কখন আপনার চুল পাকতে শুরু করবে তা নির্ধারণে জিনগত প্রভাবই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। চিকিৎসকরা বলছেন, অকালপক্ব চুল নিয়ে উদ্বিগ্ন তরুণ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে যাদের বেশিরভাগের বয়স ২০ ও ৩০-এর কোঠার শুরুর দিকে।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা মানুষের ক্ষেত্রে ককেশীয়দের চুল সাধারণত ৩৫ বছর বয়সে পাকা শুরু করে। এশিয়ান ও আফ্রিকানদের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত আরও ১০ বছর পরে দেখা যায়।
এই বয়সের আগেই চুল পাকা শুরু হলে তাকে অকালপক্ব বলা হয় যার মানে ককেশীয়দের ক্ষেত্রে ২০ বছরের আগে, এশিয়ানদের ক্ষেত্রে ২৫ বছরের আগে এবং আফ্রিকানদের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের আগে চুল পাকা স্বাভাবিক নয়।
এই সীমাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে কারণ চুলের রং তৈরি করার জিনগত প্রক্রিয়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে ভিন্নভাবে কাজ করে, কিছু জাতির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একটু দেরিতে বন্ধ হয়।
এভাবেই আমরা জানি কখন অন্য কারণ খুঁজতে হবে এবং কখন এটি স্বাভাবিক বার্ধক্যের একটি অংশ হিসেবে বিবেচ্য, বলেন যুক্তরাজ্যের সাধারণ চিকিৎসক সেরমেদ মেজহার।
চুল কেন সাদা বা ধূসর হয়
ত্বকের লোমকূপ থেকে নতুন চুল গজায়, যেখানে মেলানোসাইট নামের রঞ্জক বা রঙ উৎপাদনকারী কোষগুলো থাকে। মেলানোসাইট দুই ধরনের মেলানিন পিগমেন্ট উৎপাদন করে ইউমেলানিন যা চুলের গাঢ় রঙ নির্ধারণ করে এবং ফিওমেলানিন যা চুলের লাল বা হলুদ রঙ ঠিক করে। এই পিগমেন্টগুলো ত্বকের রঙ ও চোখের রঙকেও প্রভাবিত করে।
কোষের বুড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চুলের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝরে পড়ে এবং বারবার নতুন করে জন্মায়। এর ফলে মেলানোসাইট স্টেম কোষের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে তাদের কাজে দুর্বল হয়ে পড়ে।
স্টেম কোষগুলো লোমকূপ ভেতর ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে স্থির হয়ে যায়, ফলে তারা আর পূর্ণাঙ্গ মেলানোসাইটে পরিণত হতে পারে না। রঙ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চুল ধূসর, সাদা বা রূপালি হয়ে যায়।
অপুষ্টি কি আগেভাগে চুল পাকায়
ত্বক ও চুলের রঙ নিয়ন্ত্রণকারী কোষগুলো তীব্র মানসিক বা শারীরিক চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের গবেষকেরা। তবে বিশেষজ্ঞরা এমনও বলেন, আগেভাগে চুল পাকা অনেক সময় পুষ্টিহীনতা বা পুষ্টি-ঘাটতির লক্ষণও হতে পারে, যা সমাধান করা প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি ও বি–১২, কপার, আয়রন, জিংক এবং ফোলেটের ঘাটতির সঙ্গে আগাম চুল পাকার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভিটামিন বি–১২-এর ঘাটতিকে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়।
ভিটামিন বি–১২, যাকে কোবলামিনও বলা হয়, সুস্থ লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই রক্তকণিকা চুলের লোমকূপসহ সারা শরীরে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। রঙ তৈরির প্রক্রিয়া সচল রাখতে রন্ধ্রে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
বি–১২ মূলত প্রাণিজ খাদ্য থেকেই পাওয়া যায়। কেউ যদি সম্পূর্ণ ভেগান বা শাকাহারি হন এবং কোনো সাপ্লিমেন্ট না নেন, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এটিই প্রথমে পরীক্ষা করার বিষয়, বলেন ডা. মেজহের ।
এদিকে, কপার বা তামা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি টায়রোসিনেজ নামের একটি এনজাইম সক্রিয় করে যা মেলানিন তৈরিতে সাহায্য করে। শেলফিশ বা ঝিনুকজাতীয় খাবার, তিলের বীজ, গাঢ় সবুজ শাকসবজি এবং গরু ও ভেড়ার কলিজা হলো কপারের ভালো উৎস।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন যে জিংক বা ভিটামিন সি এর অতিরিক্ত গ্রহণ কপার শোষণে বাধা দিতে পারে, যার ফলে এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
সম্প্রতি অনেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে কোভিড মহামারির সময় বলেন পুষ্টিবিদ ও লেখক মারিয়া মার্লো, যার ২০-এর দশকেই চুল পাকা শুরু হয়েছিলো।
যদি সাপ্লিমেন্ট সঠিকভাবে তৈরি না হয়, তাহলে জিংক নিতে গিয়ে কপারের ঘাটতি তৈরি হতে পারে, বলেন তিনি। যদি আপনি জিংক সাপ্লিমেন্ট নিতে চান, তবে সবসময় জিংকের সঙ্গে কপারও নেওয়া উচিত অর্থাৎ দুটো একসঙ্গে নেওয়াই ভালো। অতিরিক্ত আয়রন বা অতিরিক্ত ভিটামিন সিও শরীরে কপারের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, যোগ করেন তিনি।

