সৌরশক্তি, সবুজ প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

অধ্যাপক ড. শাহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশ একটি প্রগতিশীল ও সামাজিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এবং উন্নয়ন অর্থনীতিনির্ভর দেশ। এই প্রেক্ষাপটে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। বাংলাদেশে বিদ্যমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসসমূহের মধ্যে সৌরশক্তিই সর্বাধিক সম্ভাবনাময়। সৌর শক্তি, যা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, তা ব্যবহার করে প্রকল্প বাস্তবায়ন অপরিহার্য। যেকোনো প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা।
সারসংক্ষেপ ও ভূমিকা
স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ জ্বালানি চাহিদা পূরণে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যদিও দেশটি প্রাকৃতিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও জ্বালানি কর্তৃপক্ষ কেবল সাম্প্রতিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় জ্বালানি নীতি-নির্ধারকদের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতির প্রকৃত চাহিদাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং তা টেকসই পথরেখার সঙ্গে সুদৃঢ়ভাবে সমন্বয় সাধন করা। এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের জ্বালানি কর্তৃপক্ষকে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা প্রদান করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া হয় সুস্পষ্ট, টেকসই ও ভবিষ্যত-ভিত্তিক এবং দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে জ্বালানি ঘাটতি ও আমদানি নির্ভরতার কারণে মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপের মুখে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তরল জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌরশক্তি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশে সৌরশক্তির সৌর শক্তির সম্ভাবনা প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামোর প্রয়োগের মাধ্যমে সৌরশক্তি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
সমস্যার প্রেক্ষাপট (Problem Statement)
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তিগুলো হলো: জ্বালানি, পানি, দক্ষ শ্রমশক্তি, কার্যকরী প্রযুক্তি এবং মানসম্পন্ন জনস্বাস্থ্য। তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানি, মূলত অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স, নিম্ন মূল্য সংযোজিত রপ্তানি পণ্য এবং প্রতিবেশী দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পানির প্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশের জ্বালানি মিশ্রণ অত্যন্ত ভারসাম্যহীন (৯৮:২), যা বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নিম্ন অবস্থানে রেখেছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে জ্বালানি সংকট, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অতিনির্ভরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাবের সম্মুখীন। একই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতি শিল্পোন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি সংকটে ভুগছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দেশের জ্বালানি কাঠামো এখনো আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, সৌর শক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও নবায়নযোগ্য সম্পদ, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু সৌর শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান যেমন: পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব, জমির সংকট, সৌর ফটোভোল্টাইক (PV) স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি ব্যবস্থাপনা ও জমি ক্রয়ের দায়িত্ব ঠিকাদারের উপর ন্যস্ত করা, নীতিগত অস্পষ্টতা, দুর্বল গবেষণা সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি। এছাড়া, আমদানিকৃত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির উপর উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভরশীল সমাজে সচেতনতার অভাব, স্বল্পমেয়াদী বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং পেশাগত নৈতিকতার দুর্বলতা সৌর শক্তির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশে টেকসই সবুজ ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎসসমূহ
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎসগুলো নিম্নরূপ:
সৌরশক্তি: বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, যা অন-গ্রিড, রুফটপ, ভাসমান এবং সৌর সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য উপযোগী। বিশেষ করে সৌর বিকিরণ গড়ে ৪–৬ কিলোওয়াট-ঘণ্টা/মি²/দিন, যা সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশে সৌরশক্তির সম্ভাব্য মজুত প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। সৌরবিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা (আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত): আনুমানিক ১,৫০০ মেগাওয়াট। ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামোর প্রয়োগের মাধ্যমে সৌরশক্তি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বায়ুশক্তি: দেশের উপকূলীয় এবং অফশোর (সমুদ্রের অভ্যন্তরে) উভয় এলাকাতেই বায়ুশক্তির ব্যবহার সম্ভব।
বায়োমাস: কৃষি বর্জ্য এবং অন্যান্য জৈব উপাদান থেকে বায়োমাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
বর্জ্য থেকে শক্তি: সার্কুলার ইকোনমি (Circular Economy) ও পৌর কঠিন বর্জ্য (Municipal Solid Waste) ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
জৈবজ্বালানি: কৃষিভিত্তিক ফসল ও বর্জ্য থেকে জৈবজ্বালানি উৎপাদন করা যেতে পারে।
ভূ-তাপীয় শক্তি: মাটির নিচে থাকা উত্তপ্ত শিলা থেকে ভূ-তাপীয় শক্তি আহরণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
জোয়ার-ভাটা শক্তি: সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
ইন-স্ট্রিম জলপ্রবাহ (ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ): বাঁধ নির্মাণ ব্যতিরেকে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ (Micro-hydro) উৎপাদন করা সম্ভব।
সবুজ হাইড্রোজেন: নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত ইলেক্ট্রোলাইজারের মাধ্যমে সবুজ হাইড্রোজেন (Green Hydrogen) উৎপাদন করে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদিও বাংলাদেশে এই উৎসগুলোর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা এখনো নিরূপণ করা হয়নি, গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী এর সম্ভাব্য ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৫,০০০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশে টেকসই সবুজ ভবিষ্যৎ (sustainable green future) নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা, এই নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি কাজে লাগানো, সবুজ প্রযুক্তির (green technology) প্রয়োগ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির সম্ভাবনার মতো বৃহত্তর বিষয়গুলো পরবর্তীতে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশে সৌর শক্তির সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে কৌশল শিক্ষা
বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দেশে সৌরশক্তির সৌর শক্তির সম্ভাবনা প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট, দেশে সৌরশক্তির সম্ভাব্য মজুত প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। বর্তমানে দেশে প্রায় সৌরবিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা (আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত) আনুমানিক ১,৫০০ মেগাওয়াট। তবে এটি দেশের মোট জ্বালানি মিশ্রণের মাত্র ২ শতাংশের কম। আন্তর্জাতিক উদাহরণ থেকে দেখা যায়—
জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ভারত মোট ৩৪৬ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতার মধ্যে ১১৯ গিগাওয়াট সৌর শক্তি অর্জন করেছে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল জাতীয় কর্মসূচি, বৃহৎ সৌর পার্ক, দেশীয় উৎপাদন প্রণোদনা, আর্থিক ভর্তুকি, নিয়মিত দরপত্র আহ্বান ও বাজার সংস্কার। উন্নত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, পূর্বাভাস ব্যবস্থা, জ্বালানি সঞ্চয় নীতি এবং সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ব্যবহারকারীর মধ্যে অংশীদারিত্ব এ সাফল্যকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বৃহৎ সৌর ও বায়ু প্রকল্প, আর্থিক প্রণোদনা ও বাজার সংস্কারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রেকর্ড সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০২৫ সালে দেশটির মোট নবায়নযোগ্য সক্ষমতা ২ টেরাওয়াট অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে সৌরশক্তি ১.১ টেরাওয়াটে পৌঁছে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করছে। গ্রিড বিনিয়োগ, বাধ্যতামূলক সংযুক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশগ্রহণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ সর্বোচ্চ সীমা ও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য এ অগ্রযাত্রাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সংস্থা, শিল্প, একাডেমিয়া ও ব্যবহারকারীর অংশীদারিত্ব এবং গবেষণায় বিনিয়োগ এ অর্জনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
থাইল্যান্ডে ২০২৫ সালে সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা আনুমানিক ৩.৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যেখানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৫–১৮ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। সরকারের নতুন পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (PDP) ২০৩৭ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতাকে ৩৩ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে জলাধারে ভাসমান সৌর প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
| দেশ | গৃহীত কৌশল ও নীতি | বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা |
|---|---|---|
| ভারত | - উচ্চাভিলাষী জাতীয় কর্মসূচি - বৃহৎ সৌর পার্ক - দেশীয় উৎপাদন প্রণোদনা - আর্থিক ভর্তুকি ও নিয়মিত দরপত্র - উন্নত গ্রিড, পূর্বাভাস ব্যবস্থা ও জ্বালানি সঞ্চয় নীতি - সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ব্যবহারকারীর অংশীদারিত্ব | - সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন দেশীয় উৎপাদন ও বিনিয়োগে প্রণোদনা - উন্নত অবকাঠামো ও জ্বালানি সঞ্চয় প্রযুক্তি - বহু-পক্ষীয় অংশীদারিত্ব কাঠামো তৈরি |
| চীন | - দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা - বৃহৎ সৌর ও বায়ু প্রকল্প - আর্থিক প্রণোদনা ও বাজার সংস্কার - গ্রিড বিনিয়োগ ও বাধ্যতামূলক সংযুক্তি - রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণ - ২০৩০–২০৬০ নিঃসরণ ও কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য - গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ | - দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ - গ্রিড বিনিয়োগ ও সংযুক্তির বাধ্যবাধকতা - রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ - গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর দেওয়া |
| থাইল্যান্ড | - ২০২৫ সালে ৩.৮ GW সৌর সক্ষমতা - মোট নবায়নযোগ্য শক্তি ~১৫–১৮% - পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (PDP) ২০৩৭: সৌর ৩৩ GW - ভাসমান সৌর প্রকল্পে জোর | - সৌর শক্তি বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন - ভাসমান সৌর প্রযুক্তি গ্রহণ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে নবায়নযোগ্য শক্তির সমন্বয় |
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ:বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো- দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, দেশীয় উৎপাদন ও বিনিয়োগে প্রণোদনা, গ্রিড উন্নয়ন, বহু-পক্ষীয় অংশীদারিত্ব এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি (যেমন ভাসমান সৌর প্রকল্প) গ্রহণের মাধ্যমে সৌর শক্তির ব্যাপক সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা।
সৌর ফটোভোল্টাইক Solar PV) ও ভূমি সংরক্ষণ
বাংলাদেশে ভূমি সংকট একটি বড় সমস্যা। কৃষিজমি নষ্ট না করে বিকল্প স্থাপন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে । কৃষিজমি সৌরফোটোভোল্টাইক (PV) ইনস্টলেশনের জন্য ব্যবহার করলে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি সীমিত হতে পারে ।
ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট: নদী, হ্রদ ও জলাশয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন।মহাসড়ক ও রেললাইন করিডর, সড়কের উপর সৌর প্যানেল বসানো।
অ্যাগ্রো-সোলার মডেল: কৃষিজমিতে এমনভাবে সৌর প্যানেল বসানো যাতে কৃষিকাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন একসাথে চলতে পারে।
ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট: নদী, হ্রদ ও জলাশয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন। ভাসমান সৌর প্যানেল (Floating solar PV) প্রায় ১৫% বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। এগুলি কৃষিজমিকে রক্ষা করতে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়ক। এছাড়াও, জল বাষ্পীভবন হ্রাস করতেও এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মহাসড়ক ও রেললাইন করিডর, সড়কের উপর সৌর প্যানেল বসানো। এগুলি কৃষিজমিকে রক্ষা করতে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়ক। এটি গাড়িকে তীব্র তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, ফলে জ্বালানি খরচ কমে যায়।

অ্যাগ্রিভোল্টাইক (কৃষি সৌর প্যানেল) হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একই জমিতে ফসল ফলানো এবং সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
এটি একই জমিতে কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করে ভূমি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায়। সৌর প্যানেল ফসলকে তীব্র তাপ, শিলাবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। শুষ্ক অঞ্চলে প্যানেলের ছায়া তাপের চাপ কমিয়ে ফসলের ফলন বাড়াতে পারে। প্যানেলের ছায়া মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা সেচের প্রয়োজনীয়তা ও জলের অপচয় কমায়। কৃষকরা উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে বাড়তি ও স্থিতিশীল আয়ের সুযোগ পান। এটি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে এবং নতুন জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।

ব্যয়-সাশ্রয়ী সৌরশক্তি বাস্তবায়নের জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও নীতি-সংস্কার
বাংলাদেশে সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হলো উচ্চ বিনিয়োগ এবং স্থানীয় ব্যাংকসমূহের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রদানে অক্ষমতা। দেশের ব্যাংকিং খাত প্রধানত স্বল্পমেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় পরিসরের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করতে সক্ষম নয়। তাই বিকল্প অর্থায়ন কাঠামো এবং বহুমাত্রিক সহযোগিতা অপরিহার্য। নিম্নে স্টেকহোল্ডারভিত্তিক নীতি-প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলো:
| স্টেকহোল্ডার | ভূমিকা | প্রস্তাবিত নীতি-হস্তক্ষেপ |
|---|---|---|
| সরকার | নীতি প্রণয়ন, আর্থিক প্রণোদনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় | - সবুজ বন্ড (Green Bond) ইস্যু করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা। - সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) মডেল চালু। - সৌর প্রযুক্তি উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলি শিল্পে কর-ছাড় ও ভর্তুকি প্রদান। |
| বাংলাদেশি ব্যাংক ও আর্থিক খাত | স্বল্পমেয়াদি আমানতনির্ভর কাঠামোর কারণে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে অক্ষম | তহবিল |
| প্রবাসী বাংলাদেশি (Diaspora) | আর্থিক মূলধন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও উদ্যোক্তা দক্ষতা | - ডায়াসপোরা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গঠন করে নিরাপদ বিনিয়োগ কাঠামো প্রদান। - যৌথ বিনিয়োগ (Co-investment) মডেল চালু। - প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান স্থানান্তর। |
| বেসরকারি খাত ও স্থানীয় শিল্প | প্রযুক্তি উৎপাদন, বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন | - সৌর প্যানেল, ইনভার্টার ও কন্ট্রোলারের দেশীয় উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলি সম্প্রসারণ। - ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। - প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture) বৃদ্ধি। |
| আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী | আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা, জলবায়ু তহবিল | - কনসেশনাল ঋণ ও অনুদান প্রদান। - আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট ও জলবায়ু তহবিল ব্যবহার। - প্রযুক্তি ও সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়তা। |
বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে অক্ষমতার কারণে সৌরশক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের জন্য সরকার, প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এ ধরনের বহুমুখী অর্থায়ন কাঠামো গড়ে উঠলে ব্যয়-সাশ্রয়ীভাবে সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ একটি টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হবে।
যুক্তিগত বাধা ও টেকসই সমাধান
বাংলাদেশে সৌরশক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সীমিত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি। সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা প্রায়ই ধুলো, আর্দ্রতা এবং অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে হ্রাস পায়। তদুপরি, মানসম্পন্ন ইনভার্টার ও ব্যাটারি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীর স্বল্পতা এই খাতের অগ্রযাত্রাকে মন্থর করে তুলছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। প্রথমত, গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে দেশীয়ভাবে উপযোগী প্রযুক্তি উন্নয়ন সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে সৌরশক্তি প্রযুক্তি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ কাঠামোবদ্ধভাবে ব্যবহার করলে দেশে প্রযুক্তিগত ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ হবে।
সার্বিকভাবে, সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে কেবল প্রযুক্তি আমদানির ওপর নির্ভর না করে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, স্থানীয় উদ্ভাবন, এবং প্রবাসী সম্পদের কার্যকর ব্যবহারকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগানো অপরিহার্য।
সৌরশক্তি উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
একক-সংযোগযুক্ত সৌরকোষের (single-junction solar cell) তাত্ত্বিক সর্বোচ্চ দক্ষতা ৩৩.৭%, যেখানে শিল্পক্ষেত্রে বাস্তব দক্ষতা প্রায় ২৫%-এ সীমাবদ্ধ। এই ব্যবধান দূর করে সৌরশক্তি আহরণের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশে সৌরশক্তি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কার্যকর করার জন্য নিম্নোক্ত প্রযুক্তি ও কৌশলসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে:
ক) শক্তি রূপান্তর ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শিল্পাঞ্চলে এ ধরনের প্রযুক্তি স্থাপন করলে উৎপাদন দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
খ) মনিটরিং ও স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ সৌরকেন্দ্রে SCADA ও AI-ভিত্তিক সিস্টেম প্রবর্তন করলে উৎপাদন ঝুঁকি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হ্রাস পাবে।
গ) শক্তি সঞ্চয় ও গ্রিড সংযুক্তি
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য শক্তি একীভূত করতে BESS ব্যবহার করলে লোড শেডিং কমানো ও গ্রিড স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
ঘ) অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: দক্ষিণাঞ্চলের শুষ্ক ও রৌদ্রপ্রবণ এলাকায় ডুয়াল-অ্যাক্সিস ট্র্যাকিং সিস্টেম প্রবর্তন করলে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
সার্ভো-ভিত্তিক সোলার ট্র্যাকিং-এর সম্ভাবনা
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: ক্ষুদ্র ছাদভিত্তিক সিস্টেমের পরিবর্তে বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ প্রযুক্তি অধিকতর কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
বাংলাদেশে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর PV ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজন:
যদি সরকার বিনিয়োগ উৎসাহ প্রদান, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করে, তবে সৌরশক্তি দেশের সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। দেশকে দ্রুতই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, যাতে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, বর্জ্য থেকে জ্বালানি, জৈবজ্বালানি, ভূ-তাপীয় শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ইন-স্ট্রিম জলপ্রবাহভিত্তিক ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ এবং সবুজ হাইড্রোজেনকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়।
বিশেষত সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি গ্রহণ, স্থানীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং সমন্বিত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব। সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ভোক্তা অংশীদারিত্ব এই রূপান্তরকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
এই পরিবর্তন কেবল জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সবুজ অর্থনীতির প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে নেবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সৌর সম্পদ প্রায় ৫০ গিগাওয়াট (GW), এবং তুলনামূলকভাবে নিম্ন উৎপাদন ব্যয় (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রায় ১০ টাকা) এই খাতকে একটি কৌশলগত সমাধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যথাযথ নীতি সহায়তা, প্রযুক্তির স্থানীয়করণ এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামো নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
এই প্রেক্ষাপটে, নবায়নযোগ্য শক্তি নীতি ২০২৫ একটি রূপান্তরমূলক কৌশল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণীত এ নীতি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। নীতিটির কার্যকর বাস্তবায়ন কেবলমাত্র টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG 7: সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, SDG 8, এবং SDG 13: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা) অর্জনেই সহায়ক হবে না, বরং বাংলাদেশকে একটি পরিচ্ছন্ন, আত্মনির্ভরশীল ও সবুজ ভবিষ্যতের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেবে।
লেখক: সারাওয়াক বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া

বাংলাদেশ একটি প্রগতিশীল ও সামাজিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এবং উন্নয়ন অর্থনীতিনির্ভর দেশ। এই প্রেক্ষাপটে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। বাংলাদেশে বিদ্যমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসসমূহের মধ্যে সৌরশক্তিই সর্বাধিক সম্ভাবনাময়। সৌর শক্তি, যা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, তা ব্যবহার করে প্রকল্প বাস্তবায়ন অপরিহার্য। যেকোনো প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা।
সারসংক্ষেপ ও ভূমিকা
স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ জ্বালানি চাহিদা পূরণে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যদিও দেশটি প্রাকৃতিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও জ্বালানি কর্তৃপক্ষ কেবল সাম্প্রতিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় জ্বালানি নীতি-নির্ধারকদের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতির প্রকৃত চাহিদাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং তা টেকসই পথরেখার সঙ্গে সুদৃঢ়ভাবে সমন্বয় সাধন করা। এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের জ্বালানি কর্তৃপক্ষকে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা প্রদান করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া হয় সুস্পষ্ট, টেকসই ও ভবিষ্যত-ভিত্তিক এবং দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে জ্বালানি ঘাটতি ও আমদানি নির্ভরতার কারণে মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপের মুখে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তরল জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌরশক্তি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশে সৌরশক্তির সৌর শক্তির সম্ভাবনা প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামোর প্রয়োগের মাধ্যমে সৌরশক্তি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
সমস্যার প্রেক্ষাপট (Problem Statement)
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তিগুলো হলো: জ্বালানি, পানি, দক্ষ শ্রমশক্তি, কার্যকরী প্রযুক্তি এবং মানসম্পন্ন জনস্বাস্থ্য। তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানি, মূলত অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স, নিম্ন মূল্য সংযোজিত রপ্তানি পণ্য এবং প্রতিবেশী দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পানির প্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশের জ্বালানি মিশ্রণ অত্যন্ত ভারসাম্যহীন (৯৮:২), যা বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নিম্ন অবস্থানে রেখেছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে জ্বালানি সংকট, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অতিনির্ভরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাবের সম্মুখীন। একই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতি শিল্পোন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি সংকটে ভুগছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দেশের জ্বালানি কাঠামো এখনো আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, সৌর শক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও নবায়নযোগ্য সম্পদ, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু সৌর শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান যেমন: পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব, জমির সংকট, সৌর ফটোভোল্টাইক (PV) স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি ব্যবস্থাপনা ও জমি ক্রয়ের দায়িত্ব ঠিকাদারের উপর ন্যস্ত করা, নীতিগত অস্পষ্টতা, দুর্বল গবেষণা সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি। এছাড়া, আমদানিকৃত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির উপর উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভরশীল সমাজে সচেতনতার অভাব, স্বল্পমেয়াদী বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং পেশাগত নৈতিকতার দুর্বলতা সৌর শক্তির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশে টেকসই সবুজ ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎসসমূহ
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎসগুলো নিম্নরূপ:
সৌরশক্তি: বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, যা অন-গ্রিড, রুফটপ, ভাসমান এবং সৌর সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য উপযোগী। বিশেষ করে সৌর বিকিরণ গড়ে ৪–৬ কিলোওয়াট-ঘণ্টা/মি²/দিন, যা সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশে সৌরশক্তির সম্ভাব্য মজুত প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। সৌরবিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা (আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত): আনুমানিক ১,৫০০ মেগাওয়াট। ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামোর প্রয়োগের মাধ্যমে সৌরশক্তি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বায়ুশক্তি: দেশের উপকূলীয় এবং অফশোর (সমুদ্রের অভ্যন্তরে) উভয় এলাকাতেই বায়ুশক্তির ব্যবহার সম্ভব।
বায়োমাস: কৃষি বর্জ্য এবং অন্যান্য জৈব উপাদান থেকে বায়োমাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
বর্জ্য থেকে শক্তি: সার্কুলার ইকোনমি (Circular Economy) ও পৌর কঠিন বর্জ্য (Municipal Solid Waste) ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
জৈবজ্বালানি: কৃষিভিত্তিক ফসল ও বর্জ্য থেকে জৈবজ্বালানি উৎপাদন করা যেতে পারে।
ভূ-তাপীয় শক্তি: মাটির নিচে থাকা উত্তপ্ত শিলা থেকে ভূ-তাপীয় শক্তি আহরণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
জোয়ার-ভাটা শক্তি: সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
ইন-স্ট্রিম জলপ্রবাহ (ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ): বাঁধ নির্মাণ ব্যতিরেকে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ (Micro-hydro) উৎপাদন করা সম্ভব।
সবুজ হাইড্রোজেন: নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত ইলেক্ট্রোলাইজারের মাধ্যমে সবুজ হাইড্রোজেন (Green Hydrogen) উৎপাদন করে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদিও বাংলাদেশে এই উৎসগুলোর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা এখনো নিরূপণ করা হয়নি, গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী এর সম্ভাব্য ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৫,০০০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশে টেকসই সবুজ ভবিষ্যৎ (sustainable green future) নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা, এই নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি কাজে লাগানো, সবুজ প্রযুক্তির (green technology) প্রয়োগ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির সম্ভাবনার মতো বৃহত্তর বিষয়গুলো পরবর্তীতে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশে সৌর শক্তির সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে কৌশল শিক্ষা
বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দেশে সৌরশক্তির সৌর শক্তির সম্ভাবনা প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট, দেশে সৌরশক্তির সম্ভাব্য মজুত প্রায় ৪০ –৫০ গিগাওয়াট। বর্তমানে দেশে প্রায় সৌরবিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা (আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত) আনুমানিক ১,৫০০ মেগাওয়াট। তবে এটি দেশের মোট জ্বালানি মিশ্রণের মাত্র ২ শতাংশের কম। আন্তর্জাতিক উদাহরণ থেকে দেখা যায়—
জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ভারত মোট ৩৪৬ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতার মধ্যে ১১৯ গিগাওয়াট সৌর শক্তি অর্জন করেছে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল জাতীয় কর্মসূচি, বৃহৎ সৌর পার্ক, দেশীয় উৎপাদন প্রণোদনা, আর্থিক ভর্তুকি, নিয়মিত দরপত্র আহ্বান ও বাজার সংস্কার। উন্নত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, পূর্বাভাস ব্যবস্থা, জ্বালানি সঞ্চয় নীতি এবং সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ব্যবহারকারীর মধ্যে অংশীদারিত্ব এ সাফল্যকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বৃহৎ সৌর ও বায়ু প্রকল্প, আর্থিক প্রণোদনা ও বাজার সংস্কারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রেকর্ড সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০২৫ সালে দেশটির মোট নবায়নযোগ্য সক্ষমতা ২ টেরাওয়াট অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে সৌরশক্তি ১.১ টেরাওয়াটে পৌঁছে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করছে। গ্রিড বিনিয়োগ, বাধ্যতামূলক সংযুক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশগ্রহণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ সর্বোচ্চ সীমা ও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য এ অগ্রযাত্রাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সংস্থা, শিল্প, একাডেমিয়া ও ব্যবহারকারীর অংশীদারিত্ব এবং গবেষণায় বিনিয়োগ এ অর্জনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
থাইল্যান্ডে ২০২৫ সালে সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা আনুমানিক ৩.৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যেখানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৫–১৮ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। সরকারের নতুন পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (PDP) ২০৩৭ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতাকে ৩৩ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে জলাধারে ভাসমান সৌর প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
| দেশ | গৃহীত কৌশল ও নীতি | বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা |
|---|---|---|
| ভারত | - উচ্চাভিলাষী জাতীয় কর্মসূচি - বৃহৎ সৌর পার্ক - দেশীয় উৎপাদন প্রণোদনা - আর্থিক ভর্তুকি ও নিয়মিত দরপত্র - উন্নত গ্রিড, পূর্বাভাস ব্যবস্থা ও জ্বালানি সঞ্চয় নীতি - সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ব্যবহারকারীর অংশীদারিত্ব | - সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন দেশীয় উৎপাদন ও বিনিয়োগে প্রণোদনা - উন্নত অবকাঠামো ও জ্বালানি সঞ্চয় প্রযুক্তি - বহু-পক্ষীয় অংশীদারিত্ব কাঠামো তৈরি |
| চীন | - দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা - বৃহৎ সৌর ও বায়ু প্রকল্প - আর্থিক প্রণোদনা ও বাজার সংস্কার - গ্রিড বিনিয়োগ ও বাধ্যতামূলক সংযুক্তি - রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণ - ২০৩০–২০৬০ নিঃসরণ ও কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য - গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ | - দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ - গ্রিড বিনিয়োগ ও সংযুক্তির বাধ্যবাধকতা - রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ - গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর দেওয়া |
| থাইল্যান্ড | - ২০২৫ সালে ৩.৮ GW সৌর সক্ষমতা - মোট নবায়নযোগ্য শক্তি ~১৫–১৮% - পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (PDP) ২০৩৭: সৌর ৩৩ GW - ভাসমান সৌর প্রকল্পে জোর | - সৌর শক্তি বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন - ভাসমান সৌর প্রযুক্তি গ্রহণ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে নবায়নযোগ্য শক্তির সমন্বয় |
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ:বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো- দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, দেশীয় উৎপাদন ও বিনিয়োগে প্রণোদনা, গ্রিড উন্নয়ন, বহু-পক্ষীয় অংশীদারিত্ব এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি (যেমন ভাসমান সৌর প্রকল্প) গ্রহণের মাধ্যমে সৌর শক্তির ব্যাপক সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা।
সৌর ফটোভোল্টাইক Solar PV) ও ভূমি সংরক্ষণ
বাংলাদেশে ভূমি সংকট একটি বড় সমস্যা। কৃষিজমি নষ্ট না করে বিকল্প স্থাপন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে । কৃষিজমি সৌরফোটোভোল্টাইক (PV) ইনস্টলেশনের জন্য ব্যবহার করলে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি সীমিত হতে পারে ।
ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট: নদী, হ্রদ ও জলাশয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন।মহাসড়ক ও রেললাইন করিডর, সড়কের উপর সৌর প্যানেল বসানো।
অ্যাগ্রো-সোলার মডেল: কৃষিজমিতে এমনভাবে সৌর প্যানেল বসানো যাতে কৃষিকাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন একসাথে চলতে পারে।
ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট: নদী, হ্রদ ও জলাশয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন। ভাসমান সৌর প্যানেল (Floating solar PV) প্রায় ১৫% বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। এগুলি কৃষিজমিকে রক্ষা করতে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়ক। এছাড়াও, জল বাষ্পীভবন হ্রাস করতেও এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মহাসড়ক ও রেললাইন করিডর, সড়কের উপর সৌর প্যানেল বসানো। এগুলি কৃষিজমিকে রক্ষা করতে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়ক। এটি গাড়িকে তীব্র তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, ফলে জ্বালানি খরচ কমে যায়।

অ্যাগ্রিভোল্টাইক (কৃষি সৌর প্যানেল) হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একই জমিতে ফসল ফলানো এবং সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
এটি একই জমিতে কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করে ভূমি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায়। সৌর প্যানেল ফসলকে তীব্র তাপ, শিলাবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। শুষ্ক অঞ্চলে প্যানেলের ছায়া তাপের চাপ কমিয়ে ফসলের ফলন বাড়াতে পারে। প্যানেলের ছায়া মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা সেচের প্রয়োজনীয়তা ও জলের অপচয় কমায়। কৃষকরা উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে বাড়তি ও স্থিতিশীল আয়ের সুযোগ পান। এটি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে এবং নতুন জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।

ব্যয়-সাশ্রয়ী সৌরশক্তি বাস্তবায়নের জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও নীতি-সংস্কার
বাংলাদেশে সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হলো উচ্চ বিনিয়োগ এবং স্থানীয় ব্যাংকসমূহের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রদানে অক্ষমতা। দেশের ব্যাংকিং খাত প্রধানত স্বল্পমেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় পরিসরের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করতে সক্ষম নয়। তাই বিকল্প অর্থায়ন কাঠামো এবং বহুমাত্রিক সহযোগিতা অপরিহার্য। নিম্নে স্টেকহোল্ডারভিত্তিক নীতি-প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলো:
| স্টেকহোল্ডার | ভূমিকা | প্রস্তাবিত নীতি-হস্তক্ষেপ |
|---|---|---|
| সরকার | নীতি প্রণয়ন, আর্থিক প্রণোদনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় | - সবুজ বন্ড (Green Bond) ইস্যু করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা। - সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) মডেল চালু। - সৌর প্রযুক্তি উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলি শিল্পে কর-ছাড় ও ভর্তুকি প্রদান। |
| বাংলাদেশি ব্যাংক ও আর্থিক খাত | স্বল্পমেয়াদি আমানতনির্ভর কাঠামোর কারণে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে অক্ষম | তহবিল |
| প্রবাসী বাংলাদেশি (Diaspora) | আর্থিক মূলধন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও উদ্যোক্তা দক্ষতা | - ডায়াসপোরা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গঠন করে নিরাপদ বিনিয়োগ কাঠামো প্রদান। - যৌথ বিনিয়োগ (Co-investment) মডেল চালু। - প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান স্থানান্তর। |
| বেসরকারি খাত ও স্থানীয় শিল্প | প্রযুক্তি উৎপাদন, বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন | - সৌর প্যানেল, ইনভার্টার ও কন্ট্রোলারের দেশীয় উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলি সম্প্রসারণ। - ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। - প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture) বৃদ্ধি। |
| আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী | আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা, জলবায়ু তহবিল | - কনসেশনাল ঋণ ও অনুদান প্রদান। - আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট ও জলবায়ু তহবিল ব্যবহার। - প্রযুক্তি ও সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়তা। |
বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে অক্ষমতার কারণে সৌরশক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের জন্য সরকার, প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এ ধরনের বহুমুখী অর্থায়ন কাঠামো গড়ে উঠলে ব্যয়-সাশ্রয়ীভাবে সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ একটি টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হবে।
যুক্তিগত বাধা ও টেকসই সমাধান
বাংলাদেশে সৌরশক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সীমিত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি। সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা প্রায়ই ধুলো, আর্দ্রতা এবং অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে হ্রাস পায়। তদুপরি, মানসম্পন্ন ইনভার্টার ও ব্যাটারি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীর স্বল্পতা এই খাতের অগ্রযাত্রাকে মন্থর করে তুলছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। প্রথমত, গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে দেশীয়ভাবে উপযোগী প্রযুক্তি উন্নয়ন সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে সৌরশক্তি প্রযুক্তি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ কাঠামোবদ্ধভাবে ব্যবহার করলে দেশে প্রযুক্তিগত ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ হবে।
সার্বিকভাবে, সৌরশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে কেবল প্রযুক্তি আমদানির ওপর নির্ভর না করে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, স্থানীয় উদ্ভাবন, এবং প্রবাসী সম্পদের কার্যকর ব্যবহারকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগানো অপরিহার্য।
সৌরশক্তি উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
একক-সংযোগযুক্ত সৌরকোষের (single-junction solar cell) তাত্ত্বিক সর্বোচ্চ দক্ষতা ৩৩.৭%, যেখানে শিল্পক্ষেত্রে বাস্তব দক্ষতা প্রায় ২৫%-এ সীমাবদ্ধ। এই ব্যবধান দূর করে সৌরশক্তি আহরণের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশে সৌরশক্তি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কার্যকর করার জন্য নিম্নোক্ত প্রযুক্তি ও কৌশলসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে:
ক) শক্তি রূপান্তর ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শিল্পাঞ্চলে এ ধরনের প্রযুক্তি স্থাপন করলে উৎপাদন দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
খ) মনিটরিং ও স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ সৌরকেন্দ্রে SCADA ও AI-ভিত্তিক সিস্টেম প্রবর্তন করলে উৎপাদন ঝুঁকি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হ্রাস পাবে।
গ) শক্তি সঞ্চয় ও গ্রিড সংযুক্তি
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য শক্তি একীভূত করতে BESS ব্যবহার করলে লোড শেডিং কমানো ও গ্রিড স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
ঘ) অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: দক্ষিণাঞ্চলের শুষ্ক ও রৌদ্রপ্রবণ এলাকায় ডুয়াল-অ্যাক্সিস ট্র্যাকিং সিস্টেম প্রবর্তন করলে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
সার্ভো-ভিত্তিক সোলার ট্র্যাকিং-এর সম্ভাবনা
➡ বাংলাদেশে প্রয়োগ: ক্ষুদ্র ছাদভিত্তিক সিস্টেমের পরিবর্তে বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ প্রযুক্তি অধিকতর কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
বাংলাদেশে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর PV ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজন:
যদি সরকার বিনিয়োগ উৎসাহ প্রদান, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করে, তবে সৌরশক্তি দেশের সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। দেশকে দ্রুতই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, যাতে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, বর্জ্য থেকে জ্বালানি, জৈবজ্বালানি, ভূ-তাপীয় শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ইন-স্ট্রিম জলপ্রবাহভিত্তিক ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ এবং সবুজ হাইড্রোজেনকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়।
বিশেষত সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি গ্রহণ, স্থানীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং সমন্বিত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব। সরকার–শিল্প–একাডেমিয়া–ভোক্তা অংশীদারিত্ব এই রূপান্তরকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
এই পরিবর্তন কেবল জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সবুজ অর্থনীতির প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে নেবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সৌর সম্পদ প্রায় ৫০ গিগাওয়াট (GW), এবং তুলনামূলকভাবে নিম্ন উৎপাদন ব্যয় (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রায় ১০ টাকা) এই খাতকে একটি কৌশলগত সমাধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যথাযথ নীতি সহায়তা, প্রযুক্তির স্থানীয়করণ এবং বহুমুখী বিনিয়োগ কাঠামো নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
এই প্রেক্ষাপটে, নবায়নযোগ্য শক্তি নীতি ২০২৫ একটি রূপান্তরমূলক কৌশল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণীত এ নীতি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। নীতিটির কার্যকর বাস্তবায়ন কেবলমাত্র টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG 7: সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, SDG 8, এবং SDG 13: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা) অর্জনেই সহায়ক হবে না, বরং বাংলাদেশকে একটি পরিচ্ছন্ন, আত্মনির্ভরশীল ও সবুজ ভবিষ্যতের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেবে।
লেখক: সারাওয়াক বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া

রাজশাহীর যে শহর একসময় পদ্মা, বারনই, নবগঙ্গা, বারহী, বড়াল, শিবনদী আর অসংখ্য খাল-বিলের জলধারায় জীবন্ত ছিল, আজ সেখানে কেবল শুকিয়ে যাওয়া নদীর তলদেশ আর বিষাক্ত বর্জ্যের স্তুপ। নদী ছিল এই শহরের প্রাণ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের মূল উৎস।
৪ ঘণ্টা আগে
সাধারণত কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন সময় কত বেশি মূল্যবান। একটি প্রবাদ আছেÑ‘সময় হলো সোনার মতো দামি’। অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করেন। আর ইসলামে সময় স্বর্ণ কিংবা বিশ্বের যেকোনো মূল্যবান বস্তুর চেয়ে বেশি দামি। সময়ের মূল্য কী, ইসলাম শুধু তা-ই শেখায় না। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইসলাম মানবজাতিকে বিশেষভাবে শেখ
১১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংশ্লিষ্টতার পক্ষে ঢোল জোরেশোরেই বাজছে ওয়াশিংটনে। নীতিনির্ধারণী মহলে কেউ কেউ ফিসফিস করে আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে চিৎকার করে বলছেন গাজায় সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য।
১১ ঘণ্টা আগে
আস্থা সংকটে উদ্যোক্তারা, গতি নেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারেÑএই বাস্তবতা এখন দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগেও যখন দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন কারখানা স্থাপন, ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা প্রযুক্তি খাতে বড় উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তখন অর্থনীতির মধ্যে প্রাণচাঞ্চ
১১ ঘণ্টা আগে