হোম > বিশ্ব

ভেনেজুয়েলার তেলের দিকে নজর কেন যুক্তরাষ্ট্রের

সিএনএনের বিশ্লেষণ

আমার দেশ অনলাইন

ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দাবি করেছেন, এই যুদ্ধের পেছনে রয়েছে তার দেশের বিশাল তেলের মজুদ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে এক ডজনেরও বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৫ হাজার সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর পেছনে ভেনেজুলোর তেলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কোনো উদ্দেশ্যে নেই বলে দাবি করছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প সরকার বলছে, ভেনেজুয়েলা থেকে অবৈধ অভিবাসী ও মাদক ঠেকাতে চেষ্টা করছে তারা।

ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলের মুজদ:

মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল মূল্যের বিশাল অপরিশোধিত তেলের মজুদ রয়েছে। যা বৈশ্বিক মজুদের প্রায় এক পঞ্চমাংশ। এটি বিশ্বের একক বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের পরিমাণ।

ভেনেজুয়েলা প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। তবে এটা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের মাত্র ০.৮ শতাংশ। ভেনিজুয়েলার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং গভীর অর্থনৈতিক সংকট কম উৎপাদনের অন্যতম কারণ। ভেনেজুয়েলার জ্বালানি অবকাঠামোর অবনতি ঘটছে এবং বছরের পর বছর ধরে তেল উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

২০০৫ সালে ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালের ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেত্রোলিওস ডি ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ২০২২ সালে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরনকে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হয়।

কেন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেলের বিষয়ে আগ্রহী:

ইতিহাসে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বেশি তেল উৎপাদন করে। তবে এখনো তাদের তেল আমদানি করতে হয় - বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা যে তেল উৎপাদন করে।

কারণ যুক্তরাষ্ট্র হালকা ও কম সালফারযুক্ত অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে, যা পেট্রোল তৈরির জন্য ভালো, কিন্তু আর বেশি কিছু পাওয়া যায় না। ভেনেজুয়েলার তেলের মতো ভারী ও সালফারযুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সময় ডিজেল, অ্যাসফল্ট এবং কারখানা ও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির জ্বালানিসহ বিভিন্ন দ্রব্য পাওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে ডিজেলের সরবরাহ কম - মূলত ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা থেকে প্রতিদিন এক লাখ দুই হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। তবে সৌদি আরব থেকে প্রতিদিন দুই লাখ ৫৪ হাজার ব্যারেল এবং কানাডা থেকে চার দশমিক এক মিলিয়ন ব্যারেল আমদানি করা হয়।

কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল। ভেনেজুয়েলা কাছাকাছি অবস্থিত এবং এর তেল তুলনামূলকভাবে সস্তা, এটি আঠালো ও বেশি ঘনত্বের কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিশোধন প্রয়োজন। এজন্য এর দাম কম। প্রাইস ফিউচার গ্রুপের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ফিল ফ্লিনের মতে, বেশিরভাগ মার্কিন শোধনাগার ভেনেজুয়েলার ভারী তেল প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের তেলের তুলনায় ভেনেজুয়েলার তেল ব্যবহার করতে তারা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দক্ষ।

মাদুরোর পতন হলে কী হতে পারে:

ভেনিজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এবং সম্ভবত ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির জন্যও উপকারী হতে পারে। তেলের দাম নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও কম দাম কিছু মার্কিন কোম্পানিকে তেল উৎপাদন থেকে বিরত রাখতে পারে।

ফ্লিন বলেন, ‘যদি ভেনেজুয়েলায় একটি বৈধ সরকার থাকত, তাহলে বিশ্বে আরো তেল সরবরাহ করা যেতো, দাম বৃদ্ধি এবং ঘাটতির ঝুঁকি কমতো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভেনেজুয়েলার তেল বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারি তবে এটি একটি বিশাল ব্যাপার হবে।’

পিডিভিএসএ বলছে, যদি আন্তর্জাতিক প্রবেশাধিকার আগামীকাল সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া হয়, তবুও ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদন পুরোদমে চালু বছরের পর বছর এবং অবিশ্বাস্য ব্যয় লাগতে পারে। ৫০ বছর ধরে তাদের পাইপলাইনগুলো নতুন করে সংস্কার করা হয়নি। সর্বোচ্চ উৎপাদন স্তরে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের অবকাঠামো সংস্কারে খরচ হবে ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

যদি ভেনেজুয়েলায় পশ্চিমাদের প্রতি বন্ধুসুলভ একটি সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে সেই বিশাল খরচ পরিশোধে আগ্রহ দেখাতে পারে- কেবল তেল এবং শোধনাগার কোম্পানিগুলোর লাভের জন্য নয়, ভূ-রাজনীতির জন্যও।

উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ান তেল ভেনেজুয়েলার মতোই, যে কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এর উপর এত নির্ভরশীল ভারত ও চীন। ভেনেজুয়েলার উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি রাশিয়ার তেলের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্লিন বলেন, ‘এটি সত্যিই দুঃখজনক, এই ধরণের শাসন ভেনেজুয়েলার জনগণের ক্ষতি করছে। তারা আবারো দেশটিকে মহান করে তুলতে পারে, তবে তাদের মাদুরোকে সরিয়ে দিতে হবে।’

এই কারণেই জল্পনা বাড়ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের মাদুরোকে চাপ দেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে তেল ভূমিকা পালন করছে। এই সপ্তাহান্তে, মাদুরো ওপেক মহাসচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে দাবি করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার দেশের তেলের মজুদ দখল করতে চায়।

আরএ

যে ১৯ দেশের অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করলে ইউরোপের পরাজয় নিশ্চিত: পুতিন

ইউরোপ যুদ্ধ করতে চাইলে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘে পাকিস্তানের নয় দফায় যা আছে

মুসলিম যুবককে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর অভিযোগ

আইসিসির হেফাজতে লিবিয়ার যুদ্ধাপরাধী

ভারতকে পরাস্ত করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী

ভারতীয় শিল্প-কারখানার প্রবৃদ্ধি ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

পাকিস্তান-তুরস্কের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া