দুবাই এয়ার শোতে বিধ্বস্ত তেজস ফাইটার
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ‘এয়ার শো’ চলাকালে বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান তেজস। এ সময় নিহত হন পাইলট উইং কমান্ডার নমন স্যায়াল। দুবাইয়ের আল-মাখতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে আছড়ে পড়ার পর পরই মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় ওই যুদ্ধবিমানে।
এ ঘটনাকে ভারতের দর্পচূর্ণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কেননা এ অঞ্চলে আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দেশটি ‘তেজস’ যুদ্ধবিমানকে তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে। সেই অস্ত্রই দুবাইয়ে প্রদর্শনীর ভরা মজলিসে আকাশ থেকে হুড়মুড় করে খসে পড়ল। যা দিল্লির জন্য নিয়ে এলো রাজ্যের অপমান। যেখানে যুদ্ধবিমানটির কার্যকারিতা দেখিয়ে ক্রেতা খুঁজে নেওয়ার কথা ছিল তেজসের, সেখানেই এটি ডাহা ফেল করল।
এমনিতেই ভারত আকাশ প্রতিরক্ষায় বেশ বেকায়দায় রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে কাশ্মীরে হামলার অভিযোগ তুলে আগ বাড়িয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধায় দিল্লি। সে সময় পাকিস্তান ভারতের সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে বলে দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করতে ছাড়ছেন না। তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সামরিক উত্তেজনার সময় সাতটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল।’ এর আগেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন। যা ভারতের জন্য গ্লানি বয়ে নিয়ে আসছে।
চীন ও পাকিস্তানকে কাবু করতে দীর্ঘদিন ধরে আকাশে শক্তি বৃদ্ধি করছে ভারত। তাদের বহরে রয়েছে রাশিয়া ও ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক সব যুদ্ধবিমান। কিন্তু চারদিনের যুদ্ধে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান হারানোর পর মর্যাদাপূর্ণ একটি এয়ার শোতে তেজসের পালকে যুক্ত হলো অপমান। ফলে বহরের পরিধি বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে আকাশে দিল্লির শক্তি বৃদ্ধির কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না।
কী হয়েছিল
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ভারতীয় যুদ্ধবিমানটি কম উচ্চতায় ‘অ্যারোবেটিক ডেমোনস্ট্রেশন সর্টি’ (বিমান এবং চালকের উন্নত ক্ষমতা প্রদর্শন করতে) প্রদর্শনের সময় ‘নেগেটিভ জি-টার্ন’ করতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
নেগেটিভ জি-টার্ন বলতে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে গিয়ে বিমানের কারসাজিকে বোঝায়। অনুমান করা হচ্ছে, নেগেটিভ জি-টার্ন করার সময় কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তেজস।
শোক জানিয়েছে পাকিস্তান
দুর্ঘটনার পর একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। এতে বলা হয়, দুবাইয়ে ‘এয়ার শো’ চলাকালে ভারতীয় বায়ুসেনার তেজস যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনায় পাইলট নিহত হন। নিহত পাইলটের শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে রয়েছি আমরা। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে।
ভারতীয় পাইলট নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক জানিয়েছে ‘শত্রু দেশ’ পাকিস্তান। পাইলটের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ‘শুধু আকাশে’।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানিদের নানা ধরনের রসিকতা করতে দেখা গেছে। বাকির সাজ্জাদ নামে একজন এক্সে লিখেছেন—‘ভারতীয় সমুছা। দুঃখিত, তেজস দুবাইয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। কারণ বিদেশিদের মুগ্ধ করার জন্য পাঠানোর আগে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তেলের ট্যাংকের ফুটো ঠিক করতে পারেনি।’
দেশজ যুদ্ধবিমান
তেজস একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি একেবারে দেশীয় যুদ্ধবিমান, যেটি তৈরি করেছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) নামক সংস্থা।
প্রযুক্তি ও ক্ষমতার দিক থেকে এ বিমানটি দূর থেকে শত্রু বিমানকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নিশানা করতে পারে। শুধু তাই নয়, শত্রুর রাডার এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও রাখে।
তেজস ২০০৪ সাল থেকে আপগ্রেড করা এফ৪০৪-জিই-আইএন২০ ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে তেজস মার্ক-১ সংস্করণটি বর্তমানে এফ৪০৪ আইএন২০ ইঞ্জিন ব্যবহার করে। ‘মার্ক-১এ’ সংস্করণেও একই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে।
তেজস যুদ্ধবিমান সুখোই যুদ্ধবিমানের তুলনায় হালকা এবং ৮-৯ টন ওজন বহন করতে পারে। তাছাড়া তারা ৫২ হাজার ফুট উচ্চতায় শব্দের গতির সমান, অর্থাৎ ম্যাক ১ দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ৮ গতিতে উড়তে পারে।
তেজসে বেশকিছু প্রযুক্তি রয়েছে যেমন—গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ক্ষমতার জন্য সক্রিয় ইলেকট্রনিকভাবে স্ক্যান করতে সক্ষম রাডার, বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ মিসাইল, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এবং এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিংয়ের (আকাশে জ্বালানি ভরা) ব্যবস্থা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৯৭টি তেজস বিমান কেনার জন্য হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। অনুমান করা হচ্ছে ২০২৭ সালে এর সরবরাহ শুরু হবে।
২০২১ সালের শুরুর দিকে ভারত সরকার ৮৩টি তেজস বিমানের জন্য এইচএএলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কথা ছিল ২০২৪ সালের মধ্যে বিমান সরবরাহ করবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ইঞ্জিনের ঘাটতির কারণে দেরি হয়।
এর আগে ২০২৪ সালে রাজস্থানে বিমান বাহিনীর একটি মহড়ার সময় তেজস মার্ক-১ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। তবে পাইলট ইজেক্ট করে বেরিয়ে এসেছিলেন।