সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে: কাদের গনি চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৫১

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন,সংস্কৃতি হচ্ছে সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে, জীবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে।সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয়,হিংসা বিদ্বেষ নাশ হয়, জীবনকে মহিমান্বিত করে। অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না,ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণকে শালীনতা দেয় না।

শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ কালচারাল রিপোরেটার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এসব বলেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অভি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কন্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন, বিশ্ব বরেণ্য যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, তাশিক আহমেদ,জিয়াউল কবির সুমন,এরফানুল হক নাহিদ, রাজু আলীম, কামরুল হাসান দর্পণ, রিমন মাহফুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দুলাল খান ও পান্থ আফজাল।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন,সংস্কৃতি জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তাঁর মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে গ্রামকে হৃষ্টপুষ্ট করতে হবে আবহমান ঐতিহ্যের রূপরসে। ফিরিয়ে আনতে হবে গ্রামের খোলা প্রান্তর, সবুজ খেলার মাঠ। নদী, খাল, বিল, জলাশয়কে দখলমুক্ত করে নাইয়রী আনার, নৌকাবাইচের উপযোগী করতে হবে। লোকনৃত্য, জারি, সারি, আউল,বাউল, মুর্শিদী, ভান্ডারী,ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, লোকগীতি, ফোক ও ফোকলোর, লালনগীতি, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রগীতি, হাসান রাজার গান হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।।নতুন প্রজন্মকে মুঠোফোনের ঝাঁঝালো রশ্মি থেকে ফিরিয়ে এনে দেখাতে হবে সিগ্ধ চাঁদের আলো, শরতের আকাশ, তারা ভরা রাত। ফেরাতে হবে যাত্রাপালা, কবি গানের লড়াই। তবেই না নতুন প্রজন্ম গেয়ে উঠবে কবি শামসুর রাহমানের লেখা ও জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লার গাওয়া গান-

ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে

ধুধু বালু চরে, পাখিদের নীড়ে

তুমি আমি লিখি প্রাণের বর্ণমালা।

সুস্থ সংস্কৃতির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জানি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। এরা একে অন্যের পরিপূরক। আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে।

সাংবাদিকদের এনেতা বলেন,আমাদের সংস্কৃতির মেরুদণ্ডে আঘাত এসেছে বার বার। উর্দুকে জাতীয় ভাষা বলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জিন্নাহ। পারেননি। বিগত সরকার আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিতে চেয়েছিল।পারেনি। ছাত্ররা রুখে দিয়েছে।বাংলা ভাষা, বাক স্বাধীনতা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যাবে না। কিন্তু চেষ্টা যে চলছে না- তা কিন্তু নয়।সংস্কৃতির একটা নিজস্ব শক্তি আছে। কী সেই শক্তি তা আমরা ৫২, ৬৯, ৭০, ৭১-এ দেখেছি। দেখেছি ৯০ এবং ২০২৪ এও। তাহলে আমরা আমাদের অতীত ভুলে যাচ্ছি কেন?

তিনি আক্ষেপ করে বলেন,আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। এ ধরনের স্ববিরোধী সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে কি আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব? শেকড়ের সন্ধান একদিন আমাদের করতেই হবে। ফিরে যেতে হবে শেকড়ের টানে। সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ, যা জীবনাচরণে ফুটে ওঠে। এটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। মুখে এক আর কাজে অন্য- এভাবে আর যাই হোক বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

আমার দেশ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত