
ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন

রোহিঙ্গা সংকট দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার একটি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই। আন্তর্জাতিক মহলের সম্মেলন, কূটনৈতিক আহ্বান এবং মানবিক আবেদন সত্ত্বেও মাটির পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) এখন প্রধান শক্তি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত আর বিশ্বশক্তিগুলো বিভক্ত—আশ্বাসে, তোষামোদে এবং বড় শক্তির দ্বন্দ্বে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ব, নিরাপত্তাজনিত হুমকি ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে এক গভীর সংকটে রয়েছে।
আরাকান আর্মির উত্থান
একসময়ের ছোট্ট জাতিগত বিদ্রোহী দল এখন রাখাইনের অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এএ সশস্ত্র, সংগঠিত এবং অর্থায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের শত্রুতা সুপরিচিত। নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ কিংবা সীমান্তে গুলি চালানো এখন তাদের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। অথচ বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া কার্যত শূন্য। চীন, ভারত, থাইল্যান্ড নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় শক্তি ব্যবহার করেছে; বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রম—যারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও শুধু ‘সংযমনীতি’ অনুসরণ করছে।
মানবিক বোঝা
বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমছে, দাতা দেশগুলো ক্লান্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইতোমধ্যে রেশন ফান্ড কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছে। শিবিরে হতাশা ও ক্ষোভ বেড়ে চলেছে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। ফলে অপরাধ, মাদক পাচার ও উগ্রপন্থার ঝুঁকি বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ একাধিকবার রোহিঙ্গা ইস্যু তুললেও বিশ্বশক্তি বাস্তবে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করছে না। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সুরক্ষা দেয়, পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি অন্যত্র—ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা সংকট ইত্যাদিতে। ফল হলোÑনিন্দা, প্রতিশ্রুতি ও সামান্য ত্রাণ—কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই।
অনুনয়-কূটনীতির ফাঁদ
বাংলাদেশ শুরু থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘের মঞ্চ আর আন্তর্জাতিক এনজিও নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেছে। প্রতিবার একই কৌশল—করুণ আবেদন, মানবিক সংকটের ছবি এবং দাতাদের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা। ফলে একটি ‘অনুনয়-কূটনীতি’ তৈরি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ভুক্তভোগীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে অথচ সক্রিয় খেলোয়াড় হতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মহলও এটিকে বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র অবস্থান হিসেবে ধরে নিয়েছে—শুধু মানবিক আবেদন, কোনো কৌশলগত চাপ নয়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে এই নির্ভরতা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। দাতা দেশগুলো ক্লান্ত, সহায়তার প্রবাহ শুকিয়ে আসছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো একই পথেই হাঁটছে।
সামরিক প্রতিরোধহীনতা
রাখাইন সীমান্তে আরাকান আর্মি (এএ) প্রতিদিনই উসকানি দিচ্ছে—জেলে অপহরণ, সীমান্তে গুলি ও চোরাচালান। অথচ বাংলাদেশ প্রতিবেশী চীন, ভারত বা থাইল্যান্ডের মতো সীমান্তে শক্তি প্রদর্শন করছে না। চীন সীমান্তে এএ’র কার্যকলাপ দমন করেছে কঠোর সামরিক পদক্ষেপে। ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় নিয়মিত সামরিক অভিযান চালায়। থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমার বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রায়ই গুলিবিনিময় করে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। এর ফলে এএ এবং মিয়ানমারের অন্য শক্তিগুলোর কাছে বার্তা যায়—বাংলাদেশ দুর্বল এবং প্রতিরোধে আগ্রহী নয়। এই দুর্বলতা শুধু সীমান্ত নিরাপত্তাকেই নয়, ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অস্থিরতার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
কক্সবাজার ও ভাসানচরের শিবিরগুলো এখন আর শুধু মানবিক ক্যাম্প নয়; সেখানে গড়ে উঠছে অপরাধ ও সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। মাদক চোরাচালান ও ইয়াবা পাচারের বড় অংশ এখন শিবিরকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। অপরাধী গ্যাং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানীয় দালাল ও আন্তর্জাতিক চক্র যুক্ত হয়ে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা দলগুলোর প্রভাব পড়ছে। এর ফলে শুধু শিবিরই নয়, সমগ্র কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বাংলাদেশ যত দেরি করছে, ততই এই অস্থিরতা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে বিস্তৃত হচ্ছে।
কৌশলগত প্রতিরোধ ও সীমান্ত সুরক্ষা
বাংলাদেশের সীমান্ত আজ প্রতিদিন আরাকান আর্মির (এএ) উসকানি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের শিকার। নাফ নদীতে জেলে অপহরণ, চোরাচালান, গুলিবিনিময়—সবই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় শুধু কূটনৈতিক প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে নিয়মিত টহল ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিতে সক্ষম করতে হবে। সীমিত ও সুনির্দিষ্ট সামরিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যা আন্তর্জাতিক আইন ও প্রপোরশনালিটি মেনে চলবে—অপরিহার্য। চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড ইতোমধ্যেই এ ধরনের সীমান্ত প্রতিরোধ কৌশল অনুসরণ করেছে। ফলে বাংলাদেশকেও বোঝাতে হবে যে তার সীমান্ত দুর্বল নয় এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার প্রথম দায়িত্ব।
কক্সবাজার ও ভাসানচরের শিবিরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্ম তাদের হারানো ভূমির জন্য লড়াইয়ের মনোবল রাখে। কিন্তু তাদের সংগঠিত ও সক্ষম করে তোলার উদ্যোগ নেই। যদি এই তরুণদের আত্মরক্ষার কাঠামো তৈরি করা না হয়, তবে প্রত্যাবাসনের সব আলোচনা শুধু মরীচিকাই থেকে যাবে।
আঞ্চলিক কূটনীতি জাতিসংঘের বাইরে
জাতিসংঘ প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা আজ স্পষ্ট। মিয়ানমারের পেছনে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান আর পশ্চিমাদের অগ্রাধিকার অন্যত্র। বাংলাদেশকে আসিয়ান, চীন ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় আলোচনা জোরদার করতে হবে। রাখাইনের অস্থিতিশীলতা যে পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি—এই বার্তাটিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প ও ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যের স্থিতিশীলতা রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। এদিকেই কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
রোহিঙ্গাশিবির এখন শুধু মানবিক আশ্রয়স্থল নয়, অপরাধ ও অস্থিরতার উর্বরভূমি। ইয়াবা পাচার, অস্ত্র-বাণিজ্য, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিস্তার উদ্বেগজনক। শিবিরে গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের হতাশা কমাতে শিক্ষা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ তৈরি করা জরুরি। মানবিক সহায়তা কমলেও যাতে এই সংকট নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রূপ না নেয়, সেটিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
রোহিঙ্গা সমস্যা একটি সাময়িক মানবিক সংকট নয়; এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক সংঘাত। শুধু কূটনীতি, সম্মেলন বা এনজিও-নির্ভরতা বাংলাদেশকে কোনো ফল দেয়নি। এখন সময় এসেছে কৌশলগত পরিবর্তনেরÑযেখানে সামরিক প্রতিরোধ, রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষা সংগঠন ও আঞ্চলিক কূটনীতির সমন্বয় থাকবে। বিশ্ব সেই দেশকেই সম্মান করে, যারা নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে, দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—দুর্বল ভুক্তভোগী হয়ে থাকা, নাকি সক্রিয় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।

রোহিঙ্গা সংকট দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার একটি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই। আন্তর্জাতিক মহলের সম্মেলন, কূটনৈতিক আহ্বান এবং মানবিক আবেদন সত্ত্বেও মাটির পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) এখন প্রধান শক্তি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত আর বিশ্বশক্তিগুলো বিভক্ত—আশ্বাসে, তোষামোদে এবং বড় শক্তির দ্বন্দ্বে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ব, নিরাপত্তাজনিত হুমকি ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে এক গভীর সংকটে রয়েছে।
আরাকান আর্মির উত্থান
একসময়ের ছোট্ট জাতিগত বিদ্রোহী দল এখন রাখাইনের অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এএ সশস্ত্র, সংগঠিত এবং অর্থায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের শত্রুতা সুপরিচিত। নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ কিংবা সীমান্তে গুলি চালানো এখন তাদের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। অথচ বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া কার্যত শূন্য। চীন, ভারত, থাইল্যান্ড নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় শক্তি ব্যবহার করেছে; বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রম—যারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও শুধু ‘সংযমনীতি’ অনুসরণ করছে।
মানবিক বোঝা
বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমছে, দাতা দেশগুলো ক্লান্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইতোমধ্যে রেশন ফান্ড কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছে। শিবিরে হতাশা ও ক্ষোভ বেড়ে চলেছে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। ফলে অপরাধ, মাদক পাচার ও উগ্রপন্থার ঝুঁকি বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ একাধিকবার রোহিঙ্গা ইস্যু তুললেও বিশ্বশক্তি বাস্তবে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করছে না। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সুরক্ষা দেয়, পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি অন্যত্র—ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা সংকট ইত্যাদিতে। ফল হলোÑনিন্দা, প্রতিশ্রুতি ও সামান্য ত্রাণ—কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই।
অনুনয়-কূটনীতির ফাঁদ
বাংলাদেশ শুরু থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘের মঞ্চ আর আন্তর্জাতিক এনজিও নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেছে। প্রতিবার একই কৌশল—করুণ আবেদন, মানবিক সংকটের ছবি এবং দাতাদের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা। ফলে একটি ‘অনুনয়-কূটনীতি’ তৈরি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ভুক্তভোগীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে অথচ সক্রিয় খেলোয়াড় হতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মহলও এটিকে বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র অবস্থান হিসেবে ধরে নিয়েছে—শুধু মানবিক আবেদন, কোনো কৌশলগত চাপ নয়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে এই নির্ভরতা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। দাতা দেশগুলো ক্লান্ত, সহায়তার প্রবাহ শুকিয়ে আসছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো একই পথেই হাঁটছে।
সামরিক প্রতিরোধহীনতা
রাখাইন সীমান্তে আরাকান আর্মি (এএ) প্রতিদিনই উসকানি দিচ্ছে—জেলে অপহরণ, সীমান্তে গুলি ও চোরাচালান। অথচ বাংলাদেশ প্রতিবেশী চীন, ভারত বা থাইল্যান্ডের মতো সীমান্তে শক্তি প্রদর্শন করছে না। চীন সীমান্তে এএ’র কার্যকলাপ দমন করেছে কঠোর সামরিক পদক্ষেপে। ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় নিয়মিত সামরিক অভিযান চালায়। থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমার বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রায়ই গুলিবিনিময় করে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। এর ফলে এএ এবং মিয়ানমারের অন্য শক্তিগুলোর কাছে বার্তা যায়—বাংলাদেশ দুর্বল এবং প্রতিরোধে আগ্রহী নয়। এই দুর্বলতা শুধু সীমান্ত নিরাপত্তাকেই নয়, ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অস্থিরতার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
কক্সবাজার ও ভাসানচরের শিবিরগুলো এখন আর শুধু মানবিক ক্যাম্প নয়; সেখানে গড়ে উঠছে অপরাধ ও সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। মাদক চোরাচালান ও ইয়াবা পাচারের বড় অংশ এখন শিবিরকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। অপরাধী গ্যাং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানীয় দালাল ও আন্তর্জাতিক চক্র যুক্ত হয়ে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা দলগুলোর প্রভাব পড়ছে। এর ফলে শুধু শিবিরই নয়, সমগ্র কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বাংলাদেশ যত দেরি করছে, ততই এই অস্থিরতা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে বিস্তৃত হচ্ছে।
কৌশলগত প্রতিরোধ ও সীমান্ত সুরক্ষা
বাংলাদেশের সীমান্ত আজ প্রতিদিন আরাকান আর্মির (এএ) উসকানি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের শিকার। নাফ নদীতে জেলে অপহরণ, চোরাচালান, গুলিবিনিময়—সবই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় শুধু কূটনৈতিক প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে নিয়মিত টহল ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিতে সক্ষম করতে হবে। সীমিত ও সুনির্দিষ্ট সামরিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যা আন্তর্জাতিক আইন ও প্রপোরশনালিটি মেনে চলবে—অপরিহার্য। চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড ইতোমধ্যেই এ ধরনের সীমান্ত প্রতিরোধ কৌশল অনুসরণ করেছে। ফলে বাংলাদেশকেও বোঝাতে হবে যে তার সীমান্ত দুর্বল নয় এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার প্রথম দায়িত্ব।
কক্সবাজার ও ভাসানচরের শিবিরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্ম তাদের হারানো ভূমির জন্য লড়াইয়ের মনোবল রাখে। কিন্তু তাদের সংগঠিত ও সক্ষম করে তোলার উদ্যোগ নেই। যদি এই তরুণদের আত্মরক্ষার কাঠামো তৈরি করা না হয়, তবে প্রত্যাবাসনের সব আলোচনা শুধু মরীচিকাই থেকে যাবে।
আঞ্চলিক কূটনীতি জাতিসংঘের বাইরে
জাতিসংঘ প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা আজ স্পষ্ট। মিয়ানমারের পেছনে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান আর পশ্চিমাদের অগ্রাধিকার অন্যত্র। বাংলাদেশকে আসিয়ান, চীন ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় আলোচনা জোরদার করতে হবে। রাখাইনের অস্থিতিশীলতা যে পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি—এই বার্তাটিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প ও ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যের স্থিতিশীলতা রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। এদিকেই কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
রোহিঙ্গাশিবির এখন শুধু মানবিক আশ্রয়স্থল নয়, অপরাধ ও অস্থিরতার উর্বরভূমি। ইয়াবা পাচার, অস্ত্র-বাণিজ্য, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিস্তার উদ্বেগজনক। শিবিরে গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের হতাশা কমাতে শিক্ষা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ তৈরি করা জরুরি। মানবিক সহায়তা কমলেও যাতে এই সংকট নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রূপ না নেয়, সেটিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
রোহিঙ্গা সমস্যা একটি সাময়িক মানবিক সংকট নয়; এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক সংঘাত। শুধু কূটনীতি, সম্মেলন বা এনজিও-নির্ভরতা বাংলাদেশকে কোনো ফল দেয়নি। এখন সময় এসেছে কৌশলগত পরিবর্তনেরÑযেখানে সামরিক প্রতিরোধ, রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষা সংগঠন ও আঞ্চলিক কূটনীতির সমন্বয় থাকবে। বিশ্ব সেই দেশকেই সম্মান করে, যারা নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে, দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—দুর্বল ভুক্তভোগী হয়ে থাকা, নাকি সক্রিয় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।

সৃষ্টির শুরু থেকেই জীবজগতে ছোট-বড় প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের অলিখিত লড়াই চলছে। বিরামহীন এই লড়াইয়ে সবল প্রাণীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের হারিয়ে ক্রমে এই গ্রহে নিজেদের দখল নিশ্চিত করেছে।
২ ঘণ্টা আগে
গণতন্ত্রের মোড়কে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ৫৪ বছর পার করেছে, কিন্তু দুর্নীতি আজ সমাজের ক্যানসারে পরিণত। এই দুর্নীতি এখন আর গোপন পাপ নয়, বরং প্রকাশ্য বাণিজ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বক্তব্য অনুযায়ী
২ ঘণ্টা আগে
ভারত আর ইসরাইল বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এই চুক্তি। দক্ষিণ এশিয়া আর মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব পড়বে অনেক। চুক্তির সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্বের মানুষ এখন গাজা আর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অপকর্মের জন্য তাদের তীব্র নিন্দা করছে।
২ ঘণ্টা আগে
চলমান রাজনীতির বৃহত্তর দুই শক্তি বিএনপি ও জামায়াত তাদের অধিকাংশ সংসদ সদস্য প্রার্থীকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই। অন্যসব দল অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে কথাবার্তা বললেও এজেন্ডাভিত্তিক প্রাক-নির্বাচনি বিতর্কে যোগদান করেনি এখনো।
২ ঘণ্টা আগে