ডিজিটাল পেমেন্ট নিরাপত্তা

সুমাইয়া ইয়াসমিন সুম্মু
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ১৫

দেশের আর্থিক খাতে এখন চলছে ডিজিটাল বিপ্লব। নগদ অর্থ হাতে বহন করার ঝুঁকি কমে এসেছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) আর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের কারণে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত মানুষ আজ বিকাশ, নগদ কিংবা রকেটের মতো মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করছে। ব্যাংকের এটিএম বুথ কিংবা অনলাইন কেনাকাটাতেও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। তবে সুবিধার পাশাপাশি বেড়েছে প্রতারণা আর সাইবার অপরাধের ঝুঁকি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ অনলাইনে বা মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন করলেও সচেতনতার অভাবে অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে বড় অঙ্কের অর্থ হারাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতারকরা সাধারণত ভুয়া কল, মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পিন, পাসওয়ার্ড বা ওটিপি বের করার চেষ্টা করে। নিজেদের ব্যাংক কর্মকর্তা বা বিকাশ-নগদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তারা গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করে। অনেক সময় আবার ভুয়া ওয়েবসাইট বা লিংক পাঠিয়ে লগইন তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, কার্ড ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে তথ্য চুরি করা বেশ পরিচিত কৌশল। একবার কারো ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে মুহূর্তেই অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানগুলোর। অন্যদিকে ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক হতে হবে। বিকাশ বা নগদ ব্যবহারকারীরা যদি নিজের পিন কোড ও ওটিপি শুধু নিজের কাছেই রাখেন, তবে প্রতারণার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কোনো অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে কিংবা হঠাৎ মোবাইলে টাকা চলে এলে তার উৎস যাচাই না করে খরচ করা উচিত নয়। আবার সিম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এমএফএস অ্যাকাউন্টও আপডেট করা জরুরি।

অন্যদিকে কার্ড লেনদেনে নিরাপত্তার নিয়মগুলো আরো কঠোরভাবে মানা দরকার। ব্যাংকের অনুমোদিত এটিএম বুথ ছাড়া কার্ড ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনলাইন লেনদেনে শুধু নিরাপদ ওয়েবসাইটে (যেখানে ঠিকানার আগে https থাকে) কার্ডের তথ্য দেওয়া উচিত। আর্থিক ক্ষতি কমানোর জন্য প্রত্যেক কার্ডেই একটি নির্দিষ্ট লিমিট সেট করে রাখা ভালো। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কার্ড হারিয়ে গেলে বা কোনো সন্দেহজনক লেনদেন ধরা পড়লেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকে যোগাযোগ করে কার্ড ব্লক করে দেওয়া। প্রযুক্তির এই যুগে সুবিধার সঙ্গে ঝুঁকিও আসে। তবে ব্যবহারকারী যদি সচেতন হন, তাহলে প্রতারণার বড় অংশই এড়ানো সম্ভব। লেনদেনের সময় প্রতিটি নোটিফিকেশন খেয়াল করা। নিয়মিত অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট মিলিয়ে দেখা এবং পাসওয়ার্ড বা পিন গোপন রাখা। এই ছোট ছোট অভ্যাসই বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

ডিজিটাল লেনদেন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, সময় বাঁচিয়েছে, নিরাপত্তাও দিয়েছে অনেকখানি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রতারকরা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাই আমাদের দায়িত্ব, প্রতিটি লেনদেনে সচেতন থাকা। নিরাপত্তার নিয়ম মেনে চললেই বিকাশ, নগদ কিংবা কার্ড। সব ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট হয়ে উঠবে নির্ভরযোগ্য ও নিশ্চিন্ত।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত