হোম > বিশ্ব

বলিউডের ‘ধুরন্ধর’ সিনেমা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে

আমার দেশ অনলাইন

চলচ্চিত্র নির্মাতা আদিত্য ধর পরিচালিত ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর থেকেই ভারতীয় সিনেমাপ্রেমী ও রাজনীতিকদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ৫ ডিসেম্বর ভারতীয় সিনেমা হলগুলিতে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটির দৈর্ঘ্যে তিন ঘণ্টারও বেশি। এটি এই ছবির প্রথম পর্ব; দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাবে আগামী মার্চে ।

ছবিটি গোপন গোয়েন্দা অভিযান এবং জিওপলিটিক্যাল ঘটনার পটভূমিতে নির্মিত। এখানে ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান ছিনতাই, ২০০১ সালের ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলা এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে। ছবিটি আটটি চ্যাপ্টারে বিভক্ত এবং হাইড্রাম্যাডে রহস্য ও অ্যাকশন মিশিয়ে একটি টানটান গল্প বলেছে। তবে স্পাই থ্রিলার বা অ্যাকশন সিনেমার বাইরে ছবিটি রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি করেছে।

সমালোচকেরা বলছেন, ছবিটি হাইপার-ন্যাশনালিস্ট বা উগ্র জাতীয়তাবাদী সুরে নির্মিত হয়েছে। সিনেমার কিছু দৃশ্য ও সংলাপে সহিংসতা ও ধর্মীয় ইঙ্গিত রয়েছে, যা কিছু দর্শকের কাছে আপত্তিজনক মনে হচ্ছে। বলিউড তারকা হৃতিক রোশনও ইনস্টাগ্রামে মন্তব্য করেছেন, “আমি হয়তো ধুরন্ধর ছবিটির রাজনীতির সঙ্গে একমত নই।” তিনি মূলত ছবির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপি তারিক আনোয়ার মন্তব্য করেছেন, “যখন এতগুলো ইসলামী দেশ ছবিটিকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করেছে, তখন আমাদেরও ভাবা উচিত এতে কী আছে।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ছবিতে ইসলাম-বিদ্বেষী বিষয়বস্তু থাকায় এটি নিষিদ্ধ হতে পারে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান ভীম সিং চন্দ্রবংশী মনে করেন, ছবিটি কেবল সন্ত্রাসবাদের গল্প বলেছে। তিনি বলেন, “যদি সন্ত্রাসীদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হন, তা পরিচালককে দায়ী করা যায় না।”

ছবির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ‘অজয় সান্যালে’-এর চরিত্রে মাধবনের অভিনয়। তার লুক, মেকআপ ও বেশভুষায় অজিত ডোভালের আদল স্পষ্ট। আদিত্য ধরের পূর্ববর্তী ছবি ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এও প্রধান চরিত্রে অজিত ডোভালের আদলে দেখা গিয়েছিল। এই ধারার সিনেমাগুলো সাধারণত সরকারের বা ক্ষমতাসীন দলের ন্যারেটিভকে সমর্থন করে, যা বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রচারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ছবিটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ উপসাগরীয় অনেক দেশে মুক্তির অনুমতি পায়নি। তবে ভারতীয় সিনেমাহলগুলোতে মুক্তির ১০ দিন পরও গভীর রাতের শো পর্যন্ত ছবিটি হাউসফুল চলছে।

'বলিউড এখন সরকারি মুখপাত্রের ভূমিকায়'

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিককালে বলিউডের কিছু ছবি সরকারের নীতি ও জাতীয় মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং হিন্দুরাষ্ট্র এজেন্ডার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সিনেমা বানানো হচ্ছে, যা সরকারের ন্যারেটিভকে সমর্থন করছে। বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঝা বলেন, “২০১৪ সালের পর থেকে বলিউডের অনেক ছবি সরকারের উদ্দেশ্য প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ‘ধুরন্ধর’ও তার ধারাবাহিক উদাহরণ।”

অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র রোহন গুপ্তা বলেছেন, ছবিটি সত্য ঘটনাকে ভিত্তি করে নির্মিত এবং দর্শকই শেষ পর্যন্ত ঠিক করবেন কোনটি সঠিক বা অনুচিত। তিনি বলেন, “ধর্ম বা রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সৃষ্টিশীল কাজকে খারিজ করা উচিত নয়।”

দর্শকরা এই বিতর্ককে ছাড়িয়ে ছবির সিনেমাটিক নির্মাণ, গল্প বলার মুন্সিয়ানার প্রশংসা করেছেন। তবে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই সিনেমা প্রথম পর্বে দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, গোয়েন্দা অভিযান ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা ঘটনা তুলে ধরে।

তিন মাস পরে ‘ধুরন্ধর’-এর দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাবে। ধারণা করা হচ্ছে, তখনও ছবির রাজনীতি, ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত বিতর্ক নতুন করে শুরু হবে। ফলে বলিউডে ‘ধুরন্ধর’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ন্যারেটিভ নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসআর

ধসে পড়ল ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির’ ১১০ ফুট উঁচু রেপ্লিকা

সেই মুসলিমকে ‘জাতীয় হিরো’ আখ্যা দিয়ে যা বললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ায় হামলাকারী সেই বন্দুকধারী আসলেই পাকিস্তানি নাকি ভারতীয়

নিজ আকাশসীমার কাছে অজ্ঞাত ড্রোন ভূপাতিত করলো তুরস্ক

মেসির সফরে বিশৃঙ্খলার জেরে পদত্যাগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী

এবার ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন

জিমি লাইয়ের সাজায় দুঃখিত ট্রাম্প, মুক্তি দিতে জিনপিংকে অনুরোধ

৪০ দিনের বেশি অনশনে গুরুতর অসুস্থ ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ বিক্ষোভকারীরা

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রযুক্তি চুক্তি স্থগিত করল ট্রাম্প

নারী চিকিৎসকের হিজাব টেনে খুললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী