চীন তাদের নিজস্ব তৈরি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ সি৯১৯–এ প্রথমবারের মতো একজন নারী পাইলটকে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। চীনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পেয়েছেন ইউ ইউ, যিনি এর আগে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের পাইলট ছিলেন।
ইউ ইউয়ে ২০১৫ সালে চায়না সাউদার্নে যোগ দেওয়ার পর থেকে ‘ভুল- শূন্য’ (জিরো-এরর) রেকর্ড ধরে রেখেছেন। চলতি বছরের শুরুতে তিনি সি৯১৯ প্রকল্পে যুক্ত হন এবং কঠোর ও দীর্ঘ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। চীনের সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইট ইউনিভার্সিটি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইউ, বোয়িং ও এয়ারবাস উড়োজাহাজের পর সি৯১৯–এ দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি একটি নির্বাচিত অভিজ্ঞ পাইলটদের দলের অংশ ছিলেন।
সি৯১৯ হলো চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কমাক) নির্মিত একটি ন্যারো-বডি যাত্রীবাহী বিমান। এটি মূলত স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার রুটে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং বোয়িং ৭৩৭ ও এয়ারবাস এ৩২০–এর চীনা বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২৩ সালের মে মাসে বিমানটি চীনের অভ্যন্তরীণ রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে চীনের তিনটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন—চায়না সাউদার্ন, এয়ার চায়না ও চায়না ইস্টার্ন—তাদের বহরে সি৯১৯ যুক্ত করছে এবং সেই অনুযায়ী পাইলটদের পুনঃপ্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
সি৯১৯–এ দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ইউ ইউয়ে বলেন, তাকে যখন এই উড়োজাহাজে দায়িত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি এক মুহূর্তও দ্বিধা করেননি। সাংহাইয়ে কমাক–এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি শ্রেণিকক্ষভিত্তিক পাঠের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইট সিমুলেটরে প্রশিক্ষণ নেন, যেখানে ইঞ্জিন বিকল হওয়া কিংবা বৈরী আবহাওয়ার মতো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার অনুশীলন ছিল।
নারীদের জন্য বিমান চালনা পেশার চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন ইউ। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি পরিবার ও সন্তান পালনের ভার সামলাতে হয় নারী পাইলটদের। তবুও যারা এসব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যান, তারাই সবচেয়ে দৃঢ়চেতা নারী।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট –এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনে নারী পাইলটের সংখ্যা ছিল ৯৪১ জন, যা মোট পাইলটের দুই শতাংশেরও কম। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা চীনের বিমান খাতে এক নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।