রিফাত
আজ ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন হাসিনা। বেশ খানিকক্ষণ ঘুমিয়েও ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ রানওয়েতে থেকে একটি সামরিক বিমান ওড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। এই এয়ারবেসে এটি এক মহাসমস্যা। দিন নাই রাত নাই যখন-তখন বিমান নামছে-উঠছে। আর কী বিকট শব্দ! বিছানায় শুয়েই হাসিনার মনে পড়ল গণভবনে তার আরামদায়ক বিছানাটার কথা।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পর নানা চিন্তায় ইদানীং রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। প্রায়ই মাঝরাতে জেগে-বসে থাকেন। মনের মধ্যে প্রচণ্ড রাগ । বেঈমান জাতির মানুষ তার বাবাকে মেরেছে। এর প্রতিশোধ তিনি বেশ ভালোভাবেই নিচ্ছিলেন। চেয়েছিলেন এদের সারাজীবন পায়ের নিচে পিষে রাখবেন। সব প্ল্যানমতোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ক্ষোভে হাসিনার গা কাঁপতে থাকে। ‘হারামজাদারা’, মনে মনে দেশের মানুষকে গালি দিলেন। তারপর বিছানায় উঠে বসলেন।
মধ্যরাত। দিল্লির উপকণ্ঠে গাগিয়াবাদের হিন্দোন বিমানঘাঁটি। দেশ থেকে পালিয়া আসার পর হাসিনা কিছুদিন ধরে এখানেই থাকছেন। বিমানঘাঁটির ভেতরেই একটি পুরোনো বিমানসেনাদের কোয়ার্টারে হাসিনাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। পাঁচতলা দালানটি বেশ পুরোনো এবং প্রায় পরিত্যক্তই বলা চলে। সেনাদের জন্য নতুন আধুনিক কোয়ার্টার বিল্ডিং তৈরি করার পর থেকে এখানে কেউ থাকে না। হাসিনা পালিয়ে ভারতে আসার পর তাকে এখানে একপ্রকার গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও সরকারের নীতির জন্যও হাসিনার অবস্থান গোপন রাখাটা প্রয়োজনীয়। তাই এয়ারবেসের যে ভবনগুলোয় সেনা কর্মকর্তা এবং সাধারণ সৈনিকরা থাকেন, সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি। বরং অপেক্ষাকৃত অব্যবহৃত এবং পুরোনো এই ভবনের একটি ঘর পরিষ্কার করে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনমানুষ থেকে দূরের এই আদিকালের ভবনেই কাটছে হাসিনার নির্বাসিত জীবন।
কেমন যেন বুক জ্বালা করছে। এখানে আসার পর থেকে শুরু হয়েছে এই আরেক যন্ত্রণা। প্রতি রাতে খাওয়ার পর বুক জ্বলে। গণভবনে রাতের খাবারে দেশি মুরগির পাতলা ঝোল, গণভবনের লেকে চাষ করা চিতল মাছের পেটি আর গণভবনের গাভির খাঁটি দুধের দই খেতেন । কই, কোনোদিন তো তার গ্যাস হলো না। আর এই ভারতে এসে প্রতিদিন ডিনারে তাকে খেতে হচ্ছে শুকনো রুটি, জঘন্য মসলা দেওয়া সবজি আর ডালভাজি।
‘থুঃ’ একটা নোংরা গালি দিয়ে মুখ বিকৃত করে মেঝেতে থুথু ফেললেন হাসিনা। তারপর খাট থেকে নেমে স্পঞ্জের স্যান্ডেল জোড়া পরলেন।
‘আসার সময় একটা ভালো স্যান্ডেলও নিয়ে আসতে পারলাম না। আর এরা আমাকে কিনে দিসে একটা স্পঞ্জের স্যান্ডেল। আমি শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের বেটি। আর আমাকে তোরা স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দেস।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হাসিনা। তারপর দরজা খুলে বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। আকাশে চাঁদ আছে। ভাঙা চাঁদ। মেঘের জন্য ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। বারবার মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ছে। এই বিল্ডিংয়ের পেছন সাইডে রানওয়ে। ওদিকের হলুদ উজ্জ্বল আলো এদিকটায় খুব কমই আসে। বারান্দার এদিকটা বেশ অন্ধকার। তিনতলার এই বারান্দা থেকে তেমন কিছুই দেখা যায় না। বিল্ডিংটা তিন দিকের তিনটা বিল্ডিং জোড়া দিয়ে বানানো। অনেকটা স্কুলের হোস্টেলের মতো। হাসিনা ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন। বাইরে হালকা বাতাস দিচ্ছে। বেশ লাগছে। হাসিনার মাথা কিছুটা ঠান্ডা হলো। ঘরের ভেতরে একটা এসিও তাকে দেওয়া হয়নি, এই গরমে ঘরে শুয়ে থাকার চেয়ে হাঁটাহাঁটি করলে একটু ভালো লাগবে। হাঁটতে হাঁটতে লম্বা বারান্দা পেরিয়ে বাম দিকের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় পা রাখলেন হাসিনা।
ঠিক তখন তার পায়ের সামনে দিয়ে একটা ইঁদুর দৌড়ে চলে গেল উল্টো দিকে। চমকে পেছনে সরে এলেন হাসিনা। তারপর বুঝতে পারলেন এটা ইঁদুর। আবার হাসিনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে গালি দিলেন তারপর আবার হাঁটতে লাগলেন সামনের দিকে। কেমন একটা ময়লার গন্ধ এই বারান্দাটায়।
‘খবিশগুলা কতদিন পরিষ্কার করে না! আমার গণভবনে এমন ময়লা থাকলে সবগুলোকে লাত্থি দিয়ে বের করে দিতাম।’ বলতে বলতে নাকে আঁচলচাপা দিয়ে সামনের দিকে হেঁটে গেলেন । নিজের রুমের সামনের টানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিল্ডিংয়ের সামনের অপরিষ্কার কম্পাউন্ডে ঝোপঝাড় দেখতে দেখতে ক্লান্ত হাসিনা এবার তৃতীয় বিল্ডিংয়ের বারান্দায় পা দিলেন। এই বারান্দাটা তুলনামূলক পরিষ্কার। হাঁটতে ভালোই লাগছে। আকাশের দিকে তাকালেন। চাঁদের আলো কিছুটা এসে পড়ছে বারান্দায়। সেই আলোতে নিজের ছায়া দেখে চমকে উঠলেন। ছায়াটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভ্যাম্পায়ার হেঁটে যাচ্ছে রাতের বুক চিরে। কিছুক্ষণ নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিকট শব্দে হেসে উঠলেন। ‘হা হা হা হা, আমি হাসিনা। ভ্যাম্পায়ারের চেয়েও ভয়ংকর।’
ততক্ষণে বারান্দার শেষ মাথায় চলে এসেছেন। সামনে আর যাওয়ার জায়গা নেই। রুমে ফেরার জন্য আবার পেছনে ঘুরলেন হাসিনা। আকাশের চাঁদ ততক্ষণে মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। অন্ধকারে দুই পা সামনে এগোতেই দৃশ্যটা চোখে পড়ল হাসিনার। তার সামনে কয়েক হাত দূরে দুই হাত বুকের দুই পাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছায়ামূর্তি। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ছায়ার অবয়বটা স্পষ্ট। ভয়ে কেঁপে উঠলেন হাসিনা। এই দৃশ্যটা তার খুব চেনা। এই একটা দৃশ্যের কারণে তছনছ হয়ে গেছে তার সাজানো বাগান। হারাতে হয়েছে তার সাম্রাজ্য। এই অবয়বকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন। মনেপ্রাণে তার সব ইন্দ্রিয় দিয়ে ঘৃণা করেন। ধরা গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন হাসিনা, ‘কে তুই, কেককে? আমার কাছে কী চাস হারামজাদা?’
পেছন থেকে একটা শীতল বাতাস খেলে গেল হাসিনার গা বেয়ে। সে বাতাস থেকে কে যেন ফিসফিস করে কানে কানে বলে গেল, ‘আবু সাঈদ, আবু সাঈদ, আবু সাঈদ’।
আবার কেঁপে উঠলেন হাসিনা, ‘ভাঙা গলায় নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন, না এটা আবু সাঈদ না। ও মরে গেছে। মরে গেছে। আমার পুলিশ ওকে মেরে ফেলেছে। বুক ঝাঁজরা হয়ে গেছে ওর।’
এমন সময় মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের কিছুটা আলো এসে বারান্দায় দাঁড়ানো সেই অবয়বটার ওপরে পড়ল। হাসিনা এবার অবয়বটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেলেন। না এ তো কিছুতেই মনের ভুল হতে পারে না। সেই চেহারা। সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। হাসিনা এবার ভয়ে দুই পা পিছিয়ে এলেন। পেছনে যাওয়ার আর রাস্তা নেই। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই অবয়ব। হাসিনা দিগবিদিক শূন্য হয়ে পাশের দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেন। দুবার ধাক্কা দেওয়ার পর ক্যাঁচ শব্দে খুলে গেল পুরোনো কাঠের দরজা। প্রবেশ করলেন সেই অন্ধকার ঘরে।
ঘরটা বেশ বড়। একপাশে জানালা। জানালা দিয়ে রানওয়ের হলুদ আলো এসে ঘরটায় পড়েছে। সেই আলোতে ঘরটায় ভালো করে চোখ বোলালেন। সামনের দেয়ালজুড়ে বিশাল একটা আয়না। অনেক দিনের পুরোনো। ধুলার আস্তরণ পড়ে গেছে। আয়নায় নিজেকে দেখলেন। তার মুখে আবার একটা মুচকি হাসি দেখা দিল। ভয় কেটে গিয়ে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো তার মনে। আস্তে আস্তে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।
বাইরে রানওয়েতে তখন হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা গেল। খানিকটা সাহস পেলেন। তারপর আরেকবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিলেন। চুলগুলো হাত দিয়ে কিছুটা ঠিক করে পেছনে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। পেছনে ফিরতেই বিস্ময়ে হাসিনার মুখ হাঁ হয়ে গেল। কোথায় দরজা! পেছনের দেয়ালের পুরোটাজুড়ে আরেকটা আয়না। দরজার কোনো চিহ্ন নেই সেখানে। হাসিনা কাঠের পুতুলের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হঠাৎ পাশের জানালা থেকে শুনতে পেলেন একটা বাচ্চা মেয়ের হাসির খলখল শব্দ। সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন জানালার পাশে একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। গায়ে ফ্রক। বাইরের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিচ্ছে।
আবার কিছুটা সাহস ফিরে পেলেন হাসিনা। এই মেয়েটা নিশ্চয় এই বিল্ডিংয়ে থাকে। হয়তো কোনো সৈনিকের বাচ্চা মেয়ে। বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলেন হাসিনা। বললেন, ‘বেটা, কৌন হো তুম? ক্যায়া নাম তুমহারা? ইস ঘারকা দারওয়াজা কিধার বেটা??’
হাসিনার কথা শুনে বাচ্চাটা এবার একটা করুন গলায় বলে উঠল, ‘এই হেলিকপ্টার থেকে আবার আমাকে গুলি করবে না তো আন্টি?’ বলে আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে তাকাল। হাসিনা দেখল তার কপালের ঠিক মাঝখানে একটা ফুটো। আর সেই ফুটো দিয়ে অবিরল ধারায় বেরিয়ে আসছে কালচে লাল রক্ত। হাসিনা ছিটকে পেছনে সরে গেলেন। তাল সামলাতে পারলেন না। পরে গেলেন ঠান্ডা মেঝেতে। তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। প্রচণ্ড ভয়ে দুয়া-দুরুদ পড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। গোঙানির মতো একটা গোঁ-গোঁ আওয়াজ করতে করতে বিস্ফারিত চোখে লক্ষ করলেন, তার সামনে পেছনে-ডানে-বামে কোথাও কোনো দেয়াল নেই। সমস্ত ঘরের চারপাশের দেয়ালজুড়ে বিশাল বিশাল আয়না। আর হাসিনা আটকা পড়ে গেছেন বিশাল সেই আয়নাঘরে।
আয়নাঘর, কথাটা মনে হতেই হাসিনার মুখ দিয়ে ভয়ে ফেনা বের হতে লাগল। আয়নাঘর! এটা কী করে সম্ভব। হাসিনার হৃৎপিণ্ড যেন তার গলা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইছে। তিনি প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে সামনের আয়নায় খেয়াল করলেন, ঘরে তিনি একা না, তার পেছন আছে আরেকজন কেউ। লোকটার সারা গা ছেঁড়া-নোংরা কাপড়ে জড়ানো। লম্বা অগোছালো দাড়িতে সমস্ত মুখের প্রায় পুরোটাই ঢাকা। লোকটা বলল, ‘দোয়া পড়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না।’
হাসিনা ভয়ার্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখল লোকটা আর একা নেই। তার পাশ থেকে বেরিয়ে আসছে আরো অনেক মানুষ। শিশু, কিশোর-কিশোরী, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ। কোনো কিশোর কিংবা কিশোরীর কাঁধে ব্যাগ, কোনো কিশোরের গায়ে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি লাল রক্তে ভেজা। কোনো শিশুর হাতে খেলনা চরকি কিংবা বেলুন, লুঙ্গি, গেঞ্জি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা অসংখ্য মানুষ চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে তাকে। তাদের চোখগুলো মৃত মানুষের মতো নিষ্প্রাণ। ভয়ে হাসিনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। মনে হলো এখনই এক ফোঁটা পানি না পেলে এই মুহূর্তে দম আটকে মরে যাবে।
বিড়বিড় করে বলে উঠল হাসিনা, ‘পানি, পানি’।
তখন সেই অশরীরিদের মধ্য থেকে এক সুদর্শন যুবক হাতে একটা পানির বোতল নিয়ে হাসিনার কাছে এগিয়ে এসে বলল, ‘পানি লাগবে পানি?’
উন্মাদের মতো হাসিনা তার হাত থেকে সেই বোতল ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পানি ঢালল। তার সারা মুখ ভেসে গেল বোতল থেকে বের হয়ে আসা লাল রক্তে। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অতৃপ্ত চোখগুলো আগুনের মতো জ্বলে উঠল ধক করে। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কত রক্ত পান করলে তোর পিপাসা মিটবে পিশাচিনি? আর কত রক্ত চাই?’
ঘরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করল ভোরের আলো। সে আলোয় ঘরের কোণে পড়ে থাকা অন্ধকারের নির্জীব দেহটাকে আর দেখা গেল না।
আজ ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন হাসিনা। বেশ খানিকক্ষণ ঘুমিয়েও ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ রানওয়েতে থেকে একটি সামরিক বিমান ওড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। এই এয়ারবেসে এটি এক মহাসমস্যা। দিন নাই রাত নাই যখন-তখন বিমান নামছে-উঠছে। আর কী বিকট শব্দ! বিছানায় শুয়েই হাসিনার মনে পড়ল গণভবনে তার আরামদায়ক বিছানাটার কথা।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পর নানা চিন্তায় ইদানীং রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। প্রায়ই মাঝরাতে জেগে-বসে থাকেন। মনের মধ্যে প্রচণ্ড রাগ । বেঈমান জাতির মানুষ তার বাবাকে মেরেছে। এর প্রতিশোধ তিনি বেশ ভালোভাবেই নিচ্ছিলেন। চেয়েছিলেন এদের সারাজীবন পায়ের নিচে পিষে রাখবেন। সব প্ল্যানমতোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ক্ষোভে হাসিনার গা কাঁপতে থাকে। ‘হারামজাদারা’, মনে মনে দেশের মানুষকে গালি দিলেন। তারপর বিছানায় উঠে বসলেন।
মধ্যরাত। দিল্লির উপকণ্ঠে গাগিয়াবাদের হিন্দোন বিমানঘাঁটি। দেশ থেকে পালিয়া আসার পর হাসিনা কিছুদিন ধরে এখানেই থাকছেন। বিমানঘাঁটির ভেতরেই একটি পুরোনো বিমানসেনাদের কোয়ার্টারে হাসিনাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। পাঁচতলা দালানটি বেশ পুরোনো এবং প্রায় পরিত্যক্তই বলা চলে। সেনাদের জন্য নতুন আধুনিক কোয়ার্টার বিল্ডিং তৈরি করার পর থেকে এখানে কেউ থাকে না। হাসিনা পালিয়ে ভারতে আসার পর তাকে এখানে একপ্রকার গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও সরকারের নীতির জন্যও হাসিনার অবস্থান গোপন রাখাটা প্রয়োজনীয়। তাই এয়ারবেসের যে ভবনগুলোয় সেনা কর্মকর্তা এবং সাধারণ সৈনিকরা থাকেন, সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি। বরং অপেক্ষাকৃত অব্যবহৃত এবং পুরোনো এই ভবনের একটি ঘর পরিষ্কার করে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনমানুষ থেকে দূরের এই আদিকালের ভবনেই কাটছে হাসিনার নির্বাসিত জীবন।
কেমন যেন বুক জ্বালা করছে। এখানে আসার পর থেকে শুরু হয়েছে এই আরেক যন্ত্রণা। প্রতি রাতে খাওয়ার পর বুক জ্বলে। গণভবনে রাতের খাবারে দেশি মুরগির পাতলা ঝোল, গণভবনের লেকে চাষ করা চিতল মাছের পেটি আর গণভবনের গাভির খাঁটি দুধের দই খেতেন । কই, কোনোদিন তো তার গ্যাস হলো না। আর এই ভারতে এসে প্রতিদিন ডিনারে তাকে খেতে হচ্ছে শুকনো রুটি, জঘন্য মসলা দেওয়া সবজি আর ডালভাজি।
‘থুঃ’ একটা নোংরা গালি দিয়ে মুখ বিকৃত করে মেঝেতে থুথু ফেললেন হাসিনা। তারপর খাট থেকে নেমে স্পঞ্জের স্যান্ডেল জোড়া পরলেন।
‘আসার সময় একটা ভালো স্যান্ডেলও নিয়ে আসতে পারলাম না। আর এরা আমাকে কিনে দিসে একটা স্পঞ্জের স্যান্ডেল। আমি শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের বেটি। আর আমাকে তোরা স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দেস।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হাসিনা। তারপর দরজা খুলে বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। আকাশে চাঁদ আছে। ভাঙা চাঁদ। মেঘের জন্য ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। বারবার মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ছে। এই বিল্ডিংয়ের পেছন সাইডে রানওয়ে। ওদিকের হলুদ উজ্জ্বল আলো এদিকটায় খুব কমই আসে। বারান্দার এদিকটা বেশ অন্ধকার। তিনতলার এই বারান্দা থেকে তেমন কিছুই দেখা যায় না। বিল্ডিংটা তিন দিকের তিনটা বিল্ডিং জোড়া দিয়ে বানানো। অনেকটা স্কুলের হোস্টেলের মতো। হাসিনা ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন। বাইরে হালকা বাতাস দিচ্ছে। বেশ লাগছে। হাসিনার মাথা কিছুটা ঠান্ডা হলো। ঘরের ভেতরে একটা এসিও তাকে দেওয়া হয়নি, এই গরমে ঘরে শুয়ে থাকার চেয়ে হাঁটাহাঁটি করলে একটু ভালো লাগবে। হাঁটতে হাঁটতে লম্বা বারান্দা পেরিয়ে বাম দিকের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় পা রাখলেন হাসিনা।
ঠিক তখন তার পায়ের সামনে দিয়ে একটা ইঁদুর দৌড়ে চলে গেল উল্টো দিকে। চমকে পেছনে সরে এলেন হাসিনা। তারপর বুঝতে পারলেন এটা ইঁদুর। আবার হাসিনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে গালি দিলেন তারপর আবার হাঁটতে লাগলেন সামনের দিকে। কেমন একটা ময়লার গন্ধ এই বারান্দাটায়।
‘খবিশগুলা কতদিন পরিষ্কার করে না! আমার গণভবনে এমন ময়লা থাকলে সবগুলোকে লাত্থি দিয়ে বের করে দিতাম।’ বলতে বলতে নাকে আঁচলচাপা দিয়ে সামনের দিকে হেঁটে গেলেন । নিজের রুমের সামনের টানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিল্ডিংয়ের সামনের অপরিষ্কার কম্পাউন্ডে ঝোপঝাড় দেখতে দেখতে ক্লান্ত হাসিনা এবার তৃতীয় বিল্ডিংয়ের বারান্দায় পা দিলেন। এই বারান্দাটা তুলনামূলক পরিষ্কার। হাঁটতে ভালোই লাগছে। আকাশের দিকে তাকালেন। চাঁদের আলো কিছুটা এসে পড়ছে বারান্দায়। সেই আলোতে নিজের ছায়া দেখে চমকে উঠলেন। ছায়াটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভ্যাম্পায়ার হেঁটে যাচ্ছে রাতের বুক চিরে। কিছুক্ষণ নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিকট শব্দে হেসে উঠলেন। ‘হা হা হা হা, আমি হাসিনা। ভ্যাম্পায়ারের চেয়েও ভয়ংকর।’
ততক্ষণে বারান্দার শেষ মাথায় চলে এসেছেন। সামনে আর যাওয়ার জায়গা নেই। রুমে ফেরার জন্য আবার পেছনে ঘুরলেন হাসিনা। আকাশের চাঁদ ততক্ষণে মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। অন্ধকারে দুই পা সামনে এগোতেই দৃশ্যটা চোখে পড়ল হাসিনার। তার সামনে কয়েক হাত দূরে দুই হাত বুকের দুই পাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছায়ামূর্তি। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ছায়ার অবয়বটা স্পষ্ট। ভয়ে কেঁপে উঠলেন হাসিনা। এই দৃশ্যটা তার খুব চেনা। এই একটা দৃশ্যের কারণে তছনছ হয়ে গেছে তার সাজানো বাগান। হারাতে হয়েছে তার সাম্রাজ্য। এই অবয়বকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন। মনেপ্রাণে তার সব ইন্দ্রিয় দিয়ে ঘৃণা করেন। ধরা গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন হাসিনা, ‘কে তুই, কেককে? আমার কাছে কী চাস হারামজাদা?’
পেছন থেকে একটা শীতল বাতাস খেলে গেল হাসিনার গা বেয়ে। সে বাতাস থেকে কে যেন ফিসফিস করে কানে কানে বলে গেল, ‘আবু সাঈদ, আবু সাঈদ, আবু সাঈদ’।
আবার কেঁপে উঠলেন হাসিনা, ‘ভাঙা গলায় নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন, না এটা আবু সাঈদ না। ও মরে গেছে। মরে গেছে। আমার পুলিশ ওকে মেরে ফেলেছে। বুক ঝাঁজরা হয়ে গেছে ওর।’
এমন সময় মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের কিছুটা আলো এসে বারান্দায় দাঁড়ানো সেই অবয়বটার ওপরে পড়ল। হাসিনা এবার অবয়বটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেলেন। না এ তো কিছুতেই মনের ভুল হতে পারে না। সেই চেহারা। সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। হাসিনা এবার ভয়ে দুই পা পিছিয়ে এলেন। পেছনে যাওয়ার আর রাস্তা নেই। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই অবয়ব। হাসিনা দিগবিদিক শূন্য হয়ে পাশের দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেন। দুবার ধাক্কা দেওয়ার পর ক্যাঁচ শব্দে খুলে গেল পুরোনো কাঠের দরজা। প্রবেশ করলেন সেই অন্ধকার ঘরে।
ঘরটা বেশ বড়। একপাশে জানালা। জানালা দিয়ে রানওয়ের হলুদ আলো এসে ঘরটায় পড়েছে। সেই আলোতে ঘরটায় ভালো করে চোখ বোলালেন। সামনের দেয়ালজুড়ে বিশাল একটা আয়না। অনেক দিনের পুরোনো। ধুলার আস্তরণ পড়ে গেছে। আয়নায় নিজেকে দেখলেন। তার মুখে আবার একটা মুচকি হাসি দেখা দিল। ভয় কেটে গিয়ে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো তার মনে। আস্তে আস্তে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।
বাইরে রানওয়েতে তখন হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা গেল। খানিকটা সাহস পেলেন। তারপর আরেকবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিলেন। চুলগুলো হাত দিয়ে কিছুটা ঠিক করে পেছনে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। পেছনে ফিরতেই বিস্ময়ে হাসিনার মুখ হাঁ হয়ে গেল। কোথায় দরজা! পেছনের দেয়ালের পুরোটাজুড়ে আরেকটা আয়না। দরজার কোনো চিহ্ন নেই সেখানে। হাসিনা কাঠের পুতুলের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হঠাৎ পাশের জানালা থেকে শুনতে পেলেন একটা বাচ্চা মেয়ের হাসির খলখল শব্দ। সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন জানালার পাশে একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। গায়ে ফ্রক। বাইরের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিচ্ছে।
আবার কিছুটা সাহস ফিরে পেলেন হাসিনা। এই মেয়েটা নিশ্চয় এই বিল্ডিংয়ে থাকে। হয়তো কোনো সৈনিকের বাচ্চা মেয়ে। বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলেন হাসিনা। বললেন, ‘বেটা, কৌন হো তুম? ক্যায়া নাম তুমহারা? ইস ঘারকা দারওয়াজা কিধার বেটা??’
হাসিনার কথা শুনে বাচ্চাটা এবার একটা করুন গলায় বলে উঠল, ‘এই হেলিকপ্টার থেকে আবার আমাকে গুলি করবে না তো আন্টি?’ বলে আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে তাকাল। হাসিনা দেখল তার কপালের ঠিক মাঝখানে একটা ফুটো। আর সেই ফুটো দিয়ে অবিরল ধারায় বেরিয়ে আসছে কালচে লাল রক্ত। হাসিনা ছিটকে পেছনে সরে গেলেন। তাল সামলাতে পারলেন না। পরে গেলেন ঠান্ডা মেঝেতে। তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। প্রচণ্ড ভয়ে দুয়া-দুরুদ পড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। গোঙানির মতো একটা গোঁ-গোঁ আওয়াজ করতে করতে বিস্ফারিত চোখে লক্ষ করলেন, তার সামনে পেছনে-ডানে-বামে কোথাও কোনো দেয়াল নেই। সমস্ত ঘরের চারপাশের দেয়ালজুড়ে বিশাল বিশাল আয়না। আর হাসিনা আটকা পড়ে গেছেন বিশাল সেই আয়নাঘরে।
আয়নাঘর, কথাটা মনে হতেই হাসিনার মুখ দিয়ে ভয়ে ফেনা বের হতে লাগল। আয়নাঘর! এটা কী করে সম্ভব। হাসিনার হৃৎপিণ্ড যেন তার গলা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইছে। তিনি প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে সামনের আয়নায় খেয়াল করলেন, ঘরে তিনি একা না, তার পেছন আছে আরেকজন কেউ। লোকটার সারা গা ছেঁড়া-নোংরা কাপড়ে জড়ানো। লম্বা অগোছালো দাড়িতে সমস্ত মুখের প্রায় পুরোটাই ঢাকা। লোকটা বলল, ‘দোয়া পড়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না।’
হাসিনা ভয়ার্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখল লোকটা আর একা নেই। তার পাশ থেকে বেরিয়ে আসছে আরো অনেক মানুষ। শিশু, কিশোর-কিশোরী, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ। কোনো কিশোর কিংবা কিশোরীর কাঁধে ব্যাগ, কোনো কিশোরের গায়ে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি লাল রক্তে ভেজা। কোনো শিশুর হাতে খেলনা চরকি কিংবা বেলুন, লুঙ্গি, গেঞ্জি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা অসংখ্য মানুষ চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে তাকে। তাদের চোখগুলো মৃত মানুষের মতো নিষ্প্রাণ। ভয়ে হাসিনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। মনে হলো এখনই এক ফোঁটা পানি না পেলে এই মুহূর্তে দম আটকে মরে যাবে।
বিড়বিড় করে বলে উঠল হাসিনা, ‘পানি, পানি’।
তখন সেই অশরীরিদের মধ্য থেকে এক সুদর্শন যুবক হাতে একটা পানির বোতল নিয়ে হাসিনার কাছে এগিয়ে এসে বলল, ‘পানি লাগবে পানি?’
উন্মাদের মতো হাসিনা তার হাত থেকে সেই বোতল ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পানি ঢালল। তার সারা মুখ ভেসে গেল বোতল থেকে বের হয়ে আসা লাল রক্তে। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অতৃপ্ত চোখগুলো আগুনের মতো জ্বলে উঠল ধক করে। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কত রক্ত পান করলে তোর পিপাসা মিটবে পিশাচিনি? আর কত রক্ত চাই?’
ঘরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করল ভোরের আলো। সে আলোয় ঘরের কোণে পড়ে থাকা অন্ধকারের নির্জীব দেহটাকে আর দেখা গেল না।
গাজা পুনরুদ্ধারের এই সময়ে ‘ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক পুরস্কার’ ঘোষণা করেছে ‘ফিলিস্তিন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট’। ১৩তম আসরের মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে—‘জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা, গোটা ফিলিস্তিন ও জায়নবাদের বিরোধিতা’।
৩ দিন আগেএকশ বছর আগের কথা। ১৮৮৯ সাল। তুরিনে আজকের মতোই এক দিনে ফ্রিডরিখ নিৎশে কার্লো আলবার্তো পথের ৬ নম্বর বাড়ির ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কখনো হাঁটতে বের হতেন, আবার কখনো পোস্ট অফিসে চিঠিপত্র তুলতে যেতেন।
৪ দিন আগেবাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় প্রতিদিনই জড়ো হন হাজারো মানুষ। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। আর এই জনস্রোতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের হাতে গড়া ‘লিটলম্যাগ কর্নার’।
৪ দিন আগেইসলাম-পূর্ব সময়ে এক ভয়ংকর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল যেন আরবরা। সমগ্র আরবে চলছিল ভয়াবহ অরাজকতা। গোত্রে গোত্রে শত্রুতা। সারাক্ষণ একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টায় রত। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও মারামারি থেকে শুরু করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া; বছরের পর বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলা।
৪ দিন আগে