থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১: ০৭

থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এই টিউমারগুলো থেকে ক্যানসারের ঝুঁকিও থেকে যায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো থাইরয়েড গ্রন্থিতেও টিউমার বা ক্যানসার হতে পারে। এ ধরনের ক্যানসারকে থাইরয়েড ক্যানসার বলে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর অংশবিশেষ ফুলে ওঠা মানেই কিন্তু ক্যানসার নয়। থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশের কোষ সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে তাকে থাইরয়েড ক্যানসার বলে। গত তিন দশকে থাইরয়েড ক্যানসারের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও থাইরয়েড ক্যানসার যে কারো মধ্যে ঘটতে পারে, একটি নির্দিষ্ট ঝুঁকির কারণ এটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

লিঙ্গ : থাইরয়েড ক্যানসার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি নারীদের মধ্যে সপ্তম সর্বাধিক প্রচলিত ক্যানসার হিসেবে স্থান পেয়েছে।

বয়স : থাইরয়েড ক্যানসার যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এটি সাধারণত ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে বেশি নির্ণয় করা হয়।

পারিবারিক ইতিহাস : আপনার পরিবারের কারো যদি থাইরয়েড ক্যানসার বা কিছু জেনেটিক সিন্ড্রোমের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে আপনার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। মেডুলারি টাইপ থাইরয়েড ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।

বিকিরণের সংস্পর্শ : বিকিরণের সংস্পর্শে, বিশেষ করে শৈশবকালে থাইরয়েড ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ থেকে বাঁচার জন্য মাথা ও ঘাড়ের অঞ্চলে বিকিরণ থেরাপি নেওয়ার সময় থাইরয়েডকে রক্ষা করার জন্য শিল্ড ব্যবহার করা উচিত। ইমেজিং পরীক্ষার সময় সর্বনিম্ন বিকিরণ ডোজ ব্যবহার করা উচিত, যা থেকে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী গলগণ্ড : দীর্ঘস্থায়ী গলগণ্ড ক্যানসারের সামান্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিস : হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিসের মতো একটি অটোইমিউনো অবস্থা ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে।

থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণ : গলার সম্মুখভাগে ফুলে ওঠা এবং এই ফোলা খাবার গ্রহণে ঢোক গেলার সময় ওঠানামা করে। ক্যানসার হলে সেই ফোলা অংশটি বেশ শক্ত হয়। সঙ্গে ওজন কমে যায়। থাইরয়েড গ্রন্থির আশপাশে একটি বা একাধিক টিউমার হতে পারে; উভয় পাশে টিউমার হতে পারে। আশপাশের লিম্ফ নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে। থাইরয়েড টিউমার স্নায়ুকে আক্রান্ত করলে গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে। গলার স্বর মোটা বা ফ্যাসফ্যাসে হতে পারে। থাইরয়েড টিউমার শ্বাসনালির ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা করলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব। তবে অবশ্যই সময়মতো সম্পূর্ণ চিকিৎসা করাতে হবে। গলার সামনে ফুলে উঠলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা (আলট্রাসনোগ্রাম, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট এবং সবচেয়ে স্পেসিফিক FNAC) করে দেখবেন এটা কোন ধরনের রোগ।

থাইরয়েড ক্যানেসারের চিকিৎসা : থাইরয়েড ক্যানসারের ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন বা সার্জারি করা। সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি বা ক্ষেত্রবিশেষে এর কিছু অংশ অপসারণ করা হয়। পরীক্ষার পর আক্রান্তের ধরনের ওপর নির্ভর করবে থাইরয়েড গ্রন্থির কতটুকু কাটতে হবে। এ রোগের জন্য দিতে হয় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থেরাপি। এই থেরাপিতে তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ব্যবহার করে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। অপারেশনের পর এর প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট ডোজের রেডিও আয়োডিন থেরাপি নেওয়া লাগতে পারে। হরমোন থেরাপির মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোন প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া রেডিয়েশন থেরাপিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে বিকিরণ ব্যবহার করা হয়। এনাপ্লাস্টিক নামক থাইরয়েড ক্যানসারে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। থাইরয়েড ক্যানসারের রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে অপারেশনের পর চিকিৎসকের অধীনে সারাজীবন ফলোআপে থাকতে হবে।

লেখক : আবাসিক সার্জন (ইএনটি)

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত