ড. আলী আওয়াধ আসেরি
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ করেই স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের বিমান হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি প্রমাণ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও নিরাপত্তা গ্যারান্টির ওপর আর কোনো ভরসা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এসব দেশের আস্থা পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) গত বুধবার রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রয়্যাল কোর্টে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করেন। কাতারের রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়।
সৌদি আরবের দিক থেকে এই চুক্তির টার্গেট কী? কোনো বিশেষ দেশকে টার্গেট করে স্বাক্ষরিত হয়েছে? এই টার্গেট কি ইরান, ইসরাইল নাকি অন্য কোনো দেশ—তা এখনো স্পষ্ট নয়। আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার করাও সৌদি আরবের টার্গেট হতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তাদের মতে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তির নানামুখী বিশ্লেষণ সামনে আসছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের চেয়েও অনেক ওপরে উঠে গেছে। তবে সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো বিশেষ দেশ বা ঘটনা কেন্দ্র করে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। বরং কয়েক বছর ধরে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, এর ধারাবাহিকতাতেই এই চুক্তিটি হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি হঠাৎ করেই স্বাক্ষরিত হলেও দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্বের এই সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরই দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
চুক্তি স্বাক্ষর দেওয়া যৌথবিবৃতিতেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই দেশের ‘অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থরক্ষা এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে দুই সামরিক বাহিনীর সময়ের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও বাদশাহ ফয়সালের সময়। সে সময় সৌদি রাজকীয় বিমানবাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিল পাকিস্তান। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্কের সূচনা হয়। এরপর থেকে দুই দেশের এই সম্পর্ক খুব দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৬৭ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সৌদি আরবের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান বিন আবদুল আজিজ। সৌদি প্রতিরক্ষা খাতে পাকিস্তানের অব্যাহত ভূমিকা রাখার প্রাতিষ্ঠানিক শুরুটাও হয় তখন থেকেই।
এরপর থেকে ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ এবং ১৯৭০-এর দশকের পুরো সময়ই শত শত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা সৌদি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষক, উপদেষ্টা ও প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে, সৌদি সেনা ও বিমানবাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা এবং সেনাসদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানে। মোটকথা, সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রয়েছে পাকিস্তানের।
এই চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ইতোমধ্যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে মে মাসে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। এরপরই দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পরে ১০ মে যুদ্ধবিরতি হয়। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কথার লড়াই অব্যাহত আছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারত সরকার সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর সম্পর্কে জানে। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এই চুক্তির প্রভাব অবশ্যই খতিয়ে দেখব। দেশের স্বার্থরক্ষায় এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ন্যাটো জোটের ধারা-৫-এর আলোকে এই চুক্তিতে এক দেশের ওপর হামলাকে উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করে যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পরস্পরের সহায়তায় এগিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই চুক্তির পর পশ্চিমা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আনছেন, তা হলো—পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের ছাতার নিচে কি থাকবে পাকিস্তান? পাকিস্তান সৌদিকে এমন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে কি নাÑপশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘এটি ব্যাপকভিত্তিক একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, যাতে সব ধরনের সামরিক উপায়ের কথা বলা হয়েছে।’
সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরাও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। সৌদি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের এ ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে অনেকেই ধারণা করছেন, চুক্তিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার-সংক্রান্ত ধারাও হয়তো চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, পাকিস্তান তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে। নিজের প্রয়োজনেই এটা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করবে, অন্য দেশকে রক্ষা করার জন্য এই অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার কোনো এখতিয়ার পাকিস্তানের নেই।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও তাদের উদ্বেগের বিষয়টি গোপন নেই। দেশটির বিভিন্ন থিংকট্যাংক ও বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। স্টিমসন সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি পাকিস্তানি সংবাদপত্র দ্য ডনকে বলেছেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের শত্রু নয় যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু তারা এই চুক্তিকে উদ্বেগের সঙ্গেই দেখছে।’
ক্রিস্টোফার ক্ল্যারির মতে, প্রতিরক্ষা চুক্তি যেকোনো দেশের মধ্যে হতে পারে, কিন্তু পরমাণু অস্ত্র দিয়ে অন্য দেশকে সহযোগিতা করার বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করাটা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এটি তাত্ত্বিকভাবে বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ করাটা খুবই কঠিন।
আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর : মোতালেব জামালী
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ করেই স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের বিমান হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি প্রমাণ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও নিরাপত্তা গ্যারান্টির ওপর আর কোনো ভরসা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এসব দেশের আস্থা পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) গত বুধবার রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রয়্যাল কোর্টে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করেন। কাতারের রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়।
সৌদি আরবের দিক থেকে এই চুক্তির টার্গেট কী? কোনো বিশেষ দেশকে টার্গেট করে স্বাক্ষরিত হয়েছে? এই টার্গেট কি ইরান, ইসরাইল নাকি অন্য কোনো দেশ—তা এখনো স্পষ্ট নয়। আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার করাও সৌদি আরবের টার্গেট হতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তাদের মতে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তির নানামুখী বিশ্লেষণ সামনে আসছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের চেয়েও অনেক ওপরে উঠে গেছে। তবে সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো বিশেষ দেশ বা ঘটনা কেন্দ্র করে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। বরং কয়েক বছর ধরে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, এর ধারাবাহিকতাতেই এই চুক্তিটি হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি হঠাৎ করেই স্বাক্ষরিত হলেও দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্বের এই সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরই দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
চুক্তি স্বাক্ষর দেওয়া যৌথবিবৃতিতেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই দেশের ‘অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থরক্ষা এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে দুই সামরিক বাহিনীর সময়ের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও বাদশাহ ফয়সালের সময়। সে সময় সৌদি রাজকীয় বিমানবাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিল পাকিস্তান। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্কের সূচনা হয়। এরপর থেকে দুই দেশের এই সম্পর্ক খুব দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৬৭ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সৌদি আরবের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান বিন আবদুল আজিজ। সৌদি প্রতিরক্ষা খাতে পাকিস্তানের অব্যাহত ভূমিকা রাখার প্রাতিষ্ঠানিক শুরুটাও হয় তখন থেকেই।
এরপর থেকে ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ এবং ১৯৭০-এর দশকের পুরো সময়ই শত শত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা সৌদি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষক, উপদেষ্টা ও প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে, সৌদি সেনা ও বিমানবাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা এবং সেনাসদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানে। মোটকথা, সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রয়েছে পাকিস্তানের।
এই চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ইতোমধ্যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে মে মাসে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। এরপরই দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পরে ১০ মে যুদ্ধবিরতি হয়। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কথার লড়াই অব্যাহত আছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারত সরকার সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর সম্পর্কে জানে। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এই চুক্তির প্রভাব অবশ্যই খতিয়ে দেখব। দেশের স্বার্থরক্ষায় এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ন্যাটো জোটের ধারা-৫-এর আলোকে এই চুক্তিতে এক দেশের ওপর হামলাকে উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করে যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পরস্পরের সহায়তায় এগিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই চুক্তির পর পশ্চিমা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আনছেন, তা হলো—পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের ছাতার নিচে কি থাকবে পাকিস্তান? পাকিস্তান সৌদিকে এমন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে কি নাÑপশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘এটি ব্যাপকভিত্তিক একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, যাতে সব ধরনের সামরিক উপায়ের কথা বলা হয়েছে।’
সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরাও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। সৌদি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের এ ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে অনেকেই ধারণা করছেন, চুক্তিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার-সংক্রান্ত ধারাও হয়তো চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, পাকিস্তান তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে। নিজের প্রয়োজনেই এটা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করবে, অন্য দেশকে রক্ষা করার জন্য এই অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার কোনো এখতিয়ার পাকিস্তানের নেই।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও তাদের উদ্বেগের বিষয়টি গোপন নেই। দেশটির বিভিন্ন থিংকট্যাংক ও বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। স্টিমসন সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি পাকিস্তানি সংবাদপত্র দ্য ডনকে বলেছেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের শত্রু নয় যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু তারা এই চুক্তিকে উদ্বেগের সঙ্গেই দেখছে।’
ক্রিস্টোফার ক্ল্যারির মতে, প্রতিরক্ষা চুক্তি যেকোনো দেশের মধ্যে হতে পারে, কিন্তু পরমাণু অস্ত্র দিয়ে অন্য দেশকে সহযোগিতা করার বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করাটা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এটি তাত্ত্বিকভাবে বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ করাটা খুবই কঠিন।
আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর : মোতালেব জামালী
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১৫ ঘণ্টা আগেযখন অনুন্নত দেশের যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিরা উন্নত দেশে স্থানান্তরিত হন, তখন এ ঘটনাকে ‘মেধা পাচার’ বা ‘ব্রেইন ড্রেন’ বলা হয়। নানা কারণে দেশ ত্যাগ করার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ক্ষেত্রে। অথচ জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ‘বিশ্ব জনসংখ্যার অবস্থা প্রতিবেদন-২০২৫’-এ বাংলাদেশকে বর্তমান
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের অনেক গুণ থাকলেও, যে গুণটির বড্ড অভাব, তা হলো আত্মপর্যালোচনার অভ্যাস। কিন্তু এর জন্য পুরোপুরি তাদের দায়ী করা চলে না। কারণ, তাদের কর্মকাণ্ডের যারা দর্শক-শ্রোতা তথা (সু)ফলভোগী, অর্থাৎ আমাদের মতো আমজনতা, আমরা তাদের কাজকে সেটা ভুল হোক, ভালো হোক হাততালি দিয়ে আর প্রশংসায় ভ
১৫ ঘণ্টা আগেভারতও এই নিয়মের বাইরে নয়। তাই আমি আবার সেই প্রশ্নে ফিরে যাই : আমরা কি মুসলিম, নাকি মুজরিম (অপরাধী)? কেন আমাদের প্রতিদিন আসামির মতো বাঁচতে হবে, যখন খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়? কেন আমাদের শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা মিডিয়া থেকে গায়েব করে ফেলা হয়, অথচ রাষ্ট্র স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’ উদযাপন করে?
১৫ ঘণ্টা আগে