবে। সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে কেউ তওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে আল্লাহ তার পাপ পুণ্যে বদলে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফোরকান : ৬৯-৭০)।

ধর্ষণের ভয়াবহ শাস্তি

ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষের ব্যভিচার সংগঠিত হয়; অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে। হাদিসে এসেছে, গনিমতের এক পঞ্চমাংশ পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম ধর্ষণ করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়। উমর (রা.) গোলামকে বেত্রাঘাত করে নির্বাসন দেন।’ (বুখারি : ৬৯৪৯)। রাসুল (সা.)-এর যুগে এক নারীকে ধর্ষণ করা হলে তিনি তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি। তবে ধর্ষককে কোরআন-হাদিসে নির্ধারিত শাস্তি (হদ) দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৫৯৮)। ইসলামে ব্যভিচারের অনুরূপ ধর্ষণের জন্যও মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে, বিশেষ করে যদি ধর্ষক বিবাহিত হয়। অবিবাহিত হলে তাকে একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারী নারী-পুরুষকে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়া না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি দেখে।’ (সুরা নুর : ২)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড)।’ (মুসলিম : ১৬৯০)। এ হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলারগণ বলেন, শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি হলো, একশ বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে চাইলে তা প্রয়োগ করতে পারেন। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলিতে চড়ানো হবে কিংবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে বা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়িদা : ৩৩)। এখানে হত্যা করলে হত্যার শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেওয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করার ব্যাখ্যা আইনজ্ঞরা দিয়েছেন। আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি

সারাদেশে ধর্ষণের যে অবস্থা বিরাজ করছে, তার খÐিতাংশই সংবাদপত্র ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ। নারী ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা একটি মারাত্মক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইমাম, খতিব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষকদের ঘৃণা ও সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ধর্ষণ অনেক অপরাধের সমষ্টি। মানবসভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার চ‚ড়ান্ত রূপ। এতে আত্মিক, মানসিক, শারীরিক, চারিত্রিক, সামাজিক বহু রকমের বিপর্যয় ঘটে। এর কুফল কখনও কখনও গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে। ইসলামে শুধু অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের চ‚ড়ান্ত রূপই ব্যভিচার নয়; বরং যেসব কাজ ব্যভিচারের প্ররোচনা দেয়, সেগুলোও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাও ব্যভিচার বলে গণ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোখের ব্যভিচার হলো দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহŸার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার ধরা। পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (মুসলিম : ২৬৫৭)। সুতরাং ব্যভিচার তো দূরের বিষয়, এর কাছাকাছি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য বিষয়েও জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি দিতে গড়িমসি জঘন্য পাপ

নারীমুক্তির অগ্রদূত মহানবী (সা.)

বিজয় উদযাপনে ইসলামের শিক্ষা

বিয়েতে কনের সম্মতি নেয়ার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন

আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের আনাস

ঠান্ডা সময়ে নামাজ আদায়ের ফজিলত

নবী-রাসুলদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন যারা

আল্লাহকে খুশি করুন, খুলে যাবে প্রকৃত সুখের দরজা

খাদিজার (রা.) যে ৪ গুণ নারীদের জন্য অনুসরণীয়

দ্বীনের আলোকে চলতে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিলেন মৌ