হোম > বিশ্ব

গাজায় সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের গণহারে হত্যা

আমার দেশ অনলাইন

ছবি: বার্তা সংস্থা আনাদোলু

গাজায় প্রায় দুবছর ধরে বর্বর আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন গাজার সাধারণ নাগরিক। বাদ নেই সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীরা। এই যুদ্ধ শুধুমাত্র এত ব্যাপকসংখ্যক নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্যই ইতিহাস হয়ে থাকবে না, আরো একটি কারণে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আর তা হলো গাজায় দায়িত্ব পালন করা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য।

২০২৫ সালের ১০ আগস্ট আলজাজিরার তরুণ সাংবাদিক আনাস-আল শরিফের নাম মনে রাখবে বিশ্ববাসী। দায়িত্ব পালনকালে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারান তরুণ এই সাংবাদিক। এভাবে স্মরণ করবে আরো ২২২ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুসারে, গত দুবছরে ইসরাইলি সেনাদের বর্বর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তারা। তবে যারা গাজার সত্য তুলে ধরা ঠেকাতে এসব মিডিয়াকর্মীকে নির্মূলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা চিরকালই নিন্দিত থাকবে।

সাংবাদিকরা জানান, দীর্ঘ ২৪ মাস ধরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান এখন গাজা। ইসরাইল এই ভূখণ্ডে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তাই সত্য সংবাদের জন্য পুরো দুনিয়া এখন নির্ভর করছে কেবল ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপর। যাদের প্রায় সবাই আইএফজের সঙ্গে যুক্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সিন্ডিকেটের সদস্য। প্রায়ই তারা সুরক্ষা ছাড়াই এবং তাদের পরিবারের আশ্রয় ছাড়াই কাজ করছেন গাজায়। ফলে প্রায়ই তারা সরাসরি ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।

সাংবাদিকতা পেশায় এর আগে কখনো এত গণহত্যা দেখেনি বিশ্ববাসী। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা ভিয়েতনাম, কোরিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান অথবা ইরাক যুদ্ধের সময়ও এত সাংবাদিক হত্যার রেকর্ড করেনি। সমসাময়িক ইতিহাসে গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে খারাপ কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।

তবে এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি কৌশলগত হত্যাকাণ্ড। জেনে-বুঝে গাজার নির্মম পরিস্থিতির অন্যতম সাক্ষী সাংবাদিকদের হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা। সাক্ষীদের হত্যা করা, গাজাকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলা, সত্য তথ্য থেকে বিশ্ববাসীকে দূরে রাখা এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অর্থই হলো এই সংঘাতে স্বাধীন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের থামিয়ে দেওয়া।

ইসরাইল এমন এক সময়ে কাজটি করছে যখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে পুনরায় উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং গাজাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পুরো এই অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করা। উপনিবেশ স্থাপনের অর্থ গাজাকে ধ্বংস করা, মৃত ও বেঁচে যাওয়া, সর্বোপরি সবকিছুই এখান থেকে মুছে ফেলা।

গাজা দখলে নিতে শুরুর দিকে উত্তর সীমান্ত থেকে গাজা শহর পর্যন্ত লাখ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু দক্ষিণেও কোনো আশ্রয় নেই; এটি কোনো নিরাপদ অঞ্চল নয়। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা প্রাণে বাঁচতে বোমা এবং সমুদ্রের মধ্যে আটকা পড়েছেন। এই যুদ্ধের নৃশংসতা থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই তাদের। ঠিক একই বাস্তবতা সাংবাদিকদেরও। যারা এখানে রীতিমত আটকা পড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধ্য হচ্ছেনÑযেখানে বেঁচে থাকা প্রতিদিনই অসম্ভব হয়ে উঠছে।

এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বহু সদস্য রাষ্ট্র এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এটি গাজার জীবিত বা মৃতদের জন্য কোনো ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করবে না। কূটনীতি ঠিকই এগিয়ে চলছে; তবে তা এক কোটি প্রাণের অপূরণীয় ক্ষতির পর। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই সাক্ষীরূপী সাংবাদিকদের রক্ষা করবে কে? পক্ষাঘাতগ্রস্ত জাতিসংঘ বা বৃহৎ সংস্থাগুলো তো নয়ই। কারণ, এদের অনেকেই ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে নীরবতা পালন করে আসছে। আর এসব কারণেই সাংবাদিকরা একাই তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা গাজাবাসীর জন্য লড়বেন মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।

এদিকে, গাজায় গত দুবছরে অন্তত ৫৬২ ত্রাণকর্মী ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের জানান, দেইর আল-বালাহতে এক হামলায় মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) একজন কর্মী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন চারজন। হামলার সময় এমএসএফের দলটি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিল।

তিনি আরো বলেন, ৭ অক্টোবরের পর এ নিয়ে মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের ১৪ কর্মীতে হত্যা করেছে আইডিএফ। নিহত এমএসএফের কর্মীর নাম ওমর হায়েক, বয়স ৪২ বছর। তিনি ২০১৮ সাল থেকে পেশাগত থেরাপিস্ট হিসেবে এ সংস্থার সঙ্গে কাজ করছিলেন।

এমএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতসহ সব কর্মী এমএসএফের পরিচিতি এবং চিহ্নিত ভেস্ট পরা ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ পর্যন্ত নিহত ত্রাণকর্মীর মধ্যে ৩৭৬ জনই জাতিসংঘের কর্মী।

ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। এছাড়া রয়েছেন ত্রাণ ও গণমাধ্যমকর্মী। টানা বোমা হামলার ফলে এই উপত্যকা এখন সম্পূর্ণ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিস্তার ঘটেছে ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টিসহ নানা রোগের।

গত বছরের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।

৩০০ কোটি টাকা বাজেটে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন ভারতে

যে কারণে ফিলিস্তিনি নেতা বারঘুতিকে হত্যা করতে চায় ইসরাইল

আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে নিহত ৫

হাসিনার অবস্থান ও ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে যা বলল ভারত

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মুসলিম ঐতিহ্য রক্ষার আহ্বান পাকিস্তানের

গাজার বাসিন্দাদের নিয়ে ইসরাইলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান ৮ মুসলিম দেশের

৪ আফগান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো অস্ট্রেলিয়া

সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক তালিকা থেকে সিরিয়াকে বাদ দিল কানাডা

আসিম মুনিরকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলায় ইমরান খানকে যা বলল সেনাবাহিনী

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে শুনানি করবে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট