সম্পাদক শেরে বাংলা

আযাদ আলাউদ্দীন
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৬
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ১২

অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা দিক নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও গবেষণা হয়েছে। তবে তিনি যে একজন লিটলম্যাগ সম্পাদক ও দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন, সে বিষয়টি তেমন একটা আলোচনায় আসেনি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তপংকর চক্রবর্তীর ‘বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র’ বইয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এই বইয়ের ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ১৯০১ সালে আবুল কাশেম ফজলুল হক বরিশাল থেকে ‘বালক’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এটিই ছিল পূর্ব বাংলার প্রথম সাপ্তাহিক শিশু পত্রিকা এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক আতোয়ার রহমান লিখেছেন, ‘...মফস্বল থেকে প্রকাশিত হলেও পত্রিকাখানির নাম এখানে দুটি কারণে বিশেষভাবে স্মরণীয়। প্রথমত, ‘বালক’ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র শিশু পত্রিকা। দ্বিতীয়ত, এদেশে মুসলিম সম্পাদিত শিশু পত্রিকাও সে-ই। এর সম্পাদনা করতেন এ কে ফজলুল হক। দুঃখের বিষয় বরিশাল শহর থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকাখানির কোনো কপি বা তার সম্পর্কে কোনো তথ্যই এখন আর পাওয়া যায় না।’

এর কিছুদিন পর ১৯০২ সালে এ কে ফজলুল হক ও শ্রী নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের যৌথ সম্পাদনায় ‘ভারত সুহৃদ’ নামে আরো একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মানসম্মত একটি সাহিত্য পত্রিকা। দুই বাংলায় এটির বেশ কদর ছিল। বেশ কিছুদিন প্রকাশের পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে এটি পুনঃপ্রকাশ করেন মাইনুদ্দিন আহমেদ। ‘ভারত সুহৃদ’ পত্রিকার বিষয়ে সুরেশচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, ‘...পত্রিকাটি বিভিন্ন সময়ে তিনবার প্রকাশিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।’

১৯২০ সালের ১২ জুলাই কলকাতা থেকে সান্ধ্যকালীন দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক নবযুগ’। এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি নিজ অর্থে এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে এ পত্রিকায় অনেক কবিতা ছাপা হয়। নজরুলের বিদ্রোহী লেখার কারণে নবযুগ পত্রিকার সার্কুলেশন অনেক বেড়ে যায়। এ সময় কলকাতা উচ্চ আদালতের ইংরেজ বিচারপতি ‘টিউনন’ এ কে ফজলুল হককে নিজের খাস কামরায় ডেকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার-বিরোধী লেখার জন্য হুঁশিয়ার করে দেন। কিন্তু ফজলুল হক ভয় না পেয়ে টিউননের কাছ থেকে ফিরেই নজরুলকে খবর দিয়ে বলেন, ‘আরো গরম লিখে যাও, ইংরেজ সাহেবদের টনক নাড়িয়ে দাও।’ নজরুলের লেখা চলতে থাকলে একসময় ব্রিটিশ সরকার ‘নবযুগ’ পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করে এবং কাগজটি বন্ধ করে দেয়। হক সাহেবের চেষ্টায় আবার নবযুগ চালু হলেও তিক্ত-বিরক্ত নজরুল নবযুগের কাজ ছেড়ে দেন। ১৯৪২ সালে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তার উদ্যোগে এবং নজরুলের সম্পাদনায় আবার পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে খুলনার মাওলানা আহমদ আলী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুবছর চালু থাকার পর পত্রিকাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত