যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) দেশজুড়ে সব এমডি-১১ কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার তারা জানায় কেন্টাকিতে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার পর অবিলম্বে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত উড্ডয়ন বন্ধ থাকবে ।
গত মঙ্গলবার ইউপিএস পরিচালিত একটি ম্যাকডনেল ডগলাস এমডি-১১ (McDonnell Douglas MD-11) বিমান লুইসভিল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায়। দুর্ঘটনায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। বিমানে তিনজন ক্রু সদস্য ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর ইউপিএস ও ফেডএক্স উভয় প্রতিষ্ঠান তাদের এমডি-১১ বহর সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে বিমান নির্মাতা বোয়িং, যা ১৯৯৭ সালে ম্যাকডনেল ডগলাসকে অধিগ্রহণ করে, সব অপারেটরকে এই মডেলের বিমান ব্যবহার স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
শনিবার জারি করা এফএএ-এর জরুরি নির্দেশে বলা হয়, “প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই মডেলের কোনো বিমান উড্ডয়ন করতে পারবে না।”
নির্দেশনা অনুযায়ী, এটি এমডি-১১ এবং এমডি-১১এফ মডেলের জন্য প্রযোজ্য। এফএএ জানিয়েছে “উড্ডয়নের সময় বাম পাশের ইঞ্জিন ও পাইলন আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই অনিরাপদ অবস্থা অন্য একই ধরনের বিমানে বিদ্যমান থাকতে পারে বা তৈরি হতে পারে।”
ইউপিএস জানিয়েছে, তারা “নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সতর্কতার কারণে” তাদের এমডি-১১ বহর সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই মডেলটি কোম্পানির মোট বহরের প্রায় ৯ শতাংশ।
ফেডএক্স শনিবার জানিয়েছে, তারাও ৭০০ বিমানের বহরের মধ্যে ২৮টি এমডি-১১ বিমান স্থগিত করেছে এবং নিরাপত্তা পর্যালোচনা চালাচ্ছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে এমডি-১১ ব্যবহারকারী একমাত্র অন্য সংস্থা হলো ওয়েস্টার্ন গ্লোবাল এয়ারলাইনস।
কেন্টাকি গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার জানিয়েছেন, ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আরও একজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ জন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X (টুইটার)-এ লিখেছেন, “এই ভয়াবহ ঘটনায় নিহতদের পরিবার, লুইসভিল সম্প্রদায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য প্রার্থনা করুন।”
বিমানটি প্রায় ৩৮,০০০ গ্যালন (১,৪৪,০০০ লিটার) জ্বালানি বহন করছিল হাওয়াইগামী দীর্ঘপাল্লার ফ্লাইটের জন্য। এটি সামান্য ব্যবধানে একটি ফোর্ড গাড়ি উৎপাদন কারখানা, যেখানে প্রায় ৩,০০০ কর্মী কাজ করেন, সেটি এড়িয়ে যায়।
অ্যারিয়াল ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংসাবশেষের দীর্ঘ সারি এবং দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে কাজ করছে, আকাশে ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) জানিয়েছে, তারা বিমানের ব্ল্যাক বক্স — অর্থাৎ ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করেছে, যা বিশ্লেষণের জন্য ওয়াশিংটনে পাঠানো হবে।
এই দুর্ঘটনাটি ইউপিএস-এর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোম্পানির প্রধান কার্গো হাব ওয়ার্ল্ডপোর্ট লুইসভিলেই অবস্থিত, যেখানে হাজার হাজার মানুষ কর্মরত।
এনটিএসবি জানায়, বিধ্বস্ত বিমানটি ১৯৯১ সালে তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে কার্গো বহনে উপযোগী করে রূপান্তরিত করা হয়।
এই দুর্ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সরকারি অচলাবস্থার (Government Shutdown) সময়। পরিবহন সচিব শন ডাফি সতর্ক করেছিলেন, বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্মী সংকটের কারণে “আকাশপথে বিশৃঙ্খলা” দেখা দিতে পারে।
তবে এনটিএসবি জানিয়েছে, লুইসভিল বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার সময় কোনো কর্মী ঘাটতি ছিল বলে তারা কোনো তথ্য পায়নি।
সূত্র: এএফপি
এসআর