ভেনেজুয়েলার রাজনীতি ও তেল সম্পদকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতা ছাড়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা মাদুরোর জন্য সরে দাঁড়ানোই হবে সবচেয়ে “বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত”। একই সঙ্গে মাদুরো সরকারের পাশে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে দেশটির প্রধান মিত্র রাশিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
ফ্লোরিডায় নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তার নিজস্ব বিষয়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে অনড় থাকলে ভবিষ্যতে মাদুরোর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
এই রাজনৈতিক চাপের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে নৌ অবরোধ জোরদার করেছে। ট্রাম্পের অভিযোগ, মাদুরো সরকার তেল বিক্রির অর্থ ব্যবহার করছে মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানার মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার তেল শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে “পুনরুদ্ধার” করা জরুরি।
ওয়াশিংটনের এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের মধ্যে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ অভিযান এবং তেলবাহী জাহাজ জব্দের ঘটনাকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রাশিয়ার মতে, ক্যারিবীয় সাগরে এ ধরনের তৎপরতা আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
এ পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার অনুরোধে রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ চালাচ্ছে এবং দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক পাচার দমনের নামে নৌ অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে নৌযানে হামলার ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, অনেকেই জেলে ছিলেন এবং মাদক পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
এ অবস্থায় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেল অবরোধ শুধু ভেনেজুয়েলাই নয়, বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন আরও গভীর হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসআর