নিউ ইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছেন জোহরান কোয়ামে মামদানি, যিনি ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শহরের প্রথম মুসলিম-ভারতীয় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি হবেন ১৮৯২ সালের পর নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করেছেন তিনি তার সাশ্রয়ী জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে—যার মধ্যে রয়েছে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং আফ্রিকান স্টাডিজের গবেষক। মা মীরা নায়ার একজন খ্যাতনামা ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। শৈশবে মামদানি উগান্ডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং পরবর্তীতে মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন। তিনি নিয়মিতই পরিবারের সঙ্গে উগান্ডা ভ্রমণ করেন এবং সম্প্রতি আমেরিকান শিল্পী রামা দুওয়াজির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তার প্রথম নাম ‘জোহরান’ (Zohraan) আরবি ও ফার্সি উৎস থেকে এসেছে, যার অর্থ “আলো”, “প্রভা”, “উজ্জ্বলতা” বা “পুষ্প”। নামটি এমন একজনকে নির্দেশ করে যিনি চারপাশে আলো ছড়ান, যা তার নেতৃত্বের ভাবধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তার মধ্য নাম ‘কোয়ামে’ (Kwame) এসেছে আফ্রিকার ঘানা, আইভরি কোস্ট ও টোগোর আকান জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “শনিবারে জন্মগ্রহণকারী”, তবে এর প্রতীকী অর্থ “প্রজ্ঞা” ও “নেতৃত্ব”। মামদানির বাবা ঘানার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রথম রাষ্ট্রপতি কোয়ামে নক্রুমার অনুরাগী ছিলেন। সেই শ্রদ্ধা থেকেই ছেলের নামের মধ্য অংশে রাখা হয়েছে “কোয়ামে”।
তার উপাধি ‘মামদানি’ মূলত গুজরাটি খোজা মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি সাধারণ পারিবারিক নাম। ব্যুৎপত্তিগতভাবে এটি “মোহাম্মদান” শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ মুসলিম নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) অনুসারীদের জন্য একটি নাম। বা সহজভাবে বললে “মুসলিম”।
সব মিলিয়ে, ‘জোহরান কোয়ামে মামদানি’ নামটি তার বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। ‘জোহরান’ তার আলোকিত নেতৃত্বকে, ‘কোয়ামে’ আফ্রিকান ঐতিহ্য ও প্রজ্ঞাকে, আর ‘মামদানি’ তার ইসলামিক ও দক্ষিণ এশীয় শিকড়কে প্রকাশ করে। এই তিনটি নাম একত্রে গঠন করেছে এমন এক পরিচয়, যা আজকের বহুজাতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রগতিশীল নিউ ইয়র্কের প্রতিচ্ছবি।
সূত্র: বিবিসি