ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত রোববার থেকে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিহার করতে এবং পাকিস্তানের বিষয়ে সম্ভাব্য আলোচনা এড়াতেই সম্মেলনে অংশ নেননি তিনি।
ভারতীয় সরকারের কর্মকর্তারা শঙ্কিত ছিলেন, মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প গত মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চারদিনের সংঘর্ষ মীমাংসায় তিনি মধ্যস্থতা করেছেন বলে দাবি করতে পারেন। ভারত এ মধ্যস্থতার দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ততার দিকে যাচ্ছে। আগস্টে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে ২৫ ভাগ শুল্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি রাশিয়ার তেল কেনার জন্য আরোপ করা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিষয়ে মীমাংসার জন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে; কিন্তু চুক্তির কোনো ধরনের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে না।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও ভারতীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত কোনো ফলাফলের প্রত্যাশা করছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে দুই দেশের নেতার মধ্যে ফোনালাপেও নয়াদিল্লির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে আগামী সপ্তাহে ভারতের বিহারে প্রাদেশিক বিধানসভা নির্বাচন হবে। এর জন্য জোর প্রচার চালাচ্ছেন মোদি। এ প্রচারের মধ্যেই ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লজ্জিত হতে চান না তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিহারে দলের প্রচারে মূল চরিত্রই মোদির।
এ সময় ট্রাম্পের যে কোনো মন্তব্য, বিশেষ করে পাকিস্তানের বিষয়ে মন্তব্য মোদির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন এবং এতে নির্বাচনে ভোটের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ই মন্তব্য করেছেন, দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধে তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। এর জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে তার সাম্প্রতিক সফরের অন্য একটি উদ্দেশ্য থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরে অংশ নেওয়া।
গত মঙ্গলবার জাপানের টোকিওতে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আবার পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার দাবি করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যচুক্তির জোরে তিনি সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধ থামিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ফিল্ড মার্শালকে বলেছি—দেখুন, আপনারা যদি লড়াই করতে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য করব না।’
ভারতের অবস্থানের বিপরীতে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রশংসা করেন।
আসিয়ান সম্মেলনে মোদির অনুপস্থিতি বিরল ঘটনা। ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মোদি শুধু ২০২২ সাল ছাড়া প্রতিবারই এ সম্মেলনে যোগ দিয়ে আসছেন। এছাড়া ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে এ সম্মেলন ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় আয়োজন করা হয়।
এর আগে মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা একে অপরের জন্য নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছেন। ভারতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা, বিশেষ করে জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী এর সমালোচনা করে এসেছেন। রাহুল অভিযোগ করেন, ট্রাম্পকে ভয় পান মোদি।
গত জুনে ৩৫ মিনিটের উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনার পর ট্রাম্প ও মোদির সম্পর্কের পারদ নিচে নেমে আসে। পরে দুই নেতাই তাদের মধ্যে মিটমাট করে নিয়েছিলেন এবং গত সেপ্টেম্বর থেকে অন্তত তিনবারের মতো তাদের কথা হয়েছে। তবে আলোচনা সত্ত্বেও মোদির সম্মেলনে অংশগ্রহণে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত থেকে প্রকাশিত হয় তিনি (মোদি) ট্রাম্পের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে চাচ্ছেন, যাতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়।
সূত্র: ব্লুমবার্গ