হোম > বিশ্ব

শুল্ক নীতি নিয়ে উচ্চ আদালতে শুনানি, তীব্র প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প

আমার দেশ অনলাইন

ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপক শুল্ক প্রয়োগ নিয়ে এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বুধবার তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মামলা প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হোয়াইট হাউজের আমদানি শুল্ক আরোপের যুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যাদের মধ্যে একাধিক রক্ষণশীলও রয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্টের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তি পুনরুদ্ধার ও বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে এই শুল্ক প্রয়োজনীয়।

একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এই পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে কার্যত করের সমান এই শুল্ক আরোপ করেছেন।

নয়জনের মধ্যে ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়ে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সাধারণত বড় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েক মাস সময় নেয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই মামলায় আদালত দ্রুত রায় দিতে পারে। একে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্প্রসারণ প্রচেষ্টার প্রথম বড় পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কি আপনার বক্তব্য এই যে প্রতিটি দেশকেই প্রতিরক্ষা ও শিল্পের জন্য হুমকি বিবেচনা করে শুল্ক আরোপ করতে হয়েছে? যেমন, স্পেন? ফ্রান্স?’ অ্যামি কনি ব্যারেটকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

বিচারপতি বলেন, ‘কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা বোঝা যায়, কিন্তু আমাকে বোঝান এতগুলো দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক নীতি প্রয়োগের প্রয়োজন কেন পড়ল?’

বিলিয়ন ডলারের শুল্ক অর্থ ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি ট্রাম্প প্রশাসন মামলায় হেরে যায়, তাহলে সরকারকে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ ফেরত দিতে হতে পারে—যা ব্যারেটের ভাষায় ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে শুনানিতে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার উপস্থিত ছিলেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, আদালত যদি তাদের পক্ষে রায় না দেয়, তবে তারা বিকল্প পথ খুঁজবে।

শুনানির আগে এক বিবৃতিতে বলেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘হোয়াইট হাউজ সবসময়ই ‘প্ল্যান বি’-এর জন্য প্রস্তুত থাকে।’

‘দেশ-ধ্বংসকারী’ সংকট নিয়ে বিতর্ক:

১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আইইইপিএ) আইনকে কেন্দ্র করে মামলাটি চলছে, যেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে বাণিজ্য ‘নিয়ন্ত্রণের’ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর কর আরোপ করতে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো আইইইপিএ ব্যবহার করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, এসব দেশ থেকে পাচার হয়ে আসা মাদক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ধরনের ‘জরুরি অবস্থা’ সৃষ্টি করেছে।

এরপর এপ্রিল মাসে তিনি আবারো একই আইন প্রয়োগ করে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। সেসময় তার যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি অর্থাৎ রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি হওয়া ‘অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক হুমকি’ তৈরি করছে।

গ্রীষ্মজুড়ে এই শুল্কগুলো ধীরে ধীরে কার্যকর হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশকে ‘চুক্তি করতে’ চাপ দিচ্ছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার মধ্যে শুল্ক আরোপের ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত। তাদের যুক্তি, দেশটি এমন একাধিক ‘দেশ-ধ্বংসকারী ও অস্থিতিশীল’ সংকটের মুখোমুখি, যা প্রেসিডেন্টের জরুরি পদক্ষেপকে যৌক্তিক করে তোলে।

প্রশাসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে সলিসিটর জেনারেল জন সাউয়ার সতর্ক করেন, যদি আদালত ট্রাম্পের শুল্ক ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষ্ঠুর বাণিজ্য প্রতিশোধের’ মুখে পড়বে আর এর ফলে ‘অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ দেখা দিতে পারে।

মামলার প্রভাব:

বিচারপতিদের প্রশ্নগুলো থেকে বোঝা গেছে, এই মামলায় প্রশাসনের পক্ষে রায় গেলে ভবিষ্যতের জন্য তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করছেন।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বলেন, ‘এই যুক্তিটি এমন এক ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে যা প্রেসিডেন্টকে যেকোনো দেশ থেকে, যেকোনো পণ্যের ওপর, যেকোনো পরিমাণে এবং অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্ক আরোপের সুযোগ দেয়।’

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কর আরোপের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নয় বরং কংগ্রেসের হাতে। আদালত সবসময়ই এই ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে এসেছে।

রক্ষণশীল বিচারপতি নিল গোরসাচ প্রশ্ন তোলেন, এই প্রেক্ষাপটে যদি আদালত ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, ‘তাহলে বিদেশি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের সমস্ত দায়িত্ব ত্যাগ করতে কংগ্রেসকে কী বাধা দেবে?’

তিনি আরো বলেন, সাউয়ারের উপস্থাপিত যুক্তিগুলো ‘গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।’

তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকি মোকাবিলার অজুহাতে প্রেসিডেন্ট কি বিদেশ থেকে গ্যাসচালিত গাড়ি ও অটো পার্টসের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন?’

শুল্ক বনাম কর:

চ্যালেঞ্জ জানানো অঙ্গরাজ্য ও বেসরকারি গোষ্ঠীর আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আইনে কোথাও শুল্ক শব্দটির উল্লেখ নেই। তাদের দাবি, কংগ্রেস কখনোই প্রেসিডেন্টকে এমন অসীম ক্ষমতা দিতে চায়নি যা বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্কনীতিকে এক ঝটকায় বাতিল করার সুযোগ দেয়।

বেসরকারি ব্যবসার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে নিল কাটিয়াল বলেন, আইনটি নিষেধাজ্ঞা বা কোটার মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে বাণিজ্য বন্ধ করার ক্ষমতা দেয়, কিন্তু রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না।

ফেরতযোগ্য অর্থ বা প্রেসিডেন্টের জরুরি ঘোষণা যৌক্তিক ছিল কি না—এসব বিষয়ে বিচারপতিরা খুব বেশি সময় ব্যয় করেননি। বরং তাদের মনোযোগ ছিল আইইইপিএ আইনের ভাষা ও ইতিহাসের ওপর। মূলত নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রেসিডেন্টরা অতীতে এই আইন ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পই প্রথম শুল্কের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করেছেন।

সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল জন সাউয়ার যুক্তি দেন, শুল্ককে কর নয়, বরং প্রেসিডেন্টকে প্রদত্ত অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার স্বাভাবিক সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা উচিত।

তিনি বলেন, ‘আমি যতই বলি কম হবে—এটি একটি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, কর নয়।’

আরেক পর্যায়ে তিনি যুক্তি দেন, রাজস্ব আদায়ের দিকটি ‘কেবল ঘটনাচক্রে’ ছিল, যদিও প্রেসিডেন্ট নিজে শুল্ক থেকে আদায় করা অর্থ নিয়ে প্রায়ই গর্ব প্রকাশ করেছেন।

শুল্ক ও করের পার্থক্যটি অনেক বিচারপতির কাছেই একটি বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে।

বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র বলেন, ‘আপনি বলতে চান শুল্ক কর নয়, কিন্তু বাস্তবে সেটাই তো কর।’

অন্যদিকে কিছু বিচারপতি জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির প্রেক্ষাপটে সীমা আরোপের যৌক্তিকতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

বিচারপতি ব্রেট ক্যাভানফ বলেন, প্রেসিডেন্টকে বাণিজ্য বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া, কিন্তু এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে না পারা ‘কমন সেন্স’ বলে মনে হয় না।

পূর্ণ আদালতের প্রতিক্রিয়া:

ওয়েলস ফার্গোর বিশ্লেষকদের মতে, ইতোমধ্যেই দেয়া প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি শুল্কে মামলাটির প্রভাব পড়তে পারে, যা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মোট শুল্ক আয়ের প্রায় অর্ধেক। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, যদি আদালত জুন পর্যন্ত রায় দিতে দেরি করে, তাহলে এই অঙ্ক এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

বুধবার ভরা আদালতে প্রায় তিন ঘণ্টা যুক্তিতর্ক চলেছে, যা বিচারপতিদের বরাদ্দ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি যদি ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেন, তবে তা প্রশাসনের বিপক্ষে পূর্ববর্তী নিম্ন আদালতের তিনটি রায় বাতিল করবে।

আদালতের বাইরে সিঁড়িতে বসে ছিলেন সারাহ ওয়েলস ব্যাগসের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা সারাহ ওয়েলস। আরো কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে শুনানি শুনছিলেন তিনি।

তার প্রতিষ্ঠানটি স্তন্যপান যন্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যাগ তৈরি করে, যার বেশিরভাগই বিদেশে উৎপাদিত। এই বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ২০ হাজার ডলার অপ্রত্যাশিত শুল্ক দিতে হয়েছে। এরপর তারা সরবরাহ চেইন পরিবর্তনের চেষ্টায় পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে কোম্পানিটি মজুত ফুরিয়ে ফেলেছে, নতুন পণ্যের মান উন্নয়ন স্থগিত করেছে এবং কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে।

তবুও শুনানি শুনে ওয়েলস আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তারা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে প্রেসিডেন্ট আইইইপিএ আইনের আওতায় যে পরিমাণ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, তা সীমা অতিক্রম করেছে। আমার বিশ্বাস বিচারপতিরাও উপলব্ধি করছেন, এই ক্ষমতার লাগাম টানা প্রয়োজন।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করলেন পোপ লিও

ঢাকা-ওয়াশিংটন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, ভারতের ঘুম হারাম

কে এই সুদানি জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো

অস্ট্রেলিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট নিহত

নিউ ইয়র্কের ভাবী ফার্স্ট লেডি পেশায় একজন শিল্পী

যেভাবে ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে বিজয়ী ইরান

শান্তি আলোচনায় ফের ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

চরম নিরাপত্তাহীনতায় সুদানের বাস্তুচ্যুত ৮১ হাজার মানুষ: জাতিসংঘ

সরকারি শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে ১০% ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ

জয়ী হওয়ার পর এখন যেসব চ্যালেঞ্জ মামদানির সামনে